বিশেষ রিপোর্ট: গোটা বিশ্বে এমনকি ভারতবর্ষেও শুরু হয়েছে মি টু (#MeToo) আন্দোলন ঝড়। কর্মক্ষত্রে যৌনহেনস্থার একের পর এক অভিযোগ এবার প্রকাশ্যে আসছে। তবে, দুনিয়া কেঁপে গেলেও তার আঁচ পরে নি কলকাতার সংবাদমহলে। যেন কিছুই হয় নি ! তবে, একটু ভেতরে ঢুঁ মারলেই বোঝা যায়, আতঙ্কে কাঁপছে কলকাতার বেশ কিছু মিডিয়া হাউসের মাথারা।
ভারতে প্রথমবার #MeToo আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে আইনি পথে। অভিনেতা নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের ওশিয়ারা থানায় FIR করেছেন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। সোশ্যাল মিডিয়ার মি টু (#MeToo) স্লোগান আছড়ে পড়ছে বিজেপি মন্ত্রীসভাতেও।
যৌন হেনস্তার অভিযোগের এবার নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন সাংবাদিক ও ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরেরও। আর এবার কলকাতার বড় এক খবরের কাগজের সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন এক মহিলা সাংবাদিক।
সমস্ত পেশার মতোই সংবাদজগতেও এই ধরণের ঘটনা নতুন নয়। গোটা বিশ্বেই শিক্ষানবিশ ও নতুন আসা মহিলা সাংবাদিকদের যৌন হেনস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলেই অভিযোগ। তবে খুব কম মহিলাই সাহস করে কোন ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। কলকাতার বেশ কিছু মিডিয়ার ‘বস’দের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের তালিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। সেই সব ঘটনাই এবার #MeToo হয়ে আছড়ে পড়বে প্রকাশ্যে, আশঙ্কায় অনেকেই।
শুরুটা হয়েছিল, সফল সম্পাদক ও সাংবাদিক ও বর্তমানে ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে দিয়ে। অভিযোগ যাঁরা করেছেন, সাংবাদিক হিসেবে তাঁরাও বেশ পরিচিত মুখ। কলকাতাতেও বড় একটি খবরের কাগজের এক নামকরা সাংবাদিক এবার হ্যাশট্যাগ মি টুর সামনে। অভিযোগ সেই যৌন হেনস্থার। অপেক্ষায় আরও অনেকে এখন আশঙ্কার প্রহর গুনছেন।
হ্যাশট্যাগ মি টু (#MeeToo), সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের শুরুটা হয় মার্কিন মুলুকে। গত এক বছর ধরে মার্কিন মুলুকের সফল চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টেনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগের ঝড় বয়ে যাচ্ছে যা ‘#মি টু’ (#MeToo) নামে পরিচিত।
একের পর এক অভিনেত্রী ও অন্যান্য মহিলারা এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন, যেগুলো আদালতের বিচারাধীন। তারই রেশ ধরে ভারতেও শুরু হয়েছে এই ‘মি টু’ আন্দোলন।
সাংবাদিক আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ প্রথম এনেছিলেন সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। যদিও এক বছর আগে লেখা সেই প্রতিবেদনে তিনি আকবরের নাম করেন নি। কিন্তু সম্প্রতি এক ট্যুইটে তিনি পুরোনো ঘটনা মনে করিয়ে সরাসরি আকবরের নাম নেন।
তার পর থেকে একাধিক মহিলা সাংবাদিক আকবরকে নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে থাকেন। কীভাবে হোটেলের ঘরে ইন্টারভিউর নামে মহিলা সাংবাদিকদের আকবর ডেকে পাঠাতেন, মদ খাওয়াতেন, ঘনিষ্ঠভাবে কাছে বসতে বাধ্য করতেন, অশালীন আচরণ করতেন, মহিলা সাংবাদিকেরা তার বিবরণ দিয়েছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করা এক সাংবাদিক লিখেছেন তাঁকে হোটেলে ডাকার কাহিনি। ‘সম্পাদক মশাই’ তাঁকে জোর করে মদ খাওয়ালেন এবং জড়িয়ে ধরলেন। সেই মহিলা লিখেছেন, একটা সময় জোর করে আকবারকে ঠেলে দিয়ে, দরজা খুলে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন।
এই ঘটনাই কাঁপিয়ে দিয়েছে কলকাতার অনেক মাথাকেই। কলকাতার বড় বড় ৩/৪ টি খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলের মাথারা এখন আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। এই বুঝি সামনে এলো তাদের যৌন হেনস্থার কথা। কাজ পাইয়ে দেওয়া ও পরে প্রোমোশনের জন্য মহিলা কর্মীদের কু-প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু ওই মহিলা কর্মীদের মুখ খোলার অপেক্ষা।
কলকাতার অন্ততঃ ২ থেকে ৩ টি টিভি চ্যানেলের বড় মাথাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মহিলা সাংবাদিকদের। তাদের বিরুদ্ধে কাজ পাইয়ে দেওয়া, প্রমোশন পাইয়ে দেওয়া, কাজের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শারিরীক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রতিবাদ করলে নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলার অভিযোগও রয়েছে এক এডিটরের বিরুদ্ধে। যে কোনদিন সেটা #MeToo হয়ে আছড়ে পড়বে প্রকাশ্যে।
এখনও নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ এনেছেন কলকাতার এক বড় সংবাদপত্রের মাথার বিরুদ্ধে। অশ্লীল কথা বলা, নোংরা অঙ্গভঙ্গি করা ও যখন-তখন যেখানে খুশি ছোঁয়ার অভিযোগ রয়েছে। মোবাইলে প্রমাণও রয়েছে, সেটা যে কোনদিন #MeToo হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে আছড়ে পড়বে।
কলকাতার এক ওয়েব নিউজ পোর্টালের এডিটারের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনেক অভিযোগ। নোংরা ম্যাসেজ পাঠানো, কু প্রস্তাব দেওয়ার লিখিত প্রমান রয়েছে বলেই জানিয়েছেন কিছু মহিলা সাংবাদিক। শিক্ষানবিশ মহিলা সাংবাদিক নিয়োগ করে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। যে কোনদিন তা হ্যাশট্যাগ মি টু (#MeToo) হয়ে প্রকাশ্যে আসবে।
আসল সাংবাদিকরা সবসময় খবরে থাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু এই প্রথমবার, সংবাদ বা খবরে আসার অপেক্ষায় কাঁপছেন কলকাতার কিছু সাংবাদিক। হ্যাশট্যাগ মি টু (#MeToo) আতঙ্ক গ্রাস করেছে কলকাতার সংবাদ জগতকেও।