বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর; ১২৯তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১৯ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯০ সালের ১ জুন); তিনি দেহত্যাগ করেন। তাঁর আবির্ভাবের মতো এই দিনটিকেও; অত্যন্ত ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন ভক্তরা। বাবা লোকনাথ সম্পর্কে; বেশ কিছু অবিশ্বাস্য গল্প প্রচারিত আছে।
বাবা লোকনাথ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমীতে; ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ আগস্ট (১৮ ভাদ্র, ১১৩৭ বঙ্গাব্দ)। উত্তর ২৪ পরগণার চৌরাশি চাকলা গ্রামে; একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাশের কচুয়া গ্রামে বাস করতেন; ভগবান গাঙ্গুলী নামে এক পন্ডিত।
এগার বছর বয়সেই গুরু ভগবান গাঙ্গুলীর কাছে; বন্ধু বেনীমাধব সহ সন্ন্যাস গ্রহণ ও গৃহত্যাগ লোকনাথের। হিমালয়ের পাদদেশে বিভিন্ন গুহায়; কঠিন সাধনায় অতিবাহিত করেন প্রায় ৪০ বছর। হিমালয়ে থাকাকালীন প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে; কঠিন তপস্যার মাধ্যমে লাভ করেন পরম সত্য।
গুরু ভগবান গাঙ্গুলী দেহত্যাগের আগে; দুই শিষ্যকে নিয়ে আসেন ভারতের শ্রেষ্ট মহাযোগী তৈলঙ্গ স্বামীর কাছে। লোকনাথ ও বেণীমাধব প্রায় ২০ বছর কাটান; তৈলঙ্গ স্বামীর সঙ্গে তাঁর আশ্রমে। দুই বন্ধু পৃথিবীর অনেক দেশ; ভ্রমণ করেন পায়ে হেঁটে। তৈলঙ্গ স্বামীর নির্দেশে; বেনীমাধবকে সঙ্গে নিয়ে বাবা লোকনাথ চলে যান তিব্বতও।
তিব্বত থেকে অরুনাচল; অরুনাচল থেকে আসাম। আসামেই থেকে যান বেনীমাধব। লোকনাথ বাবা চলে আসেন চন্দ্রনাথ পাহাড় (সীতাকুন্ডু), চট্টগ্রামে। সীতাকুন্ডু থেকে বাবা লোকনাথ; চলে আসেন দাউদকান্দি। এখানেই পরিচয় হয় বারদী নিবাসী; ডেঙ্গু কর্মকারের সাথে। তিনি জোর করে বাবাকে নিয়ে আসেন বারদী।
মহাপ্রয়াণের কয়েকদিন আগে ভক্তদের কাছে প্রশ্ন করে বসেন; “বল দেখি, দেহ পতন হলে কিরূপ সৎকার হওয়া ভাল?”। এবং ভক্তদের অগ্নি দ্বারা দগ্ধ করার নির্দেশ দান করেন। এরপর বাবা লোকনাথ; দেহত্যাগ করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
সেবার ১৯শে জ্যৈষ্ঠ ছিল রবিবার, সকাল হতে হাজার ভক্তের সমাগম হয় বারদীর আশ্রমে। সকল ভক্তদের খাবার গ্রহনের নির্দেশ দিয়ে তিনি আসন গ্রহন করেন। সময় সকাল ১১.৪৫। বেশ কিছুক্ষণ পর বাবার আর কোন নাড়াচড়া না দেখে ভক্তগণ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বোঝার আর বাকি থাকে না; বারদীর প্রাণপুরুষ আর নেই। শোকের ছায়া; নেমে আসে বারদী আশ্রমে। সমবেত কন্ঠে তখন উচ্চারিত হয়; জয় বাবা লোকনাথ; জয় বারদীর ব্রহ্মচারী।