ভারতের নদী থেকে একফোঁটাও জল দেওয়া হবে না পাকিস্তানকে

701
ভারতের নদী থেকে আর একফোঁটাও জল দেওয়া হবে না পাকিস্তানকে/The News বাংলা
ভারতের নদী থেকে আর একফোঁটাও জল দেওয়া হবে না পাকিস্তানকে/The News বাংলা

প্রবাদে আছে, ‘হাতে না-মেরে ভাতে মারা’। তবে এবার পাকিস্তানকে জলে মারতে চলেছে ভারত সরকার। ভারতের কোন নদী থেকে আর একফোঁটাও জল দেওয়া হবে না পাকিস্তানকে, বৃহস্পতিবারই এই ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গড়করি। মোদী সরকারের একের পর এক কড়া সিদ্ধান্ত অব্যহত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

ভারতের সব নদীর জল আটকেই পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে চলেছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার মোদী মন্ত্রীসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতের পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর জল আর পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না।

কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গড়করি এদিন জানান, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাকিস্তানকে ভারতের নদীর জল আর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। সব নদীর গতিমুখ পাঞ্জাব ও কাশ্মীরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। যাতে আমাদের দেশের লোকজন বেশি জল পায়”।

নিতিন গড়করি আরও বলেন, কাশ্মীরে জল পৌঁছতে ইরাবতী নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাড়তি জল বিপাশা হয়ে পাঞ্জাবে যাবে। বাকিটা কাশ্মীরেই থাকবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জইশ ই মহম্মদ এর আত্মঘাতী বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতেই মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত। হামলায় ৪৯ আরপিএফ জওয়ান শহিদ হন।

সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতেই আছে। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক চুক্তি সই হয়েছিল। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার ছয়টি নদীর জলের যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ইন্দাস ওয়াটার্স ট্রিটি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের তত্‍‌কালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এই চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বদেশীয় তিনটি নদী বিপাশা, রবি ও শতদ্রুর নিয়ন্ত্রণ ভারতকে দেওয়া হয়েছিল। অন্য দিকে পশ্চিমের তিনটি নদী, সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং ঝিলমের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানকে দেওয়া হয়। উরি হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে চাপে ফেলার নানা কৌশল নেন। তখনই তিনি বলেছিলেন, রক্ত ও জল কখনও একসঙ্গে বইতে পারে না। সিন্ধু নদের জলের উপরেও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এবার কাজ শুরু করে দিল ভারত।

এতদিন ধরে ভারত যেভাবে চুক্তি অনুযায়ী মোট জলের মাত্র ২০ শতাংশ রেখে বাকিটা পাকিস্তানকে ছেড়ে দিত, এবার তা পুরোপুরি বন্ধ করল ভারত। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বারবার পাকিস্তান কথার খেলাপ করাতেই এই অবস্থান বলে ভারতের তরফে আগেও জানানো হয়েছিল।

সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষের বাড়িতে খাবার জলের সরবরাহ নেই। এবং ৭০ শতাংশ জলই দূষিত। তারা ভারতের নদীগুলির জলের উপরই নির্ভরশীল। এবার সেখানেও বিপদ বাড়াল ভারত সরকার।

বিশ্বের সংস্থাগুলো অনুমান করছে, বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহ থাকা সত্ত্বেও ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাপক জল সংকটে পড়বে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, এরই মধ্যে দেশটির মাথাপিছু জলের প্রাপ্যতা ১৯৯১ সাল থেকে এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। আর এরপর ভারত জল না দিলে চরম বিপদে চলেছে পাকিস্তান, এটাই বলাই যায়।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন