ব্রিগেডের পর এবার ধর্মতলা, ডিম ভাতের পর এবার স্যান্ডুইচ ও চিকেন বিরিয়ানি। ডিম্ভাত। সামান্য তিন অক্ষরের একটা নতুন বাংলা শব্দ ‘ডিম্ভাত’। ১৯শে জানুয়ারির পর এটাই ঢুকে গেছে বাংলা শব্দকোষে। তবে এবার আর ডিম্ভাত নয়। পরিবর্তন হয়েছে আন্দোলনের স্থান। ব্রিগেডের মাঠ থেকে এখন ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেল। তৃণমূল কংগ্রেস নয়, আন্দোলনে মমতার রাজ্য সরকার। তাই খাবারেও পরিবর্তন। ডিম্ভাত নয়, সোমবার সকালে স্যান্ডুইচ আর দুপুরে চিকেন বিরিয়ানি।
আরও পড়ুনঃ মায়ের প্রতিহিংসা থেকে বাঁচতেই কি বিজেপিতে যোগ দিলেন ‘মমতার মেয়ে’
বাঙালির অতি পরিচিত ডিমের ঝোল আর ভাতের চিরকালের চেনা পদটিই এখন ‘ডিম্ভাত’। আর গত কয়েকদিন ধরে কলকাতা সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই ‘ডিম্ভাত’ নিয়ে চলছে তুলকালাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনীতির সিরিয়াস আলোচনা, সর্বত্র আলোড়ন ফেলা এই ডিম্ভাত শব্দটির উৎপত্তি ব্রিগেডের আগে তৃনমূলের দেওয়াল লিখন থেকে।
গত ১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে দেশের অন্তত বাইশটি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এক বিশাল সমাবেশ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গেরই কোনও এক জায়গায়, দেওয়ালে ভুল বানানে লেখা হয়েছিল, “১৯শে জানুয়ারী বিগ্রেড চলো”। তার নিচে ছোট করে আরও লেখা ছিল “মেনু: ডিম্ভাত”।
আরও পড়ুনঃ সারদা কেলেঙ্কারির পাল্টা এবার সিবিআইকেই প্রতারণা মামলার নোটিশ মমতার পুলিশের
ওই ছবিটিই হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে ঝড়ের গতিতে। নিমেষের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় এই ‘ডিম্ভাত’। পশ্চিমবঙ্গে যখন বড় বড় রাজনৈতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, তখন তাতে যোগ দিতে আসা লোকজনকে সচরাচর দুপুরের খাওয়ানোরও দায়িত্ব নিয়ে থাকে আয়োজক রাজনৈতিক দল। এটা বাংলার খুব পুরনো সংস্কৃতি।
আরও পড়ুনঃ মমতার নির্দেশে সিবিআই অফিসারদের আটক করে বাংলার আইপিএসরা বিপদে
বামপন্থীরা যখন টানা চৌত্রিশ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিলেন, তাদের ব্রিগেডের সমাবেশে প্রায় অপরিহার্য অনুষঙ্গ ছিল ‘মাছভাত’। অনেকে সে সময় রসিকতা করে বলতেন, ‘মার্ক্সবাদ’ নয়, গ্রামবাংলা থেকে মানুষ আসলে ব্রিগেডে যোগ দিতে আসে ‘মাছভাতে’র আকর্ষণে। তবে এখন বামেদের সেই রাজপাট গিয়েছে। এখন তাদের ভরসা লোকের বাড়ি বাড়ি সংগ্রহ করা রুটি-ঘুগনি।
আরও পড়ুনঃ তথ্যপ্রমাণ নষ্টের প্রমাণ পেলে পুলিশ কমিশনারকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে হুঁশিয়ারি সুপ্রিম কোর্টের
কিন্তু গত ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তৃণমূলের ব্রিগেডে মেনু ছিল সেই আদি ও অকৃত্রিম ডিমের ঝোল ও ভাত। শুধু বানানটাই যা ছিল নতুন, ‘ডিম্ভাত’। ব্রিগেডের সেই সমাবেশ মিটেও গেছে, কিন্তু ‘ডিম্ভাত’ নিয়ে বাঙালির আলোচনা, সমালোচনা বা তর্কবিতর্কের ঝড় কিন্তু থামছে না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে এই শব্দটি নিয়ে নানা সৃষ্টিশীলতা।
আরও পড়ুনঃ পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআইকে ঢুকতে বাধা কলকাতা পুলিশের
রবিবার রাত থেকে মমতার আন্দোলনের কেন্দ্র এবার ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে। তবে এখানে ডিম্ভাত নয়। নেতা, নেত্রী, পুলিশ, সাংবাদিক সবার জন্য সোমবার বরাদ্দ ছিল রীতিমত চিকেন বিরিয়ানি। সকালে সবার জন্য বরাদ্দ ছিল স্যান্ডুইচ আর দুপুরে চিকেন বিরিয়ানি। সঙ্গে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চা তো আছেই।
আরও পড়ুনঃ বুদ্ধে সৌজন্য কিন্তু মোদী যোগীতে অনুমতি নেই, শত্রু পাল্টেছে মমতার
ডিম্ভাত ছেড়ে স্যান্ডুইচ আর চিকেন বিরিয়ানিতে ফেরায় স্বস্তি নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিক মহলে। তবে জেলা থেকে যে সব তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা সিবিআই এর হাতে দিদির অপমানের বদলার শরিক হতে সোমবার ধর্মতলায় এসেছিলেন তাঁরা কিন্তু একটু হলেও হতাশ হয়েছেন।
জেলার বেলায় ডিম্ভাত আর কলকাতার বেলায় চিকেন বিরিয়ানি? তাদের বেলায় ডিমের ঝোল, আর এখানে বিরিয়ানি? ইয়ে বহুত না ইনসাফি হ্যায়। তবে ডিম্ভাত এর পর স্যান্ডুইচ আর চিকেন বিরিয়ানি সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনায় জায়গা পায় কিনা সেটাই এখন দেখার। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যাগ্রহ সরকারের। যাবতীয় খরচাও কি সাধারণ মানুষের করের টাকায়?