দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশক পরে, নেহরু-গান্ধি পরিবারের শাসনমুক্ত হতে চলেছে কংগ্রেস। সহসা কোনও বড় ধরণের বিপর্যয় না হলে, সনিয়া গাঁধির উত্তরসূরি হতে চলেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। আগামী রবিবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং বৈঠকে নতুন সভাপতি নির্বাচনের নির্ঘন্ট, নিয়মকানুন চূড়ান্ত হতে চলেছে। সনিয়া ও তাঁর পুত্র-কন্যা, নিউইয়র্ক থেকে ভার্চুয়ালি এই সভায় যোগ দেবেন। মেডিকেল পরীক্ষা করাতে, নিউইয়র্কে গিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
হিন্দি বলয়ে কংগ্রেসের অবশিষ্ট প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে, অশোক গেহলট অবশ্যই হেভিওয়েট, প্রশাসন ও সংগঠন দু’য়েতেই তিনি অভিজ্ঞ, ভাবমূর্তি স্বচ্ছ্ব, নরেন্দ্র মোদির মতো তিনিও ওবিসি সম্প্রদায়ভূক্ত। সর্বোপরি তিনি দশ নম্বর জনপথের বিশেষ অনুগত, বলা যায় পরিবারের রিটেইনার। ৭১ বছরের প্রবীণ এই নেতা সেদিক থেকে দেখলে, কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার যোগ্য প্রার্থী বটেই।
এই সেদিন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি থেকে ভাই-ভাতিজা-তন্ত্র নির্মূল করার দর্পিত আহ্বান জানিয়েছিলেন। অবশ্যই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, নেহরু-গান্ধি পরিবার। কংগ্রেসের নেতৃত্বে এমন অর্থবহ পরিবর্তনের পরে, সেই অস্ত্র কিঞ্চিৎ ভোঁতা হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে বিজেপি নেতৃত্বকে পরিবারবাদের কথা বলার সুযোগ দেবেননা বলেই, রাহুল গান্ধি নিজেকে সরিয়ে রাখার কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কংগ্রেসের সভাপতি হলে গেহলট আর রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেননা। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করবেন, কংগ্রেসের সম্ভাবনাময় যুবনেতা শচীন পাইলট। মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে অশোক বনাম শচীনের যে সম্মুখ সমর চলছিল, এই সুযোগে তাতেও যবনিকাপাত হবে। কংগ্রেসের কাছে সেটা স্বস্তিদায়ক ঘটনা।
গেহলট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতবেন না জি-টুয়েন্টি থ্রির বিক্ষুব্ধ শিবির তাদের কোনও প্রার্থী দেবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। দিলে সমানে-সমানে টক্কর হবে না, বরং বিক্ষুব্ধদের মুখেই চুনকালি পড়বে। পরিবারের প্রার্থীর বিরুদ্ধে, কংগ্রেসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অন্যনাম হারাকিরি। ২০০১ সালে জিতেন্দ্র প্রসাদ এবং তারও চার বছর আগে, শরদ পাওয়ার ও রাজেশ পাইলট তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।
সভাপতি বদল হওয়া মানে কংগ্রেস সংগঠনে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ফিরে আসবে, একথা মনে করার কোনও কারণ নেই কেননা দল থাকবে দশ নম্বর জনপথের ছায়াতেই। গেহলটও এমন কোনও কাজ করবেননা, যাতে মাই-বাপেরা ক্ষুব্ধ হন। তবু নেই মামার চেয়ে তো, কানা মামা ভাল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়।