তুমুল ঝগড়া। কথা কাটাকাটি। রীতিমত গরম কথাবার্তায় মোবাইলেই। মোবাইলেই রাজনাথ সিং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুমুল ঝগড়া। কাঁথি কাণ্ডের পর লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক যে তলানিতে গেল, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আরও এমনটাই জানা যাচ্ছে নবান্ন সূত্রে।
আরও পড়ুনঃ পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার পরেও লোকসভা ভোটে কম কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলায়
অমিত শাহের সভার পরেই কাঁথি কেন রণক্ষেত্র হয়ে উঠল? রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবারেই নবান্নে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে অমিত শাহের সভার পর বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। নবান্ন সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এর কাছে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
“লোকসভা ভোটের গননা শেষ হলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শেষ হয়ে যাবে”, ঠিক এই ভাষাতেই মঙ্গলবার কাঁথি স্টেশন সংলগ্ন মাঠের জনসভায় বক্তব্য রাখলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বাংলা একসময় দেশকে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু সেই সোনার বাংলা আজ কোথায় হারিয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন তোলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।
আরও পড়ুনঃ মমতার স্বরাষ্ট্র সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের এক রোহিঙ্গার
অমিত শাহ আরও বলেন, “সারা দেশের মানুষ এখন সোনার বাংলা দেখতে চাইছে। ২০১৯ সালের নির্বাচন বাংলার জন্য সোনার বাংলা তৈরির ভোট। কোনও রাজনৈতিক দলকে প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলার জনতার সঙ্গে আমরা মিলতে চাইলেও ওরা বাধা দিচ্ছে। কান খুলে শুনে রাখুন, যত বাধা দেবেন ততই বিজেপি কর্মীরা আরও বেশি করে মানুষের বাড়ি পৌঁছ যাবে। কেউ রুখতে পারবে না”।
আরও পড়ুনঃ ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্ট
এদিকে অমিত শাহের সভার পরই গোটা এলাকা জুড়ে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। বিজেপি কর্মী সমর্থকদের আসা বাসে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল কর্মীরা, এমনটাই অভিযোগ বিজেপির তরফ থেকে। ভেঙে দেওয়া হয় সেই বাসগুলি যেগুলি চেপে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা অমিত শাহের সভায় এসেছিল। অভিযোগ, পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিজেপি সমর্থকদের অনেক বাইক। ভবিষ্যতে বিজেপির কোন সভায় কেউ যাতে বাস না দেয় তার জন্যই এই পরিকল্পিত হামলা বলেই বিজেপির অভিযোগ।
আরও পড়ুনঃ নিয়ম মেনে ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে রাখা যায় রাতেও
বিজেপিরা একটি তৃণমূলের অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে, পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলের। তৃণমূল কর্মীদের মারধর করেছে বলেও অভিযোগ দলের তরফ থেকে। রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “কোনরকম ঝামেলা যাতে না হয় তার জন্য অমিত শাহের সভার এলাকায় কোন তৃণমূল পতাকাও লাগান হয়নি। তবু অশান্তি করতে ইচ্ছে করেই ঝামেলা করল বিজেপি। এর ফল তাদের ভুগতে হবে”।
আরও পড়ুনঃ জওহরলাল নেহেরুর গলায় মালা দিয়ে ৬০ বছর পরেও একঘরে ‘নেহেরুর বউ’
রাস্তায় বেশ কয়েকটি বাসে ভাঙচুর চালান হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বাসে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় অমিত শাহের সভাস্থল সংলগ্ন এলাকা। পরে, বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ঘটনায় দু তরফেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনার খবর নিতেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ আম দরবারে প্রকাশ্যে মহিলার ওড়না ধরে টান কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর
নবান্ন সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চান ঠিক কী হয়েছিল কাঁথিতে। তার উত্তরে এদিন ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আপনার লোক পার্টি অফিস ভেঙেছে, গাড়ি জ্বালিয়েছে, সভায় আপনাদের নেতারা মানুষকে প্ররোচনা দিচ্ছে। অশান্ত করে তোলা হচ্ছে বাংলাকে। এসব কি হচ্ছে?” জানা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দেন মমতা। রীতিমত ঝগড়ার সুরেই রাজনাথকে তোপ দাগেন মমতা। “রাজ্যে অশান্তির জন্য আপনার দল ও নেতারাই দায়ি”, কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ মাঠ দিল না রাজ্য, মোদীর সভা ও হেলিকপ্টারের জন্য ফসল ত্যাগ শিক্ষকের
“নিজের কর্মীদের সামলান”, রাজনাথকে রীতিমত হুমকি দেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে রাজনাথ সিংও মমতাকে তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দেন বলেই জানা গেছে। জড়িত তৃনমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মমতাকে বলেন রাজনাথ। মমতা পত্রপাঠ জানিয়ে দেন, এর পিছনে বিজেপিই দায়ী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মা দুর্গার সাক্ষাৎ অবতার, পোস্টার কংগ্রেসের
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকেই গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। এদের বিরুদ্ধে অশান্তি সৃষ্টি, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধন এর অভিযোগ আনা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজেপি। বুধবার রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। গোটা ঘটনা জানাতে রাজ্যপালের কাছেও যাবে বিজেপি।
অন্যদিকে রাজ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রতিবাদে আজ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে প্রতিবাদ জানাবে তৃণমূল কংগ্রেস। অমিত শাহের সভার জায়গায় ফের সভা করে বিজেপির মুখোশ খোলা নিয়েও আলোচনা চলছে তৃণমূলের অন্দরে। সব মিলিয়ে লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে অশান্তি ও রাজনৈতিক ঝামেলা।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
আরও পড়ুনঃ
জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস
কাঠফাটা রোদে পড়ুয়াদের অসুস্থ করে ছায়ায় বসে রেকর্ড গড়ার নেশা মন্ত্রীর
কালামের নামে ছাত্রদের তৈরি হালকা উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে নজির ভারতের
Exclusive কংগ্রেস ছেড়ে মমতার হাত ধরলেন মৌসম বেনজির নূর
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।