ফাঁসি হওয়া জঙ্গি পুত্রের ভারতের সেরা ডাক্তার হবার স্বপ্ন

660
ফাঁসি হওয়া জঙ্গি পুত্রের ভারতের সেরা ডাক্তার হবার স্বপ্ন/The News বাংলা
ফাঁসি হওয়া জঙ্গি পুত্রের ভারতের সেরা ডাক্তার হবার স্বপ্ন/The News বাংলা

বাবা ছিল দেশদ্রোহী। ভারতের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্র করায় ফাঁসি হয়েছিল বাবার। ছেলেকেও বাবার মত বিপথে নিয়ে যাবার জন্য ভুল বোঝানোর লোকের অভাব ছিল না। কিন্তু স্বামীকে জঙ্গি দলে যোগ দেওয়া থেকে আটকাতে না পারলেও ছেলেকে সবরকমের ‘ব্রেনওয়াশ’ থেকে বাঁচিয়ে মানুষের মত মানুষ গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মা।

‘ইজম’ বা মতবাদ রক্তে প্রবাহিত হয় না। তেমনই সন্ত্রাসবাদও বংশপরম্পরা নয়। সমস্তটাই নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক ও পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর। এমনটাই প্রমাণ করল সংসদ হামলায় ফাঁসি হওয়া জঙ্গি আফজল গুরুর ছেলে গালিব। সেই আফজল গুরু। ২০০১ সালে ভারতের সংসদ হামলার মূল ষড়যন্ত্রী। ২০১৩ সালে যার ফাঁসির খবরে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। তার পর থেকেই অজানা আতঙ্কে সিঁটকে থাকে জঙ্গি আফজলের বাড়ির লোক।

আরও পড়ুনঃ মোদীর নয়া প্রকল্পে দিল্লি থেকে মুম্বাই সড়কপথে মাত্র ১২ ঘন্টায়

মায়ের কড়া নজরে স্বাভাবিক জীবনযাপনই করছে আফজল গুরুর ছেলে গালিব। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে। ইতিমধ্যেই সে পেয়েছে ভারতের আধার কার্ড। আধার কার্ড হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত বছর ১৮-র ওই পড়ুয়া। বলেছে, ‘এবার পাসপোর্ট হাতে পেলেই আমি বাইরে গিয়েও পড়াশোনা করতে পারব’। যদিও বাবাকে ফাঁসি দেওয়া ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এখনও ক্ষোভ রয়েছে তার।

কিন্তু বন্দুক নয় ভবিষ্যতে জীবনের লড়াই লড়তে কলমকেই হাতিয়ার করেছে গালিব। তবে অতীত যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তার। তবে এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন সে। ভবিষ্যতে নিজেকে একজন সফল চিকিৎসক হিসেবে দেখতে চায় গালিব। মে মাসেই ‘NEET’ বা মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসছে সে। পাশ করে দেশের প্রথমসারির মেডিক্যাল কলেজে জায়গা পেতে বদ্ধপরিকর জঙ্গি আফজল গুরুর ছেলে গালিব।

আরও পড়ুনঃ টিভি চ্যানেল দেখা নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে কেবল অপারেটররা

গালিব জানিয়েছে, NEET-এ মনমত কলেজ না পেলে তুরস্কে ডাক্তারি পড়তে যাওয়ার কথা ভাবছে সে। সেখানে বৃত্তি পেলে তাঁর পড়াশোনার আর কোনও সমস্যা থাকবে না। সেনাবাহিনী নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গালিব জানায়, কোনওদিনও সেনা তাঁদের উপর কোনও অত্যাচার করেনি। উলটে যখনই কোনও জওয়ানের সঙ্গে কথা হয়েছে, পড়াশোনার বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহ পেয়েছে সে। তবে প্রশাসনের বিরুদ্ধে এখনও ক্ষোভ রয়েছে তার। তবে সেই ক্ষোভকে যাতে কেউ কাজে লাগাতে না পারে তার জন্য সদা জাগ্রত মা তবাসুম।

বাবা জঙ্গি। দেশের পার্লামেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনার মূল অভিযুক্ত আফজল গুরু। এই ঘটনায় ফাঁসিও হয় তার। বাবার পরিচয় ভাল করে জেনেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে উৎসাহ দিয়েছেন ভারতের জওয়ানরা। বাবার ফাঁসির পর কাশ্মীরের গুলশনাবাদে দাদু-দিদার সঙ্গে মাকে নিয়ে থাকে গালিব। দাদু গুলাম মহম্মদ ও মা তবাসুম তাঁকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছেন।

