বাবরি-র পর জ্ঞানবাপি, ‘মন্দির ওহি বনেগা’। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতে গড়া; উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর ঐতিহাসিক জ্ঞানবাপী মসজিদ সিল করে দেওয়া হল আদালতের নির্দেশে; আদালতের রায় না বেরোনো পর্যন্ত। বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি হয়েছিল মন্দির ধ্বংস করেই; প্রমাণ পেল আদালত। ভূগর্ভস্থ ঘর (তহ্খানা), ওজুখানা এবং আশপাশের এলাকা; সিল করে দিল উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
তথাকথিত জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। এছাড়াও মসজিদ চত্বরের পশ্চিম দেওয়ালের দিকে; হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষও মিলেছে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ উপরিকাঠামোর উপর মসজিদ বানালেও; আদিকাল থেকে ওটা মন্দিরই ছিল। সত্যকে ধামাচাপা দিলেও, সত্য সামনে আসবেই; সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
১৬৬৯ সালে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দির (শিব মন্দির) ভেঙে; একটি অংশে মসজিদ তৈরি করেছিল। নাম দিয়েছিল জ্ঞানবাপী মসজিদ; সমীক্ষায় সেই প্রমাণও পাওয়া গেছে। পশ্চিমদিকের দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি এবং সংলগ্ন কুয়োতে; শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। মসজিদের পরতে পরতে হিন্দু সংস্কৃতির ছোঁয়া।
কাশী বা বারাণসীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দিরের গায়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ। ঐতিহাসিকদের মতে, একাধিকবার বিদেশি হানাদারদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দিরটি। ১৬৬৯ সালে মূল মন্দিরটি দখল করে, জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেন; মুঘল বাদশাহ ঔরঙ্গজেব। অষ্টাদশ শতকে হিন্দুদের আবেগকে মান্যতা দিয়ে, মসজিদের কাছেই আজকের বিশ্বনাথ মন্দিরটি; তৈরি করেন মারাঠা রাজ্য মালওয়া-র রানি অহল্যাবাই হোলকর।
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়েল বর্তমানে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ‘স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর’ নামক একটি সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছিল যে; মসজিদটি যে জমির উপরে তৈরি, সেখানে আসলে হিন্দু মন্দির ছিল। পাঁচজন মহিলাও দাবি করেন যে; মসজিদের ভিতরে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে। এরপরই গতবছর বারাণসী আদালতের তরফে; মসজিদের ভিডিয়োগ্রাফির নির্দেশ দেওয়া হয়।
বেনারস আদালত আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার উপর; এই সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়। সেই সমস্ত পদ্ধতিই এতদিন ধরে চলছিল। আদালতের নির্দেশে প্রায় আড়াই দিন ধরে চলে এই সমীক্ষা; মঙ্গলবার থেকেই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি শুরু হবে। জলাশয়ের ভিডিওগ্রাফির জন্য সমস্ত জল বের করে দেওয়া হয়; তখনই শিবলিঙ্গের উপস্থিতি ধরা পড়ে বলে দাবি। সেই তথ্য আদালতে জানান আইনজীবী বিষ্ণু জৈন; এরপরই ওই জলাশয়টি সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
আরেক আইনজীবী মদন মোহন আদালতকে জানিয়েছেন; শিবলিঙ্গটির উচ্চতা ১২ ফুট, ব্যাস ৮ ইঞ্চি। এরপরই আদালতের তরফে বারাণসীর জেলাশাসক কৌশলরাজ শর্মাকে; জলাশয়টিকে সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জলাশয়টি যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারেন; তার দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফ থেকে।
জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে; মা শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পুজো করার আবেদন জানিয়েছিলেন পাঁচজন মহিলা। গত একবছর ধরেই ওই অঞ্চলটি খুলে দেওয়া হয়েছে প্রার্থনা করার জন্য। কিন্তু ওই মহিলাদের আবেদন ছিল; তাঁরা চান ওই পুরনো মন্দির চত্বরের অন্যান্য দেববিগ্রহের সামনেও প্রার্থনা করতে। গত এপ্রিলে এই বিষয়ে একটি তদন্তের নির্দেশ দেয় বারাণসী আদালত; কয়েকদিন আগেই মসজিদের ভিতরে শুরু হয়েছিল ভিডিও সার্ভে।
সোমবার মসজিদের অন্দরের দুটি গম্বুজ, ভূগর্ভস্থ অংশ, পুকুর-সহ কয়েকটি এলাকা সিল করে; সিআরপিএফ মোতায়েনের নির্দেশ দেয় উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আদালত। বারাণসীর জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি, সিআরপিএফের একজন কমান্ডান্ট (সুপার) স্তরের আধিকারিককে; মসজিদ দখল নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন নগর-দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর।
এত গেল ইতিহাসের ঘটনা ও নিউজ। লড়াই চলছে আদালতে; বর্তমানে প্রশ্ন এখন চারটে।
১. এই ঔরঙ্গজেব-ও আমাদের মাধ্যমিকের বইয়ে উদারমনা, শিক্ষিত, ধর্মপ্রাণ শাসক; যে হিন্দুদের একের পর এক মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়ে গেছে। কংগ্রেসের লেখা ইতিহাস কি পরিবর্তন করা হবে?
২. ‘মন্দির ওহি বনেগা’; ফের ডাক দিয়েছে বিজেপির মন্দির কমিটিগুলো। ২০২৪ এর লোকসভা ভোট বৈতরণী পার করার বড় হাতিয়ার কি গেরুয়া শিবির পেয়ে গেল; ঠিক রামমন্দির ইস্যুর মত?
৩. বেকারত্ব, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া, দেশের ব্যাঙ্ক লুঠ করে দুর্নীতিবাজদের বিদেশে কেটে পরা; সব কি মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে ফের এই মন্দির ইস্যুতে?
৪. বিরোধীরা চুপ কেন ? বিরোধীরা কি বুঝতেই পারছেন না; পক্ষে বলবেন না বিরুদ্ধে। মন্দিরের পক্ষে বললে বিজেপিকে সমর্থন করা হবে; আর বিরুদ্ধে বললে মন্দিরের বিরুদ্ধেও যেতে হবে। কি করবে বুঝতে না পেরেই কি এই ইস্যুতে চুপ বিরোধীরা?
লিখলেন, মানব গুহ