শিলিগুড়িঃ ছোট মেয়ে আর নেই! তাই সারাদিনই মনমরা মা! বাকি বোনেদের মধ্যেও চঞ্চলতা নেই আগের মত। বুধবারেও সকাল থেকেই মন খারাপ মা শীলা’র। ২৪ঘন্টা হয়ে গেল! এদিক ওদিক কোথাও দেখতে পাচ্ছে না ছোট মেয়ে ইকা’কে। ছোট মেয়েকে হারিয়ে মনমরা শীলা। মন খারাপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। বাঘের মেয়ের নামকরণ যে তিনিই করেছিলেন।
সকালের দিকে নিজের ক্রলেই তিন-চার বার গর্জন দিয়ে ডাকাডাকি করলেও, পরে অন্যান্য দিনের চাইতে অনেকটাই নিস্তেজ, নিশ্চুপ শীলা। মন ভালো নেই মায়ের। মন ভালো নেই ইকার দুই বোনেরও। আজ তারাও সেভাবে ছুটোছুটি করছে না। সাবলিল খেলাধুলায় খানিকটা অনিহা রয়েছে কিকা ও রিকার। ছোট্ট বোন ইকা যে আজ দলে নেই। দলটা ছোট হয়ে গিয়েছে। তাই সকাল থেকে তারাও ডাকাডাকি করে ইকাকে দেখতে না পেয়ে তারাও বিষন্ন।
মঙ্গলবার সকালে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে মৃত্যু হয় সাড়ে ৫মাস বয়সের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কন্যা শাবক ইকার। যদিও সুস্থ রয়েছে পার্কের অন্য দুই শাবক কিকা ও রিকা। জানা যায়, গত দিন সাতেক আগে তিন শাবক মা শীলার পাশেই খেলাধুলা করতে গিয়ে হঠাৎই পায়ে চোট পায় কনিষ্ঠতম শাবক ইকা।
ঘটনার পর থেকেই পার্কের চিকিৎসক ও পাহাড়ের চিকিৎসকের তত্ত্ববধানে চিকিৎসাও চলছিল। গত দু’দিন আগে ইকার অবস্থার অবনতি হয়। এরপর মঙ্গলবার ভোরে মারা যায় সে। এদিন দুপুরেই ময়নাতদন্ত করেছেন ডাক্তাররা। নমুনা সংগ্রহ করে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় কলকাতায়।
সাফারি পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অরুন মুখার্জি জানান, দিন সাতেক আগে খেলতে খেলতে পেছনের একটি পা’য়ে চোট পায় শাবকটি। তারপর থেকেই চিকিৎসা চলছিল তার। চারদিন আগে তার শারিরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও পরের দিন থেকে ফের অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
এরপর মঙ্গলবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ইকা। পরে বন্যপ্রানী আইন অনুযায়ী যেহুতু সিডিউল ১এর অন্তর্গত পরে এই বাঘের প্রজাতিরা, তাই নিয়ম অনুযায়ী দাহ করা হয় শাবকটিকে। দাহ হয়ে যাওয়ায় সেই জায়গা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করা হয়, যাতে কোন দেহাংশ পরে না থাকে প্রানীটির। এরপর সেই সমস্ত অস্তিভষ্মগুলি একত্রিত করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
অরুন বাবু আরও জানান, শাবকটিকে বাঁচাতে সমস্তরকম চিকিৎসা করা হয়েছিল। কিন্তু যেহুতু কনিষ্টতম শাবক হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কম থাকার কারনেই চিকিৎসায় সাড়া দেয় নি সে। তিনি আরও জানান, মানুষের মতই সমস্ত প্রানীরই সন্তান হারাবার একটা যন্ত্রনা থাকেই। তাই শাবকটির মা শীলাও দু’দিন ধরে মনমরা।
মঙ্গলবার সকালের মত বুধবারও সকালের দিকে খানিক্ষন চিৎকার করলেও, পরের দিকে সারাদিনই মনমরা হয়ে নিস্তেজ হয়ে নিজের ক্রলেই ছিল সে। বাকি দুই শাবকও সকালের দিকে একটু চঞ্চলতা দেখালেও পরে মা’এর পাশেই শুয়ে থাকে দীর্ঘক্ষন। আজ তাদের সেভাবে খেলা করতে দেখা যায় নি।
অরুনবাবু আরও জানান, ‘ঘটনা জানার পরই উত্তরবঙ্গে সফররত মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করেন। তিনি বন্যপ্রানী ভালোবাসেন এবং যেহুতু তিনি শাবক তিনটির নামকরন করেছিলেন, তাই শাবকের মৃত্যুতে তিনিও ভীষণই মর্মাহত। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী সহ বাকি মন্ত্রীরাও খোঁজ খবর নেন’।
মানুষের সন্তান হারানো মা’এর মতই মন খারাপ বাঘ মা শীলার। রোজই তিন শাবকের সঙ্গে খেলতে দেখা গেলেও, মঙ্গলবার সকাল থেকে ইকাকে দেখতে না পেয়ে খানিকটা আনমনাই ছিল শিলা। ইকা মারা যাবার পর থেকেই ক্রলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে নজর রাখা হচ্ছে শীলাকে। যাতে, ইকাকে না পেয়ে রাগে শিলা কিছু করে না বসে, সেইসব পর্যবেক্ষন করার জন্য।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত শীতকালিন পর্যটন মরসুমে সাফারি পার্কের এই মিষ্টি শাবকের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই পার্ক কর্মীদের পাশাপাশি পর্যটকদেরও মন খারাপ।