আরও পড়ুনঃ মরে গিয়েও তৃণমূল বিজেপির হাত থেকে রেহাই পেলেন না বড়মা

গালিব জানান, অতীতের ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়। একসময় নিজে ডাক্তার হতে চেয়েছিল তাঁর বাবা আফজল গুরু। তবে পরিস্থিতির চাপে তা আর হয়ে উঠেনি। হয়ে যায় জঙ্গি। দেশদ্রোহী। ফলে বাবার অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করতে চায় গালিব। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে গালিব জানায়, তাঁকে কোনওদিন বিপথে যেতে দেয়নি তাঁর মা। সবসময় অতীতের আঁচ থেকে তাঁকে আলাদা করে রেখেছেন তবাসুম গুরু।

পাক মদতপুষ্ট জেহাদি সংগঠনগুলি যুবকদের মগজধোলাই করলেও নিজের ছেলেকে বিপথে যেতে দেননি তিনি। তাই আজ সন্ত্রাস নয় শিক্ষাকেই বেছে নিয়েছে গালিব। নিজেকে একজন গর্বিত ভারতীয় হিসেবেই ভাবে সে। ভারতীয় পাসপোর্ট হাতে পেলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে পারবেন বলেও আশা রয়েছে আফজল পুত্রের মনে। সব মিলিয়ে অতীতের বিভীষিকা কাটিয়ে আজ যুবপ্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গালিব।

আরও পড়ুনঃ ভারতীয় ক্রিকেটারদের মাথায় ভারতীয় সেনার টুপি

২০১৮ তে জম্মু-কাশ্মীর বোর্ড এর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল গালিব আফজল গুরু। ৫০০-র মধ্যে ৪৪১। এর আগে ২০১৬ সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করে সকলের নজর কাড়ে গালিব। সে বার ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যে ১৯তম স্থান অধিকার করেছিল সে।

তবে লড়াইটা কিন্তু একেবারেই সহজ ছিল না। কারণ গালিবের প্রথম পরিচয় যে ‘জঙ্গির ছেলে’। আর এই পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকাটাই তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ছিল। সবটাই একা সামলেছেন মা তবাসুম। যার একসময় পরিচয়ই হয়ে গিয়েছিল ‘জঙ্গির বউ’। ‘জঙ্গির বউ’ তকমা ঝেড়ে ‘ডাক্তারের মা’ হতে একা লড়ছেন তবাসুম গুরু।

আরও পড়ুনঃ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হল মোদীর ১০০ কোটির বাংলো

আজ ছেলের সাফল্যে উজ্জ্বল মা তবাসুমের মুখ। বেসরকারি একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করেন তিনি। স্বামীর স্মৃতি আঁকড়েই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। গরবিনী মা জানালেন, ‘‘এখনও অনেক কিছু করা বাকি। এই তো সবে শুরু’’। ছেলের কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘‘গালিবের বাবা আজ বেঁচে থাকলে ওঁর খুশিটা শুধু দেখতেন। তবে গালিব ওর লক্ষ্যে অবিচল। আর আমি জানি, ও সফল হবেই’’।

আরও পড়ুনঃবৈশাখীর হাত ধরে বিজেপিতে শোভন, জল্পনা তুঙ্গে

বাবার ফাঁসির পর তাকেও সন্ত্রাসবাদে যোগ দেওয়ার জন্যে অনেকবার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু গালিব জানাল মা শক্ত হাতে সবটা সামলেছেন। পঞ্চম শ্রেণী থেকেই তাঁকে দূরে রেখেছেন সবরকম হিংসার থেকে। তাই আজ তার জীবনে মার থেকে বেশি গুরুত্ব আর কারও নেই। গালিব জানাল, বাবা নিজে ডাক্তার হতে চেয়েও সফল হননি। তাঁরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তাই বাবার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকেই সে এখন পূরণ করতে চায়।

আরও পড়ুনঃ দেশ বা সরকারের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেই জেল
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনায় দারিদ্র্যের পরিমান কমবে ২০ শতাংশ
আরও পড়ুনঃ রাফায়েল যুদ্ধবিমান সংক্রান্ত সব নথি চুরি হয়ে গিয়েছে

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন