ডিএ মামলায় হাইকোর্টে ফের মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের

471
ডিএ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ফের মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের/The News বাংলা
ডিএ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ফের মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের/The News বাংলা

ডিএ মামলায় ফের মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘভাতা নিয়ে ফের লজ্জাজনক ভাবে মুখ পুড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের। রাজ্যের রিভিউ পিটিশন বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর ফলে আগামী ১৩ মার্চ স্যাট মামলায় রায় দিতে কোন বাধা রইল না। আসল রায়ের আগেই ফের রাজ্য সরকারকে হারাল সরকারি কর্মীরা।

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্যের পুর্নবিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, কেন্দ্রের হারে কর্মীরা ডিএ পাবেন কি না তা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফের স্যাট এ মামলাটি পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ স্যাটে ডিএ মামলার শুনানি রয়েছে। সেই কারণে রাজ্যের পুনর্বিবচনার আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। ৩১শে আগস্ট হাইকোর্টের পূর্বের রায়ই বহাল রাখল আদালত ।

ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনসঙ্গত অধিকার। এই ভাতা রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য বলে আগেই পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘ডিএ ‌সরকারি কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। রোপা আইন অনুযায়ী একজন সরকারী কর্মচারী ডিএ পেয়ে থাকেন। এটা কোনও সরকারের দয়া নয়’।

বকেয়া ডিএ নিয়ে ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর স্যাটে মামলা করেন সরকারি কর্মীরা। গতবছর ফেব্রুয়ারিতে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়, মহার্ঘ ভাতা দয়ার দান। ডিএ দেওয়া বা না দেওয়া সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে সরকারের ওপর। আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গতবছর মার্চে হাইকোর্টে মামলা করে একাধিক কর্মী সংগঠন। দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানির শেষে ডিভিশন বেঞ্চ স্যাটের পূর্ববর্তী রায়কে খারিজ করে ফের স্যাটেই মামলা ফেরত পাঠায়।

পাশাপাশি বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ স্যাটের রায়ের সমালোচনা করে গাইডলাইন বেঁধে দেয় ট্রাইব্যুনালকে। ট্রাইব্যুনালকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে দ্রুত, সর্বাধিক ২ মাস সময় দেওয়া হল ট্রাইব্যুনালকে।

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কী হারে মহার্ঘভাতা দেওয়া হবে, তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকারের তরফে পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট খারিজ করে দিল রাজ্যের আবেদন। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, যে রায় দেওয়া হয়েছিল তা পুনর্বিবেচনার কোনও প্রশ্নই নেই। রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, ডিএ দয়ার দান। এটা কর্মচারীদের কোনও অধিকার নয়। আদালত জানিয়েছিল, ডিএ কোনও দয়ার দান নয়। এটা কর্মচারীদের আইনি অধিকার।

বকেয়া ডিএ দেওয়া এবং তার হার নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রুজু করেছিল কর্মচারী সংগঠনগুলি। ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে সেই মামলার রায় ঘোষণা করে মামলাটিকে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (স্যাট) পাঠিয়ে দেয় বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শেখর ববি সরাফের ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানে ডিএ কর্মচারীদের আইনি অধিকারের পাশাপাশি আদালত আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেছিল, এ রাজ্যের কর্মচারীরা দিল্লি বা চেন্নাইতে থাকা কর্মচারীদের হারে ডিএ পাবে না কেন?

এই প্রশ্ন নিয়েই স্যাট-এ মামলা চলাকালীনই রাজ্যের তরফে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং শেখর ববি শরাফের এজলাসে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি শেষ হয়। বৃহস্পতিবার রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে মামলাটিকে ফের স্যাটে পাঠিয়ে দেয় উচ্চ আদালত।

এ রাজ্যের বাইরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে সমস্ত দফতর আছে, সেখানকার কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের হারে মহার্ঘভাতা পান। স্যাটে মামলা চলাকালিনই রাজ্যের আবেদন জানানো হয়, কর্মচারী সংগঠন কোথাও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-এর দাবি জানায়নি। আদালত এই ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করুক।

সেই মামলার রায়ে আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখল হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা যে হারে মহার্ঘ ভাতা পাবেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদেরও সেই এক হারে মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে। এখন দেখার ডিএ মামলা নিয়ে শেষ পর্যন্ত আগামী ১৩ মার্চ কী রায় দেয় স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন