The News বাংলা: না, শেষ হল না ‘তাজমহল’। মাঝপথেই আটকে গেল ‘তাজমহল’ তৈরির কাজ। কারণ, পথ দূর্ঘটনায় মারা গেলেন ‘শাহজাহান’। অবাক হচ্ছেন? এ শাহজাহান মুঘল সম্রাট নন, ইনি ফইজুল হাসান কাদরি, এযুগের ‘শাহজাহান’।
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার কাসের কালান গ্রামে ছিল ফইজুল হাসান কাদরি ও তাজমুল্লি বেগম-এর সুখের সংসার। কিন্তু, গলার ক্যানসার হয়ে তাজমুল্লি বেগম মারা যান ২০১১ সালে। ৫৮ বছরের বিবাহিত জীবনে ছেদ পড়ে। আর তার পরের বছরই সম্রাট শাহজাহানের মত স্ত্রীর সমাধির উপরে ‘মিনি তাজমহল’ গড়ার কাজে হাত দেন কাদরি।
সাধ থাকলেও সাধ্যের তো সীমা থাকে! নিজের সব সম্বল নিয়ে নেমেছিলেন মাঠে। কিনেছিলেন মার্বেল আর ইমারতি সরঞ্জাম। কিন্তু বেশ খানিকটা গাঁথনি ওঠার পরে আটকে যায় কাজ। কারণ টাকা-পয়সার সংকুলান ছিল না।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা ও তারপরের গণহত্যার না জানা সত্যি
৬ বছর চেষ্ঠা করেও কাজ পুরো শেষ করতে পারেননি ‘শাহজাহান’ কাদরি। শেষ সম্বল দু’লক্ষ টাকা দিয়ে জয়পুর থেকে ফের মার্বেল আনাবেন বলে মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হল না।
লাঠি ঠুকঠুক করতে কাজেকর্মে এখানে-ওখানে চলে যেতেন। ৮৩ বছর বয়সে গত বৃহস্পতিবার তেমনই বেরিয়েছিলেন। পথে একটি মোটরসাইকেল তাঁকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচাতে পারেননি তাঁকে। পরের দিন শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মিশন ছেড়ে বিপ্লবী হন এই নারী
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের মত বুলন্দশহরের ‘শাহজাহান’, ফইজুল হাসান কাদরির কোনও সাম্রাজ্য ছিল না। দিন কেটেছে পোস্টমাস্টারের চাকরি করে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে কাসের কালান গ্রামে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন এই ‘মিনি তাজমহল’।
কথিত আছে সম্রাট শাহজাহান তাঁর শিল্পীদের হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছিলেন যাতে তারা আর এইরকম একটি শিল্প সৃষ্টি করতে না পারে। আর একালের ‘শাহজাহান’ কি করলেন?
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পের বেশ কিছু অজানা কাহিনী
উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সমাজবাদী দলের নেতা শ্রী অখিলেশ যাদবের কাছে এই রকম এক প্রেম কাহিনীর কথা পৌঁছালে তিনি লখনউয়ে ডেকে পাঠান কাদরিকে। বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। টাকা দিতে চান ‘মিনি তাজমহলে’র বাকি কাজ শেষ করার জন্য।
কিন্তু, বিনীত ভাবে কাদরি জানান, এটা তিনি নিজেই গড়তে চান। তবে মুখ্যমন্ত্রী চাইলে গ্রামে একটি ইন্টার-কলেজ করে দিলে ভাল হয়। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে সেই জমিতেই গড়ে দেন কলেজ। গাঁয়ের মেয়েরা এখন সেখানেই পড়ে। সেই কলেজের কিছুটা জমি কাদরিরই দেওয়া। মুঘল সম্রাট শাহজাহানকে এখানেও প্রেমে টেক্কা দিয়েছেন কাদরি।
আরও পড়ুন: নেতাদের কথা নয়, জীবন দর্শন নিয়ে মনে রাখুন কালামের উক্তি
তবে এখন তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে এগিয়ে এসেছেন তাঁর আত্মীয়রা, এলাকার বাসিন্দারাও। কাদরির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁর তাজমহলে স্ত্রী তাজমুল্লি বেগমের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে তাঁকে। ‘মিনি তাজমহলে’র বাকি কাজও তাঁরাই সম্পূর্ণ করবেন বলে মনস্থ করেছেন।
ভালোবাসায় এ ‘তাজমহল’ হার মানিয়ে দিয়েছে আসল তাজমহলকেও। এক সম্রাট তাঁর চার বেগমের মধ্যে একজনের স্মৃতিতে গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য! সে তাজমহল নিয়ে রচিত হয়েছে কত কবিতা, গল্প, গান।
আরও পড়ুন: ফের ভাঙছে হিমবাহ, ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পৃথিবী
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল নিয়ে স্বয়ং কবিগুরুও লিখে গেলেন অমর কবিতা
“কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল/এ তাজমহল”।
কিন্তু, এই ‘শাহজাহানে’র ‘তাজমহল’ নিয়ে লেখা হবে না কোন কবিতা। আদৌ এই ‘তাজমহল’ শেষ হবে কিনা তাও জানা নেই। তবুও ভালোবাসায় সে তাজমহলের চেয়ে এই অর্ধসমাপ্ত ‘তাজমহল’ অনেক- অনেক বেশি উজ্জ্বল।