বিপদে মনে পরল মোদীর ভারতকে, জন্ম থেকেই বন্ধু পাকিস্তান

483
India Ukrain
বিশ্বের দরবারে প্রতিটা ক্ষেত্রে ভারতের বিরোধীতা করেছে ইউক্রেন

‘বিপদে না পড়লে মানুষ আসল বন্ধু চিনতে পারে না’; পুরোনো প্রবাদ আজও সত্যি হল। ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটল; বিপদে মনে পরল মোদীর ভারতকে, আর জন্ম থেকেই বন্ধু পাকিস্তান। অর্ধেক দেশ রাশিয়া দখল করে নেবার পরে হল চৈতন্য; মনে পড়ল ‘শান্তি দূত’ ভারতকে। আর তার আগে পর্যন্ত? ভারত-ইউক্রেন ইতিহাস খুব সুখের নয়।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে তৈরি হয় ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র; জন্ম নেয় স্বাধীন রাষ্ট্র ইউক্রেন। তারপরেই শুরু হয় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বিরোধীতা; রাশিয়ার বন্ধু ভারতের বরাবর বিরোধীতাই করে এসেছে পূর্ব ইউরোপের এই ছোট্ট দেশটি। অনেকটা অকারণেই।

সালটা ১৯৯৮; কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার। পোখরানে ১১মে তিনটি ও ১৩মে দুটি; মোট পাঁচটি পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত। জাতিসংঘ-র নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের বাইরে; বিদেশী সাহায্য ছাড়া কোন দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা করল। ক্ষেপে উঠল বিশ্ব; ভারতের বিরুদ্ধে নেমে এল অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ।

সেদিন বিশ্বের একটি ছোট্ট দেশ সবচেয়ে বেশি হইচই করেছিল; ঘটনাচক্রে সেই দেশটার নাম ছিল ইউক্রেন। UN Resolution 1172 এ ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাবে সই করেছিল তারা; চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাকি ২৫টা দেশের সঙ্গে। ভারতকে সমস্ত ধরনের প্রতিরক্ষামূলক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছিল। বন্ধ করে দিয়েছিল সমস্ত রকমের অস্ত্র বিক্রি; সব রকমের প্রযুক্তিমূলক সাহায্যও। ভারতের সঙ্গে সবরকমের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

এখানেই শেষ নয়। এরপর বিশ্বের দরবারে প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে; ভারতের বিরোধীতা করেছে দেশটি। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে; জাতি সংঘকে হস্তক্ষেপ করাতে উদ্যোগ নিয়েছে এই ইউক্রেন। যেখানে ভারত এই দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে কাউকেই ঢুকতে দিতে কোনদিনই রাজি নয়। কাশ্মীর ও ভারতে সন্ত্রাসবাদের মূল স্পনসরার পাকিস্তানকে; অস্ত্র-গোলা বারুদ দিয়ে সাহায্য করেছে এই ইউক্রেন। ভারত সহ গোটা বিশ্বের বিরোধীতা করে পাকিস্তানকে বিক্রি করেছে; T 80 মডেলের অত্যাধুনিক যুদ্ধের ট্যাঙ্ক।

অথচ ইউক্রেনের চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের চুল্লিতে বিস্ফোরণের ফলে; মারাত্মক তেজস্ক্রিয় উপাদান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ মারা যান; পঙ্গু হয়ে যান। প্রতিবেশী বেলারুশ ও রুশ প্রজাতন্ত্র থেকে শুরু করে জার্মানি সহ পশ্চিম ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকায়; তেজস্ক্রিয়তার কুপ্রভাব ধরা পড়ে। পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ভারতই।

এখন সেই ইউক্রেন মহাভারত থেকে উক্তি নিয়ে ভারতের দরবারে ভিক্ষা চাইছে; রাশিয়ার আক্রমণের মুখে দিশেহারা হয়ে সাহায্য চাইল ভারতের। কি বলল তারা? “এই মুহূর্তে ভারতের সমর্থনের জন্য অনুরোধ করছি আমরা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ওপর সর্বগ্রাসী আক্রমণ হলে; ভারতের উচিত তার সর্বজনীন দায়িত্ব নেওয়া। মোদীজি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী এবং শ্রদ্ধেয় নেতা। মোদীজিকে নিয়ে আমরা আশাবাদী; তাঁর দৃঢ় কণ্ঠ শুনলে হয়ত পুতিন একবার ভেবে দেখতে পারেন। আমরা ভারত সরকারের থেকে আরও অনেক আনুকূল্যের মনোভাব দেখতে চাইছি”।

কি অদ্ভুত পরিবর্তন….!!
আসলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতো; পৃথিবীর আদর্শহীন দেশগুলিরও কোন স্থায়ী শত্রু বা স্থায়ী বন্ধু থাকে না। শুধু স্বার্থটাই স্থায়ী থাকে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই তাই ইউক্রেনকে এখন বন্ধু পাকিস্তানের সাহায্য নিতে বলেছে; কারণ ইমরানের দেশ জানে কি করে আত্মসমর্পণ করতে হয়…..

এডিটোরিয়াল লিখলেন; মানব গুহ

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন