The News বাংলা, কলকাতা: নিউটাউনে আইনজীবী খুনের রহস্য পরিষ্কার হয়ে গেল। আইনজীবী রজত দে কে খুন করেছে তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা পালই। টানা গোয়েন্দা জেরার পর ভেঙে পরে খুনের কথা স্বীকার করেছে অনিন্দিতা। এমনটাই জানিয়েছে বিধাননগর পুলিশ। অনিন্দিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেবে পুলিশ।
গত শনিবার নিউটাউনের বিডি ব্লকে নিজের ফ্যাটে, গভীর রাতে উদ্ধার হয় বছর ৩৪-এর রজত দে-র মৃতদেহ। রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দের। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, রজত দে-র মৃত্যু হয়েছে গলায় কিছু পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ হওয়ার কারনেই। এই হত্যায় প্রথম থেকেই সন্দেহের তীর ছিল রজতের স্ত্রীর দিকেই।
আরও পড়ুনঃ নিউটাউনে আইনজীবী হত্যায় সন্দেহের তীর স্ত্রীর দিকেই
আরও পড়ুন: আইনজীবী খুনে পুলিশের হাতে আটক রজতের স্ত্রী অনিন্দিতা
রজতের স্ত্রী অনিন্দিতার প্রাথমিক বয়ান অনুযায়ী, ওইদিন গভীর রাতে বারান্দায় আলো জ্বলতে দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন চেয়ারে বসে রয়েছেন রজত। শরীর খারাপের আশঙ্কা করে তিনি স্বামীকে ডাকাডাকির পর গায়ে হাত দিতেই চেয়ার থেকে ঢলে পড়েন রজত। এই বয়ান মিথ্যে দাবি করে নিউ টাউন থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন রজতের বাবা।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই নড়েচড়ে বসে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। গলায় সরু তার জাতীয় কোনও জিনিস পেঁচিয়েই রজতের মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে কোন তার জাতীয় কিছুই পাওয়া যায় নি। অনিন্দিতা স্বীকার করেছেন ওটা মোবাইলের তার ছিল তাই প্রথমে গলার দাগ বোঝা যায় নি।
পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার নেপথ্যে অনিন্দিতার সঙ্গে তাঁর পরিচিত কেউ জড়িত আছে। রীতিমতো ছক কষে সংঘটিত হয়েছে এই হত্যাকাণ্ড। আর এই হত্যার পিছনে রজতের স্ত্রীর পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ আছে বলেই সন্দেহ পুলিশের। সেই ব্যক্তিকে সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টায় গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: ‘বেআইনি মদের টাকা যায় মমতার ভাইপো অভিষেকের বাড়িতে’ কৈলাশ বিজয়বর্গীয়
রহস্যজনক ভাবে মৃত আইনজীবী রজতকুমার দের ফ্ল্যাটে তদন্তে যায় বিধাননগর কমিশনারেটের ফরেনসিক দলও। ফ্ল্যাটের সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে তারা। দেহে বিষক্রিয়া ছিল কিনা তা জানতে মৃতের ভিসেরা পরীক্ষা করা হবে।
কয়েকটা বিষয় সন্দেহ বাড়িয়েছিল পুলিশের। ঘটনার আগেই বাড়ির পোষা কুকুর এবং দেড় বছরের সন্তানকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন অনিন্দিতা। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল পুলিশ। তবে কি খুন করার প্লান করেই এদের আগেই সরিয়ে দেয় সে। জেরায় সেটাও স্বীকার করেছে অনিন্দিতা।
আরও পড়ুন: রথযাত্রা উপলক্ষে বাংলায় মোদীর জনসভায় লোকসভার দামামা
ঘটনার রাতে এক সঙ্গে রেস্তরাঁয় খাওয়ার পর, কেন এক সঙ্গে বাড়ি ফেরেননি রজত আর অনিন্দিতা, ওই সময় রজতের সঙ্গে বাড়ি না ফিরে অনিন্দিতা কোথায় গিয়েছিলেন, তা এখনও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ওই দিন রাতে রজত-অনিন্দিতা ছাড়াও ওই ফ্লাটে আর কোন তৃতীয় ব্যক্তি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অনিন্দিতা প্রথমে বলেন হার্ট আট্যাক। পরে বলেন আত্মহত্যা। বারবার বয়ান বদলের জন্যই স্ত্রী অনিন্দিতাকেই সন্দেহের তালিকায় উপরে রেখেছিলেন তদন্তকারীরা। তবে অনিন্দিতা একাই কি মোবাইলের তার জড়িয়ে নিজের স্বামীকে হত্যা করেছে কিনা সেটাই দেখছে পুলিশ।
আইনজীবী রজত কুমার দে-র মৃত্যুর ঘটনায় স্ত্রী অনিন্দিতার ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলেই প্রথম থেকেই সন্দেহ করছিলেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, ঘটনার আগের দিন রাতে সন্তান ও পোষ্যকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ফোনে দীর্ঘক্ষণ এক চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে কথাও বলতেন। এখন সেই বন্ধুর খোঁজ করছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে মৃতের স্ত্রীর মোবাইল ফোনের কললিস্টও।
আরও পড়ুন: ‘সফল’ কৃষক মিছিলে শুরু ব্রিগেড ও লোকসভার প্রস্তুতি
অনেকগুলো দিক এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রজত খুনে খুনি কি একজনই অনিন্দিতা? না একাধিক? অনিন্দিতাকে সাহায্য করতে খুনি কি বাইরে থেকে এসেছিল? নাকি স্ত্রী অনিন্দিতা একাই এই খুনে জড়িত? অন্তত একটা ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত, যে বা যারাই খুন করতে সাহায্য করুক তার সঙ্গে রজতের স্ত্রী আনিন্দিতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
আরও পড়ুন: ধর্মান্তরিত না হলে খুনের হুমকি, মিশনারী স্কুলের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ
অনিন্দিতার সঙ্গে গত কয়েক মাস যাবত রজতের ঝগড়াঝাটির খবর কানে এসেছে পুলিশের। অনিন্দিতার ঘনিষ্ঠ এক চিকিত্সকের সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আরও একজনের সম্পর্কে, যাঁর সঙ্গে অনিন্দিতার নিয়মিত ফোনালাপ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে প্রায়ই গোলমাল হত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে। খুনি অনিন্দিতা একাই? না সঙ্গে আরও কেউ এখনও লুকিয়ে?