The News বাংলা, কলকাতাঃ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কত? অভিযোগ, জানে না রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। যে মশাবাহিত অসুখে নিয়মিত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই রোগের বিষয়টা চেপে যাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ডেঙ্গুতে মৃত বা আক্রান্তের কোনও তথ্য এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি তারা।
সল্টলেকের সমীর মন্ডল, প্রিয়াঙ্কা জয়সওয়াল আরও অনেককে নিয়ে সাম্প্রতিককালে ডেঙ্গুতে মৃতের তালিকা দীর্ঘ থেকে ক্রমশই দীর্ঘতর হচ্ছে। চলতি বছরে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কত? আক্রান্ত কতজন? এই প্রশ্নের কোনও জবাব নেই রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের কাছে। ডেঙ্গু সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই কলকাতা পুরসভার কাছেও।
অথচ পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) ও বর্তমানে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের স্পষ্ট কথা,’শীতে মশা থাকবে না, কে বলল?’ কিন্তু ডেঙ্গুতে মৃত বা আক্রান্তের কোন তথ্য তাঁর কাছেও নেই। অথচ রাজ্যের চিকিৎসকরা বলছেন,’এই তথ্য লুকোতে গিয়ে কুষ্ঠ মহামারীর আকার ধারন করেছিল। এবারও যেন তাই না হ্য। সরকারের ভাবা দরকার।’
আরও পড়ুনঃ ভারতবাসীকে নেতাজীর মৃত্যুদিন জানাল বাংলার পুরসভা
এখনও অনেকেই এই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নতুন নতুন রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন নিয়মিত। অনেকে আবার বাড়িতেই চিকিৎসা করাচ্ছেন।
যাদবপুর এলাকায় সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও খবর। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে সারা বছর ‘অজানা জ্বরে’ রোগীর চিকিৎসা চলে। সেই ‘জ্বর’ অজানাই থেকে যায় বলেই অভিযোগ।
আরও পড়ুনঃ ‘পুলিশ হত্যা মামলা’তেও বাংলার পুলিশের মুখে চুনকালি
বিশিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন,’অজানা জ্বর বলাও লজ্জাজনক। মন্ত্রীও বলার জন্যে বলছেন। বরং ডেঙ্গু বললে সম্মান থাকে। শুধু ডেঙ্গু নয়, ম্যালেরিয়ায় প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিরোধক ব্যবস্থাও দুর্বল হচ্ছে ক্রমশ। এবছর ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত খবর। তবে তথ্য চাপা দেওয়ার এই লুকোচুরি বন্ধ হওয়া উচিত। কুষ্ঠ এই ভাবেই মহামারী হয়ে গিয়েছিল।’
কী করা উচিত এক্ষেত্রে? ডাক্তাররা বলছেন, ‘সন্দেহ হলেই এই ধরনের অসুখগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে রোগী সঠিক চিকিৎসা পাবেন। যদি দেখা যায় ওই অসুখটা হয়নি, তাহলে তো ভালই। কিন্তু অসুখ হলে প্রকৃত চিকিৎসা হবে। ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য চেপে যাওয়া কোনও সভ্য দেশে হওয়া উচিত নয়। উন্নত কোনও দেশে এমন হয় না। তথ্য চেপে যাওয়া মানে গুরুত্ব না দেওয়া। এটা ক্ষতিকর এবং অন্যায়ও। এর ফলে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’
ডেঙ্গু নিয়ে যখন চিকিৎসকরা এতটা চিন্তিত, তখন সরকারি স্তরে কোনও হেলদোল নেই কেন? ডেঙ্গুতে মৃত বা আক্রান্তের সংখ্যা কত? রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা(প্রশাসন) অজয় চক্রবর্তী বলেন,’ডেঙ্গু মৃত্যুর তথ্য এখনও চূড়ান্ত হয় নি।’ আদৌ কবে তা চূড়ান্ত হবে তা জানেন না স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও অধিকর্তাই।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: ‘বৈশাখী প্রেমে ব্যস্ত’ কলকাতা ছাড়ছেন এক সাচ্চা প্রেমিক
তবে এখনও পর্যন্ত বেসরকারি সুত্রে, এবছর রাজ্যে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৪০-৪৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, সরকারি স্তরে মৃতের সংখ্যা পাঁচজন, আক্রান্ত ৩ হাজার।
নির্মীয়মান আবাসন, মেট্রো প্রকল্পের কাজ, বিপজ্জনক বাড়ি সহ নানা জায়গাই এখন কলকাতায় মশার আঁতুড়ঘরে পরিনত হয়েছে। মশা নিধনে পুরউদ্যোগ যে নেই তা নয়, কিন্তু সার্বিক কাজ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের। যাদবপুরের বাসিন্দাদের দাবি, ‘মশার উৎপাতে এই শহরে থাকাই দায় হয়ে গিয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ স্বাধীনতার পর প্রথম মুসলিম মেয়র পেল মমতার কলকাতা
পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) ও বর্তমানে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের প্রশ্ন, মশা কেন থাকবে না? কিন্তু সদুত্তর দিতে পারেননি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা নিয়ে। মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্যর বিস্তারিত উক্তি,’সারা বছর মশা নিধন করে কলকাতা পুরসভা। শীতে মশা থাকবে না আপনাকে কে বলেছে?’
পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ আরও বলেন, ‘২৪-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে মশা থাকাই স্বাভাবিক।’ তবে, সরকারি আধিকারিকদের কাছে যেটা স্বাভাবিক সেটা সাধারণ মানুষের কাছে দিন দিন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে না তো? ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা কত? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।