The News বাংলা, কলকাতা: মমতার কাছে ‘গোহারা’ হেরে গেলেন মোদী। রাজ্য সরকার না করে দেবার পরে বিজেপির ‘রথ যাত্রা’য় অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্টও। ফের একবার আদালতের লড়াইয়ে জিতল মা মাটি মানুষের সরকার। আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত কোন ‘রথ যাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ করা যাবে না বলেই রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার অনুমতি দেয় নি। বৃহস্পতিবারই আদালতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোচবিহারে বিজেপির ‘রথ যাত্রা’য় পরিষ্কার না বলে দেওয়া হয়। নরেন্দ্র মোদীর ‘রথ যাত্রা’র অনুমতি পেতে বিজেপির শেষ ভরসা ছিল সেই কলকাতা হাইকোর্টই। বলাই যায়, বিজেপির রথের দড়ি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের হাতে। সেই দড়ি আদালত এখন তুলে দিল রাজ্য সরকারের হাতেই।
বিজেপির ‘রথ যাত্রা’ শুরু করার অনুমতি দেয় নি রাজ্য সরকার, আজ জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে। আগামীকাল শুক্রবার, ৭ তারিখ কোচবিহার থেকে বিজেপির ‘রথ যাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ শুরুর কথা। তবে সেই যাত্রা শুরু করতে পারবে কিনা সেই নিয়েই ছিল প্রশ্ন। রাজ্যকে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। রাজ্য সরকার না করে দেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তই বহাল রাখল আদালত। আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত কোন রথযাত্রা নয়, নির্দেশ আদালতের।
আরও পড়ুন: মমতার অনুমতি নেই, মোদীর রথের দড়ি কলকাতা হাইকোর্টের হাতে
প্রথম থেকেই বিজেপির ‘রথযাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার। আবার ‘রথযাত্রা’ করা যাবে না এমনটাও প্রথমে জানানো হয়নি রাজ্যের তরফে। তাই ‘রথযাত্রা’র বিষয়ে রাজ্য প্রশাসন ‘নীরব’ এই অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য বিজেপি। বিজেপির তরফে প্রশাসনের নীরবতার অভিযোগে এবং এবিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা দায়ের করেন রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার।
মামলার শুনানিতে বিজেপির আইনজীবী সপ্তাংশু বসু ও অনিন্দ্য মিত্র জানিয়েছিলেন,’আসন্ন বিজেপির ‘রথ যাত্রা’ অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’য় প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। তা সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসন এখনও কেন নিশ্চুপ? তাঁরা আদালতে আরও জানিয়েছিলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও জানাচ্ছে না সরকার। এর আগেও একাধিকবার রাজ্য প্রশাসন এই কাজ করেছে’।
আরও পড়ুন: মমতার পদে ইস্তফা, বিজেপির ‘গনতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’য় কেপিপি সভাপতি
শুক্রবার ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে বিজেপির প্রথম রথ। দ্বিতীয় রথটি কাকদ্বীপ থেকে যাত্রা শুরু করবে ৯ তারিখ। তৃতীয় রথের যাত্রা তারাপীঠ থেকে শুরু হওয়ার ১৪ ডিসেম্বর। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তিনটি রথের উদ্বোধনেই হাজির থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। শুধু তাই নয় ‘রথযাত্রা’ বা ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ চলাকালীন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি জনসভা করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে আদালতের এই রায়ের পর, কি করবেন বিজেপি নেতারা সেটাই এখন প্রশ্ন।
এর পরিপেক্ষিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘রথযাত্রায় অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রথমে ডিজি তারপর আইজিকে জানানো হয়। তারপরও কেন অনুমতি দেওয়া হয়নি? রথযাত্রার অনুমতি নিয়ে স্বয়ং রাজ্যপালও প্রশাসনের কাছে জানতে চান। তাঁকেও কিছু জানানো হয়নি’।
উত্তরে এজি বলেন, ‘ওরা ডিজি, আইজির কাছে অনুমতি চায়, তারা যথাযত কর্তৃপক্ষ নন যে অনুমতি দেবেন। আর রাজ্যপালের সাংবিধানিক অধিকার নেই যে এবিষয় হস্তক্ষেপ করবেন’।
আরও পড়ুন: ‘গনতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র মধ্যেই শিলিগুড়িতে প্রথম জনসভা নরেন্দ্র মোদীর
এজির উত্তর শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। মন্তব্য করেন, ‘ডিজি, আইজি সেকথা জানাতে পারতেন যে কোথায় অনুমতি নিতে হবে। এজির উদ্দেশ্যে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলই তো মিছিল করবে, বারবার আদালত কেন সব রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করবে? এই সব সমস্যা সমাধানের কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকার। আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান করুন’।
বিচারপতির এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে কিশোরবাবু জানান, ‘আমরা জানি না কত মানুষ আসবেন এখানে? বিজেপির কোন কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন? তিনি কী ক্যাটেগরি নিরাপত্তা পান? সব জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে বসতে হবে’। শেষ পর্যন্ত কোচবিহারের পুলিশ সুপার এই যাত্রা নাকচ করে দিয়েছেন বলে আদালতে বৃহস্পতিবার শুরুতেই জানিয়ে দেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত।
এরপরই বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী নিজের রায় শুনিয়ে দেন। আদালত বিজেপিকে এই যাত্রার অনুমতি না দেওয়ায় মুখ পুড়ল বিজেপির। ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ আপাতত বিশ বাঁও জলে। ফের আদালতের লড়াই এ জয় হল মমতার রাজ্য সরকারের। ‘লোকসভা ভোটের আগেই কলকাতা হাইকোর্টে মমতার কাছে হারলেন মোদী’, বলছেন তৃণমূল নেতারা।