The News বাংলা, কলকাতাঃ তৃণমূল নেতা শোভন চ্যাটার্জীর সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের রসায়ন নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বৈশাখীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে সংবাদের শিরোনামে রয়েছেন মেয়র শোভন। যার জেরে একদিকে যেমন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সাথে বিবাদ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল, তেমনি সেই সাংসারিক উত্তাপের আঁচ পৌঁছে গিয়েছিল প্রশাসনিক দপ্তর অবধি। শেষ পর্যন্ত সেই প্রেমের জয়ে বদনাম বিশ্ব সংসারে ‘অ-শোভন’।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কলকাতা পৌরসভার আনাচে কানাচে বহুদিন ধরেই কানাঘুষো চলছিল। ইদানিং বহু সামাজিক অনুষ্ঠানেও মেয়র শোভন চ্যাটার্জীর সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে একসাথে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। তা নিয়েও বিদ্রুপ ও সমালোচনা কম হয়নি।
আরও পড়ুনঃ কয়েক দশকের সম্পর্ক শেষ করে শোভনকে তাড়ালেন মমতা
এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন দপ্তরের কাজে শোভনের খামখেয়ালিপনা শুরু হয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনকে বহু আগেই সাংসারিক ঝামেলা মিটিয়ে নিতে বলেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশে বিন্দুমাত্র লাভ হয়নি। বরং মেয়র যথারীতি চলছিলেন তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতেই। ‘বৈশাখীই আমার সব’, সাংবাদিক সম্মেলনে বলে দিয়েছেন অবলীলায়।
এদিকে দিনের পর দিন মেয়রের কাজের প্রতি অমনোযোগ বেড়েই চলছিলো। তা প্রত্যক্ষ করেই মাসখানেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী পুনরায় তিন দপ্তরের মন্ত্রী ও মেয়রকে বিদ্রুপের ছলে রসিকতা করে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি কি বিভিন্ন দপ্তরের কাজ গুলো ঠিকঠাক করছেন, নাকি শুধু প্রেমই করছেন!
আরও পড়ুন: মমতার নির্দেশে মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা শোভন চ্যাটার্জীর
যদিও যাবতীয় সমালোচনাকে উপেক্ষা করে মেয়র বরাবর অটল থেকেছেন নিজের সিদ্ধান্তেই। কাজে অনীহা দেখে মুখ্যমন্ত্রী আরও ক্ষুব্ধ হন। তার জেরে মেয়রের সাথে কথা কাটাকাটিও হয় মুখ্যমন্ত্রীর। আর তার জেরেই মঙ্গলবার চরম সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চ্যাটার্জী।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল বিধানসভায়। বিধানসভায় আবাসন দপ্তরের প্রশ্নত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন শোভন এবং মমতা দুজনেই। সেখানেই একজন বাম বিধায়কের প্রশ্নের ভুল উত্তর দেন শোভন। আর তাতেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আবাসন মন্ত্রী শোভন চ্যাটার্জীকে পরিসংখ্যানগত ত্রুটি ধরিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: ঘাসফুল ছেঁটে মমতার ‘কাননে’ কি এবার পদ্ম
অধিবেশন শেষে স্পীকারের ঘরে শোভন চ্যাটার্জীর সাথে মুখ্যমন্ত্রীর কথপোকথনে, শোভনের কাজ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মমতা। কাজ ফেলে রেখে শাড়ি চুড়ির দোকানে ঘুরছেন মেয়র, এই বলে ব্যঙ্গ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আর তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। ইঙ্গিত যে তাঁর বান্ধবীর দিকে, তা বুঝেই চরম অপমানিত বোধ করেন শোভন। আর দেরি না করেই অনতিবিলম্বে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করেন দমকল এবং আবাসন মন্ত্রীর পদ থেকে। প্রেমের বদনাম মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি ‘প্রেমিক’ শোভন।
আরও পড়ুন: যেখানে সেখানে থুতু-পিক ফেলা বন্ধ করতে কড়া মমতা
মুখ্যমন্ত্রী এর আগে শোভনকে জানান, তাঁর কাছে সব খবর ও ছবি আছে। শোভন বুঝতে পারেন তাঁর ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। আর এতে আরেকবার অপমানিত বোধ করেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁকে অবিশ্বাস করা হচ্ছে, তাঁকে আর দরকার নেই বলে তাঁর ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। আর এভাবে কোনো নজরদারির মধ্যে তিনি কাজ করতে চান না।
শোভন এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর পক্ষে দিনের পর দিন অপমান সহ্য করে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। উল্লেখ্য, এর আগেও কয়েকবার শোভন তাঁর বিভিন্ন দপ্তরের কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি শুধরে যাবেন, এই আশায় মুখ্যমন্ত্রী তখন পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন নি। কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সচিবের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠানো মাত্রই সঙ্গে সঙ্গেই তা গৃহিত হয়। পদত্যাগ করতে বলা হয় মেয়রের পদ থেকেও।
আরও পড়ুন: ভারতবাসীকে নেতাজীর মৃত্যুদিন জানাল বাংলার পুরসভা
শোভন চ্যাটার্জী মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন। কংগ্রেস ছাড়ার পর যেদিন থেকে শোভন তৃণমূলে যোগ দেন, সেদিন থেকেই দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই কাজ করেছেন তিনি। আর মুখ্যমন্ত্রীর সাথেও শোভনের সম্পর্ক ছিলো দিদি ভাইয়ের মতোই। ছিলেন দিদির আদরের ‘কানন’।
কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বাকবিতন্ডা এবং অবশেষে সটান ইস্তফার জেরে জল গড়ালো অনেক দূর। বৈশাখীর প্রেমে বদনাম বিশ্ব সংসারে ‘অ-শোভন’। আর তাতে অনেকেই বলছেন, মেয়রের মতো পদমর্যাদা, মন্ত্রিত্ব, মুখ্যমন্ত্রী ও শোভনের দিদি ভাইয়ের সম্পর্ক, এতবছরের রাজনৈতিক জীবন, ভবিষ্যৎ এই সব কিছুকে উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত প্রেমেরই জয় হল।