The News বাংলা, কলকাতা: মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার অনুমতি দিল না। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কার কোচবিহারে রথ যাত্রায় না বলে দেওয়া হল আদালতে। নরেন্দ্র মোদীর ‘রথ যাত্রা’র অনুমতি পেতে বিজেপির শেষ ভরসা এখন কলকাতা হাইকোর্ট। বলাই যায়, বিজেপির রথের দড়ি এখন কলকাতা হাইকোর্টের হাতে।
বিজেপির ‘রথ যাত্রা’ শুরু করার অনুমতি দিল না রাজ্য সরকার, জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টে। শুক্রবার ৭ তারিখ কোচবিহার থেকে বিজেপির ‘রথ যাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ শুরুর কথা। তবে সেই যাত্রা শুরু করতে পারবে কিনা তা জানা যাবে আজ বৃহস্পতিবার। রাজ্যকে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। রাজ্য সরকার না করে দেওয়ায় দুপুর ১২ টায় চূড়ান্ত রায় দেবে আদালত।
বিজেপির ‘রথযাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার। আবার ‘রথযাত্রা’ করা যাবে না এমনটাও প্রথমে জানানো হয়নি রাজ্যের তরফে। তাই ‘রথযাত্রা’র বিষয়ে রাজ্য প্রশাসন ‘নীরব’ এই অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য বিজেপি। বিজেপির তরফে প্রশাসনের নিরবতার অভিযোগে এবং এবিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা দায়ের করেন রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার।
গত শুক্রবারই বিজেপির তরফে জয়প্রকাশ মজুমদার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা দায়ের করেছেন। আজ বৃহস্পতিবারই শুনানি শেষে রথ যাত্রা নিয়ে রায় দেবার সম্ভাবনা আছে। কারন আগামীকালই রথ যাত্রা শুরুর সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে বিজেপি।
মামলা দায়ের করার পরে জয়প্রকাশ বলেন, ‘গত ২৯ অক্টোবর থেকে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। অথচ প্রশাসন কিছু করছে না। বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন। আমাদের আশঙ্কা, রাজ্য প্রশাসন শেষ মুহূর্তে কর্মসূচি নাকচ করে দিতে পারে। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি’। আর ঠিক সেটাই হল। শেষ মুহূর্তে বিজেপির ‘রথযাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র অনুমতি দিল না মমতা সরকার।
কদিন আগে নেতাজি ইন্ডোরে দলের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘ওরা রথ করুক, আপনারা ইগনোর করুন। পাত্তা দেবেন না। পাত্তা দিলে পাত্তা পেয়ে যাবে। কেউ কোথাও কোনও গণ্ডগোলে জড়াবেন না। প্রশাসন তার কাজ করবে।’ কিন্তু তারপরেও মমতা সরকার এই ‘রথ যাত্রা’র অনুমতি দিল না।
মামলার শুনানিতে বিজেপির আইনজীবী সপ্তাংশু বসু ও অনিন্দ্য মিত্র জানান, ‘আসন্ন বিজেপির ‘রথ যাত্রা’ অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’য় প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীরা আসছেন। তার সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসন এখনও কেন নিশ্চুপ? তারা সম্মতিও জানাচ্ছে না আবার অসম্মতিও জানাচ্ছে না’।
তাঁরা আদালতে আরও জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও জানাচ্ছে না সরকার। এর আগেও একাধিকবার রাজ্য প্রশাসন এই কাজ করেছে’।
শুক্রবার ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে বিজেপির প্রথম রথ। দ্বিতীয় রথটি কাকদ্বীপ থেকে যাত্রা শুরু করবে ৯ তারিখ। তৃতীয় রথের যাত্রা তারাপীঠ থেকে শুরু হওয়ার ১৪ ডিসেম্বর। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তিনটি রথের উদ্বোধনেই হাজির থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
শুধু তাই নয় ‘রথযাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ চলাকালীন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি জনসভা করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরেও রাজ্য সরকার অনুমতি পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে কোন কথা জানায় নি বলেই আদালতে জানিয়েছে বিজেপি।
এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘রথযাত্রায় অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রথমে ডিজি তারপর আইজিকে জানানো হয়। তারপরও কেন অনুমতি দেওয়া হয়নি? রথযাত্রার অনুমতি নিয়ে স্বয়ং রাজ্যপালও প্রশাসনের কাছে জানতে চান। তাঁকেও কিছু জানানো হয়নি’।
উত্তরে এজি বলেন, ‘ওরা ডিজি, আইজির কাছে অনুমতি চায়, তারা যথাযত কর্তৃপক্ষ নন যে অনুমতি দেবেন। আর রাজ্যপালের সাংবিধানিক অধিকার নেই যে এবিষয় হস্তক্ষেপ করবেন’।
এজির উত্তর শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। মন্তব্য করেন, ‘ডিজি, আইজি সেকথা জানাতে পারতেন যে কোথায় অনুমতি নিতে হবে। এজির উদ্দেশ্যে বিচারপতির আরও মন্তব্য, ‘দুঃখিত এজি ! বিচারপতিরা কোন মাসিহা (দেবদূত) নন, যে প্রতিটা রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কোর্টে করবেন’।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলই তো মিছিল করবে, বারবার আদালত কেন সব রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করবে ? এই সব সমস্যা সমাধানের কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকার। আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান করুন’।
বিচারপতির এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে কিশোরবাবু জানান, ‘আমরা জানি না কত মানুষ আসবেন এখানে? বিজেপির কোন কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন? তিনি কী ক্যাটেগরি নিরাপত্তা পান? সব জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে বসতে হবে’। শেষ পর্যন্ত কোচবিহারের পুলিশ সুপার এই যাত্রা নাকচ করে দিয়েছেন বলে আদালতে বৃহস্পতিবার শুরুতেই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। বেলা ১২ টায় রায় শোনাবেন বিচারপতি।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী কি রায় দেন সেটাই এখন দেখার। আদালত বিজেপিকে এই যাত্রার অনুমতি দিলে মুখ পুড়বে মমতার রাজ্য সরকারের। আর আদালত এই যাত্রার অনুমতি না দিলে বিজেপির এত বড় প্রস্তুতির কি হবে সেটাও প্রশ্ন। সব নজর এখন কলকাতা হাইকোর্টের দিকে।