লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অনেক আগে থেকেই ভোটের দলীয় প্রচার শুরু করে দিয়েছে। বাংলাতেও সিপিএম কংগ্রেস জোট করে প্রার্থী প্রায় ঠিক করে ফেলেছে। তৃণমূল কংগ্রেস আজ কালের মধ্যেই ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেবে। শুধু অপ্রস্তুত বঙ্গ বিজেপি। সব আসনে যোগ্য প্রার্থীই পাচ্ছে না তারা।
আরও পড়ুনঃ ৭ দফায় লোকসভা ভোট শুরু ১১ এপ্রিল, ভোট গণনা ২৩ মে
দেশের সবচেয়ে বড় এবং কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপিও বহু আগে থেকেই রাজ্যে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য বিজেপির হেভিওয়েট নেতাদের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু প্রার্থী কোথায় ? ৪২ টি আসনে ভালো ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না বিজেপি।
আরও পড়ুনঃ সপ্তদশ লোকসভা ভোট ৭ দফায়, দেখে নিন কবে কোথায় কত আসনে ভোট
লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলোয় বিজেপি ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন পেয়েছিলো। এবার তা আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। বরং কমে যেতে পারে। সেই সম্ভাবনাই প্রবল। তাই পূর্ব ভারত থেকেই বিজেপিকে আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে, যার অন্যতম লক্ষ্য ৪২ লোকসভা আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ।
কিন্তু খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল অনিশ্চয়তা। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়ায় ভর করে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরেও এই রাজ্যে বিজেপির নেতৃত্বের বেহাল দশা আজও কাটেনি।
নিজেদের আদর্শভিত্তিক নেতা তৈরি দুরস্ত, বিজেপিকে নির্ভর করতে হয়েছে বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অন্য দলের নেতাদের ওপর। তার ওপর রাজ্য বিজেপির উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যেই দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে বহুবার। বঙ্গ বিজেপিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর লড়াই সংগঠন বাড়াতেই দেয় নি দলকে। তার ফল ভোগ করতে হয় ভোটের সময় যোগ্য প্রার্থী পায় না দল।
বাংলার কোন লোকসভা আসনে কবে ভোট দেখে নিন
কেন্দ্রের নেতারাও বিজেপির বিরোধী দলগুলো থেকেই নেতাদের ভাঙানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। মূলত রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে দুর্বল করতেই তাদের বিজেপিতে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য দলের তাবড় তাবড় নেতাদেরও টার্গেটের বাইরে রাখা হচ্ছে না। যার দায়িত্বে আছেন মুকুল রায়।
তা সত্ত্বেও এখনো লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রার্থী তালিকা তারা ঘোষণা করতে পারেনি। উল্টে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী ও বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তকে নিজেদের দলে টানতে গিয়ে মুখ পুড়েছে বিজেপির। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে, প্রার্থী তালিকার ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পরেই বিজেপি তাদের প্রার্থী তালিকা ঠিক করবে।
রাজনৈতিক মহল বলছে তৃণমূল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলে যাঁরা সুযোগ পাবেন না তাদের দলে টানতে উদ্যোগ নেবে বিজেপি। তারপর তাদেরই লোকসভায় প্রার্থী করা হবে। অর্থাৎ আসন না পাওয়া বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারাই এবারের লোকসভায় বিজেপির ভরসা। এইভাবে কি ভোটে জেতা যায়? উঠেছে প্রশ্ন।
তাই, প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনার জন্য আজই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে বসছেন রাজ্যের ৪ বিজেপি নেতা। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা ও রাজ্যে নিযুক্ত বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়।
গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির তরফে একঝাঁক তারকাকে প্রার্থী হিসেবে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। একমাত্র বাবুল সুপ্রিয় ছাড়া আর কোনও তারকাই আসন জিতে আসতে পারেন নি। তারাও আর কেউই দলের সাথে যুক্ত নন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থা থেকে বিজেপি বেরিয়ে এসে ইতিবাচক রাস্তা খুলবে, নাকি জোড়াতালি দেওয়া নেতাদের ওপরেই নির্ভর করতে হবে, তার দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে আম জনতা।
তবে ৪২ লোকসভা আসনে যোগ্য প্রার্থী দিতে গিয়েই যে বঙ্গ বিজেপি নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে তা মুকুল রায়ের বিভিন্ন কার্যকলাপেই পরিষ্কার, বলছে বাংলার রাজনৈতিক মহল। ২০১৪ র মোদী ঝড়ের পর ৫ বছর সময় পেয়েও বাংলায় বিজেপি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আজও সেখানেই দাঁড়িয়ে মত ভোট বিশেষজ্ঞদের। এখন তৃণমূল এর ক্ষুব্ধ মানুষের ভোট পেয়ে বিজেপি বাংলায় কিরকম ফল করে সেটাই এখন দেখার।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।