আসল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কারা? ফের উঠে গেল প্রশ্ন। ২০১৯ সালের লোকসভাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর তৃতীয় ফ্রন্টে থাকার বিনয় তামাং এর ঘোষণাকে সোমবার বাতিল বলে জানিয়ে দিল বিমল গুরুং-রোশন গিরির গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বিনয় তামাং এর সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কোন সম্পর্ক নেই বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়তে পারেনঃ রাজ্যের হাতে টাকা নেই বাজারে ধার, তারপরেও বিধায়কদের ভাতা বাড়ছে
“মমতার মহাজোটে নয়, বিজেপির এনডিএ এর সঙ্গে আছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা”, সোমবার গোপন আস্তানা থেকে এমন বার্তাই দিলেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। এর আগেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফ থেকে বিনয় তামাং ঘোষণা করেন, ২০১৯ সালের লোকসভাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর তৃতীয় ফ্রন্টে আছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সেই ঘোষণাকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফ বাতিল বলে সোমবার জানিয়ে দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি।
আরও পড়তে পারেনঃ বিজেপির সমালোচনা করে পাহাড়কে শান্ত থাকার অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর
সোমবার বিমল গুরুং-রোশন গিরির গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফ থেকে আরও জানান হয়েছে,”বিনয় তামাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের একজন কর্মী। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জিটিএ-র এডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে নিয়োগ করেছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নিয়ে তাঁর বলার কোন অধিকারই নেই”।
আরও পড়তে পারেনঃ ব্রিগেড থেকে ফিরেই ভোলবদল, মমতা নয় রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী চাইলেন নেতারা
রোশন গিরির চিঠিতে আরও জানান হয়েছে, “বিনয় তামাংকে ১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফ থেকে কোন কিছুই বলার অধিকার তাঁর নেই”। রোশন গিরির সই করা চিঠিতে জানান হয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিজেপির এনডিএ জোটে ছিল, বিজেপির সঙ্গেই আছে। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ এর প্রতি তাঁদের বিশ্বাস ও পূর্ণ সমর্থন আছে বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পৃথক রাজ্যের দাবীতে পাহাড়ে অশান্তির ঘটনায়, দার্জিলিং-এর ভানুভবনে ভাঙচুর, পুলিশ কর্মীর মৃত্যু সহ একাধিক অশান্তির ঘটনায় প্রায় দেড় বছর পর গত ডিসেম্বরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। দার্জিলিং-এর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বা সিজেএম আদালতে বিমল গুরুং, রোশন গিরি, আশা গুরুং, অভিষেক গুরুং, প্রকাশ গুরুং সহ ৭২ জন মোর্চার শীর্ষনেতৃত্বের নামে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।
আরও পড়তে পারেনঃ বিহারী ভোট ধরতে বাংলায় বাবুলের বিরুদ্ধে বিহারীবাবু
পাহাড়ে পুলিশ মৃত্যু ও অশান্তির ঘটনায় বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। চার্জশিটে নাম আছে ৭২ জনের। তাদের মধ্যে ৪৫ জন পলাতক বলে জানানো হয়েছে সিআইডির চার্জশিটে। বিমল গুরুং, রোশন গিরি সহ ৪৫ জন জন ফেরার বলে জানান হয়েছে। এই চার্জশিটের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই এই সকল অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে সিআইডি।
আরও পড়তে পারেনঃ মার্চেই শুরুতেই ভারতে লোকসভা ভোটের ঘোষণা
প্রসঙ্গত, গতবছর ১৫জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দার্জিলিং-এর ভানুভবনে সরকারী আধিকারিকদের সাথে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পাহাড়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা বিদ্যালয়গুলিতে বাধ্যতামুলক করা হবে। সেই সময় বিমল গুরুং সহ মোর্চা নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রতিবাদে ভানুভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়।
পরে আন্দোলনের রেশ বাড়তেই ভানুভবন ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ওঠে মোর্চার বিরুদ্ধে। ভানুভবন ঘেরাও করে পুলিশের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে মোর্চার বিরুদ্ধে। এরপরই সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্তির সৃষ্টি হয়। এরপরই পাহাড় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিমল গুরুংকে ধরতে গিয়ে তার দেহরক্ষীর গুলিতে মারা যান পুলিশ অফিসার অমিতাভ মল্লিক। ওই পুলিশ অফিসার হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি জড়িয়ে থাকার জন্য হত্যা মামলার ধারা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়তে পারেনঃ বাংলায় ক্ষোভ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াচ্ছে মোদী সরকার
টানা ১০৫ দিন পাহাড় বন্ধ থাকে। সে সময় জায়গায় জায়গায় সরকারী সম্পত্তি নষ্ট করা হয়। সমস্ত অভিযোগের তীর যায় গুরুং পন্থী মোর্চার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় প্রচুর মোর্চা সমর্থকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর হয়। মুলত যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে সিআইডি চার্জশিট জমা দেয়৷
আরও পড়তে পারেনঃ ভোটের আগে মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট
সিআইডি সূত্রে খবর, চার্জশিটে খুনের চেষ্টা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের উপর হামলা-সহ একাধিক ধারা যুক্ত করা রয়েছে। এই মামলার তদন্তে ৫০ জনের স্বাক্ষ্য নিয়েছেন গোয়েন্দারা। সেই সব স্বাক্ষ্য, এফআইআর ও অভিযোগ দেখেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে জানান হয়েছে। গোয়েন্দারা এখন শুধু বিমল গুরুংকে ধরার অপেক্ষায়।
তবে লুকিয়ে থেকেও যে ভাবে পাহাড়ে রাজত্ব চালাচ্ছে বিমল গুরুং-রোশন গিরির গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, তাতে ভোটের সময় অশান্তির আশঙ্কা করছেন সবাই। আসল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কারা? এই প্রশ্নের সমাধান যতদিন না হচ্ছে, ততদিন পাহাড়ে অশান্তির আশঙ্কা থাকছেই।
আরও পড়তে পারেনঃ
শ্রীজাত হেনস্থা ঘটনায় বাংলার বুদ্ধিজীবিদের মুখোশ খুললেন তসলিমা
বাংলায় দুর্গা পুজো বন্ধ করার চক্রান্ত করছে মোদীর বিজেপি, মারাত্মক অভিযোগ মমতার
মমতার বাছাইয়ে কারা হবেন বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী
মোদীর প্রকল্পে আর টাকা দেবেন না মমতা, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে
একদিনে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল সাংসদ, দিদিকে ছেড়ে মোদীর দলে আর কে কে
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।