শান্তনু সরস্বতী, The News বাংলা, কলকাতাঃ যে ম্যাচের ফলাফল হওয়া উচিত ছিল ৫-২, সেই সহজ ম্যাচ কঠিন করে ৩-২ গোলে জিতল ইস্টবেঙ্গল। রবিবার ডার্বি দেখতে বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসির কর্ণধার অজিত আইজ্যাক ও সুব্রত নাগ। সুব্রতবাবু কলকাতার মানুষ, ডার্বির উত্তাপ জানেন। কিন্তু একটা ডার্বি ঘিরে দর্শক সংখ্যা যে ৬৪,৮৩৪ এ পৌঁছে যায় তা নিজে চোখে দেখলেন কোয়েস কর্পের কর্ণধার অজিত আইজ্যাক। তাঁর সামনেই ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি শাপমোচন ৩৩ মাস পর।
আরও পড়ুনঃ ভক্তকে বিখ্যাত করে বিপদে ফেলে দিয়েছেন লিওনেল মেসি
ম্যাচে পিছিয়ে থেকেও যে এই ভাবে ম্যাচ জেতা যায় তা দেখিয়ে দিলেন রিয়েল মাদ্রিদ কাস্তিলোর প্রাক্তন প্রশিক্ষক অ্যালেসান্দ্রো মেনেন্ডেজ গার্সিয়া। ম্যাচের শুরুতেই লালডানমাউয়া রালতের গোলে এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। কপাল সঙ্গে ছিল না মিজো যুবকের। ম্যাচের বয়স তখন সবে মাত্র এক মিনিট। মোহন ডিফেন্সের ফাঁকফোকর দিয়ে তখন লাল হলুদের আক্রমণ।
আরও পড়ুন: সপ্তশৃঙ্গর পর সপ্ত আগ্নেয়গিরি, বিশ্বরেকর্ডের দোরগোড়ায় বাঙালি
কখনও খাইমে স্যান্টোস কোলাডো, কখনও আবার ডানমওইয়া বা জবি জাস্টিন। এর মধ্যেই প্রতি আক্রমণে মিশরীয় ফুটবলার ওমর হুসেইনের পাস থেকে আজাহারউদ্দিন মল্লিকের গোল। তবে এই গোলের পেছনে আজাহারউদ্দিনের যত না কৃতিত্ব, তার চেয়ে অনেক বেশি দায় ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক রক্ষিত ডাগরের। সঠিক সময়জ্ঞান আর পজিশনিংয়ের ভুলে মোহনবাগান এক গোলে এগিয়ে যায়।
ম্যাচের বয়স তখন ১৩ মিনিট। এর ঠিক চার মিনিট অর্থাৎ ১৭ মিনিটে জবি জাস্টিনের পাস থেকে দুজন মোহনবাগান ডিফেন্ডারকে কাঁধে নিয়ে, লালডানমাউয়ার গোল। দু দুটো অসাধারণ গোল করে তাই ম্যাচের নায়ক মিজো যুবক লালডানমাউয়া রালতে।
আরও পড়ুন: সৌরভের পর বিরাট ওষুধে স্লেজিং শেষ অস্ট্রেলিয়ার
রবিবার ইস্টবেঙ্গল প্রশিক্ষক যুবভারতীতে উপস্থিত দর্শকদের দেখিয়ে দিল, বিরিয়ানির মশলা না থাকলেও, মুখরোচক খাবার বানান যেতেই পারে। যার ফল, ৩৩ মাস পর শাপমোচন। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে জবি জাস্টিন যে গোলটি ছোট্ট জায়গার মধ্যে বাইসাইকেল কিকে করে গেল, ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেওয়ার তাগিদে, তা অনেক বছর ভুলবে না কলকাতার দর্শক। স্প্যানিশ কোচের হাতে পড়ে মাঠে সোনা ফলাচ্ছে কেরলের এই ফুটবলার। সবাই বেশ অবাক, এখনও ভারতীয় দলে জবি জাস্টিন ডাক পায়নি বলে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দাবি ‘কলা আর বউ’
দ্বিতীয়ার্ধে আরও তাগিদ নিয়ে খেলা উচিত ছিল লাল হলুদের, যা চোখে পড়েনি। এই লাল হলুদ, হয়ত সঠিক ফুটবলারের অভাবেই, এখনও কিন্তু প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে। আর যার ফসল লালডানমাউয়ার দ্বিতীয় গোল। তবে এর পরেও ইস্টবেঙ্গল আরও একটি গোল করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল, মোহনবাগান গোলরক্ষক শংকর রায় প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে জবির করমর্দন দূরত্বে নেওয়া শট বাঁচিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ ডন ব্র্যাডম্যানের ঠিক পরেই ‘রানমেশিন’ বিরাট কোহলি
এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল জয়লাভ করেছে ঠিকই কিন্তু একটা বিষয় গত কয়েকটা ম্যাচ থেকে নজরে পড়ছে। হঠাৎ খেলা থেকে হারিয়ে গিয়ে ডিফেন্স করতে নেমে আসছে দশজন ফুটবলার। এর প্রতিষেধক টিকা আগামী দিনে অবশ্যই দেবেন খোসে মোরিনহোর সহকারী, আশা করা যায়। নাহলে আবার ডিপান্ডা ডিকার মতো ম্যাচের শেষ লগ্নে গোল করে, দশজনের দল হয়েও, নাভিশ্বাস তুলে দেবে প্রতিপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ নেতাদের গুন্ডা পোষা না গুন্ডাদের নেতা হওয়া, প্রকাশ্যে বন্দুকবাজির কারন কি
আর ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা গোলরক্ষক। মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোলটির পেছনে ডিকার যতটা না কৃতিত্ব আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দোষ রক্ষিত ডাগরের। রক্ষিত কোন বল ফিস্ট করতে হবে এবং করলেও কতটা জোরে, আর কোন বলই বা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচাতে হবে তা এখনও জানে না। মন্দের ভাল বা হাতে আর কোনও মশলা নেই বলেই ওকে ছাড়া আর কাউকেই এই জায়গায় সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
পড়ুন ফুটবল নিয়ে হাড় হিম করা অদ্ভুত সত্য গল্পঃ
প্রথম পর্বঃ পৃথিবী এগোলেও তান্ত্রিকের কালো জাদু টোনায় ডুবে আফ্রিকা
আজ ব্র্যান্ডনের জায়গায় বাধ্য হয়ে সামাদ আলি মল্লিককে না নামিয়ে যদি সালামরঞ্জনকে নামিয়ে জনি অ্যাকোস্তাকে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হওয়ার পরামর্শ দিতেন কোচ, তাহলে মনে হয় ভাল করতেন। সামাদের অবদান বিপজ্জনক জায়গায় একটি ফ্রিকিক উপহার দেওয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নতুন ফুটবলার খাইমে স্যান্টোস কোলাডোর গতি আছে, টাচ আছে, কিন্তু শারীরিক সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এক টাচে যে ফুটবলটা ও খেলতে ভালবাসে, তা বোঝার জন্যও সমমানের ফুটবলার প্রয়োজন ইস্টবেঙ্গলে। যা এই মুহূর্তে নেই কোচ অ্যালেসান্দ্রোর হাতে। কড়া ডিফেন্স এড়িয়ে কীভাবে বল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তার পাঠ নিশ্চয়ই দেবেন ইস্টবেঙ্গল প্রশিক্ষক।
পড়ুন ফুটবল নিয়ে হাড় হিম করা অদ্ভুত সত্য গল্পঃ
দ্বিতীয় পর্বঃ পৃথিবী এগোলেও তান্ত্রিকের কালো জাদু টোনায় ডুবে আফ্রিকা
পরপর তিনটে ম্যাচে খারাপ ফল করার পর প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল মিডফিল্ডার ব্রাজিলিও তারকা ডগলাস ডি সিলভা কয়েকদিন আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিল, পরপর কয়েকটি ম্যাচ জিতলেই আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে ইস্টবেঙ্গল। আই লিগ জেতা এখনও সম্ভব। জেতার পর ঠিক একই কথা বলল ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে অ্যালভিটো ডি কুনহা। ‘আই লিগ লম্বা রেস। যখন তখন যা খুশি হতে পারে। আর একটা ম্যাচ জিতলেই আই লিগ টেবিলে দুনম্বর স্থানে পৌঁছে যাবে লাল হলুদ জার্সিধারীরা’। শুধু ডার্বি জেতার পর যেন নিজেদের জয়ের ধারা বজায় রাখে তারা।
পড়ুন ফুটবল নিয়ে হাড় হিম করা অদ্ভুত সত্য গল্পঃ
তৃতীয় ও শেষ পর্বঃ পৃথিবী এগোলেও তান্ত্রিকের কালো জাদু টোনায় ডুবে আফ্রিকা
চেন্নাই সিটি এফসি বা চার্চিল ব্রাদার্সের মতো দল খুব তাড়াতাড়ি পিকে পৌঁছে গেছে। ট্রেভর জেমস মর্গানের জমানায় ইস্টবেঙ্গল তিন তিনবার এমনভাবে সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়েও আই লিগ ঘরে তুলতে পারে নি। এনরিকে এস্কোয়দা জানুয়ারি মাসেই চলে আসবে চোট সারিয়ে। দলে যোগ দেবে টনি ডোভালের মতো ফুটবলার, যার বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নেমেও এএফসি কাপে হ্যাটট্রিক আছে। ভাল কিছু তাই আশা করতেই পারে ইস্টবেঙ্গল। জবি জাস্টিনের সঙ্গে ফর্মে ফেরা এনরিকে কিন্তু মশাল জ্বালাবে মাঠে।