সুবিচার ও কর্মসংস্থান এর দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে পৌঁছে গিয়েছিল রাজ্যের চার জেলার চার অ্যাসিড আক্রান্ত যুবক যুবতী। এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের অ্যাসিড আক্রান্তরা।
সুবিচার, কর্মসংস্থান ও বিনামূল্যে চিকিৎসার দাবিতে বারুইপুরের মনীষা পৈলান, দমদমের সঞ্চয়িতা যাদব, মেদিনীপুরের সুতপা দাস ও সাগরদ্বীপের সূর্যশঙ্কর বারিক সোজা হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাড়িতে। দেখা হয়নি আজ। তবে মিলেছে দেখা করার আশ্বাস।
অ্যাসিড হামলার পর থেকে এই চার যুবক যুবতী দীর্ঘদিন লড়ে আসছে নিজ নিজ জায়গায়। এই লড়াই দীর্ঘদিনের, এই লড়াই শরীরের সাথে মনেরও। আর এই লড়াইয়ের হয়ত কোন শেষ নেই। চলবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। কিন্তু তাতে তাদের মনের জোর কোন অংশে কমে নি। লড়তে লড়তে ওরা বুঝে গেছে কোন পথে এগোলে সুবিচার পাবে ওদের শরীর ও মনের ক্ষতগুলো।
শুধু মাত্র প্রেমে সাড়া না পেয়ে সঞ্চয়িতা যাদব ও মনীষা পৈলানকে অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছিল। সাগরদ্বীপের সূর্যশঙ্করকে অ্যাসিড ছোঁড়া হয় পারিবারিক অশান্তির জেরে। এদের মধ্যে সূর্যশঙ্কর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, বর্তমানে একটি স্কুলে প্যারাটিচারের চাকরি করে। সেই টাকাতেই চলছে ওদের সংসার এবং চিকিৎসার খরচ। মনীষার বাবা কাঠ মিস্ত্রি আর সঞ্চয়িতা এক এনজিও-তে ছোট একটা চাকরি করে নিজের চিকিৎসা, ঘর ভাড়া ও অসুস্থ মাকে নিয়ে দিন কাটায়।
এদের প্রত্যেকের উপর অ্যাসিড হামলাকারীরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত। অজানা কারণে মনীষার উকিল দিনের পর দিন মামলার ডেট এর পর ডেট পিছিয়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে তাঁর মামলা একচুলও এগোয়নি। মনীষার কথাতে, “একটা পাকাপাকি কর্মসংস্থান থাকলে নিজে পয়সা দিয়ে উকিল রেখে মামলা চালাব”। মনীষার উপর আক্রমণকারী এখনও প্রকাশ্যে ধমকি দিয়ে চলেছে। প্রশাসন সব জেনে শুনেও চুপ, অভিযোগ মনীষার।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে ওরা এই সব সমস্যা জানাতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অ্যাসিড বিক্রি করা, আইন করে বন্ধ করে দিক যাতে আর কাউকে ওদের মত অ্যাসিডে শারীরিক, সামাজিক ও মানসিক ভাবে না পুড়তে হয় প্রতিদিন।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা হয়নি ওদের। সকাল নয়টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে আসতে হয়েছে খালি হাতেই। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পরের সপ্তাহে আবার যেতে। যদিও নির্দিষ্ট কোন দিনে গেলে তারা মুখ্যমন্ত্রীর দেখা পাবে তা উল্লেখ করা হয়নি।
তবুও ওরা আশাবাদী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মহিলা, তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন ওদের যন্ত্রণা। শুধু একবার যদি কোনভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছনো যায়, উনি নিশ্চয়ই একটা সমাধান এর ব্যবস্থা করবেন। স্বাধীন ও সুস্থ জীবনে আবারও ফিরতে পারবে ওরা।
আর তার জন্যই এখন অপেক্ষায় বারুইপুরের মনীষা পৈলান, দমদমের সঞ্চয়িতা যাদব, মেদিনীপুরের সুতপা দাস ও সাগরদ্বীপের সূর্যশঙ্কর বারিক। আরও একটা লড়াই তাদের সামনে। মাথা উঁচু করে মুখ না ঢাকার লড়াই।