The News বাংলা, Sports: শুরুটা হয়েছিল সেই সৌরভ গাঙ্গুলীর আমল থেকেই। মাঠে চোখে চোখ রেখে কথা বলা, এক ইঞ্চি জায়গা না ছাড়া। ইটের বদলে পাটকেল ফিরিয়ে দেওয়া। বিরাট কোহলির আমলে সেটাতেই এখন ‘মাস্টার’ টিম ইন্ডিয়া। সেই ভয়েই কি ‘স্লেজিং’ বন্ধ অস্ট্রেলিয়ার? না কি ব্যক্তিগত দক্ষতার অভাব?
প্রতিপক্ষের বোলার কিংবা ব্যাটসম্যানকে কিছু বলে তাতিয়ে দেওয়া, ক্রিকেটে খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। আর এই কাজে অস্ট্রেলিয়াই সবার থেকে এগিয়ে ছিল বহু বছর ধরে।
তারাই কিনা এখন স্লেজিং ও আগ্রাসন এড়িয়ে যাচ্ছে! অন্য সবার মত বিষয়টি চোখে লেগেছে ফাফ ডু প্লেসি আর মিচেল জনসনের। অজি ক্রিকেট থেকে হঠাৎ স্লেজিং হারিয়ে যাওয়াটা ঠিক মানতে পারছেন না তারা। অবাক হচ্ছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও।
ডু প্লেসির নেতৃত্বে সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু অন্য সময়ের চেয়ে এবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অজিরা ছিলেন ঠাণ্ডা মেজাজে।
আসলে বল টেম্পারিং ইস্যুতে স্টিভেন স্মিথ- ডেভিড ওয়ার্নারের নিষেধাজ্ঞার পরই বদলে গেছে তাদের ক্রিকেট অঙ্গন। অচেনা এই অস্ট্রেলিয়াকে দেখে ডু প্লেসির কিছুটা হলেও অস্বস্তি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘অনেক বদলে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট। মাঠে বিপক্ষকে উত্যক্ত করার প্রবণতা ওদের আগের চেয়ে অনেক কম’।
বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা তাদের চিরসেনা আগ্রাসী রূপ দেখিয়েছিল বলেই দুই মেজাজের তফাতটা খুব ভাল ভাবে টের পাচ্ছেন ডু প্লেসি, ‘ওখানে যা হয়েছিল, তার তুলনায় এখন ওরা অনেক নরম। মাঠে আগের মতো আর বেশি কথা বলে না ওরা। বরং ক্রিকেটের মাধ্যমে নিজেদের বেশি প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। ক্রিকেটটা সাধারণত যে রকম হয়, সে রকমই হচ্ছে এখানে’।
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা হিসেবে পরিচিত। তাই বলে ‘স্লেজিং’ চর্চা একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন ডু প্লেসি, ‘এটা ঠিক, যে নিয়মের মধ্যে থেকেই সব কিছু করা উচিত। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যদি ক্রিকেটারদের নিজেদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলো একেবারে দূরে সরিয়ে দিতে হয়, তা হলে তার প্রভাব তো পারফরম্যান্সে পড়তেই পারে’।
২০১৪ সালে যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ভারত, সেবার কোহলির সঙ্গে লড়াইটা ভালোই জমেছিল মিচেল জনসনের। মেলবোর্ন টেস্টে ভারতীয় ব্যাটিং তারকাকে বল ছুঁড়ে বিতর্কেও জড়ান তিনি। দীর্ঘ চার বছর পর আবারও ঘরের মাটিতে ভারতকে আতিথ্য দিচ্ছে অজিরা।
বৃহস্পতিবার, টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল তাদের লড়াই। আসন্ন এই সিরিজকে সামনে রেখে, সম্প্রতি এক টুইটের জবাবে মিচেল জনসন লিখেছেন, ‘স্লেজিং বন্ধ হলে তো বিরাটের সেই আগ্রাসী বিদায় দেওয়ার দৃশ্যও দেখতে পাচ্ছি না’।
জনসনের টুইটেই স্পষ্ট- অজি ক্রিকেটে স্লেজিং বন্ধ হওয়াটা মানতে পারছেন না তিনিও। তবে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের আগেই তাদের সতর্ক করেছে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। ভুলেও বিরাট কোহলি ও তাঁর টিমকে স্লেজ না করতে।
কারণ স্লেজিং এ নাকি বিরাট কোহলি উত্তেজিত হলে তাঁর খেলা আরও ভালো হয়ে যায়। আর তাই এই সফরে মুখ বুজে ক্রিকেট খেলাই লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার।
তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ডের সঙ্গে এখন আর সেই তফাৎ নেই অস্ট্রেলিয়ার। ফারাক আর নেই। বলে বলে একা ম্যাচ বের করে নেবার ক্রিকেটাররা অবসর নিয়েছেন। আর তাই ব্যক্তিগত দক্ষতা কমায় তাদের স্লেজিংও শেষ।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিযুক্ত ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান কর্তারা আবার বিরাট কোহলিকে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে বারণ করেছেন। তবে টিম যখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আর উল্টো দিকে যখন বিরাট কোহলি, তখন মাঠে যখন খুশি ফিরে আসতে পারে স্লেজিং ও আক্রমণাত্মক আচরণ।