কাটমানি কেলেঙ্কারি। আর কাটমানি নিয়েই তোলপাড় গোটা রাজ্য। কিন্তু বছরে কত টাকা কাটমানি তোলেন তৃণমূল নেতারা? জানেন কি হিসাব? হিসাব দেখলে চোখ কপালে উঠবে সবার। আর খাতায় কলমে অঙ্ক কষে; হিসাব দেখিয়ে দিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট (আই এস আই)-র; অর্থনীতির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত। কি লিখলেন অর্থনীতির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত? পড়ে নিন।
“আপনাদের কোনো ধারণা আছে; তৃণমূলীরা বছরে বাংলা থেকে কত কাটমানি খায়? আনুমানিক হিসাব; এই চুরির অঙ্ক এবছরে কমপক্ষে ৩০০০০ কোটি টাকা। হাঁ ঠিক দেখছেন। বছরে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা; যা বাংলার একবছরে শিক্ষা খাতে খরচার সমান।
বিষয়টির ব্যাপকতা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে আমাদের জানা দরকার; গত বছর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মোট মুনাফা ছিল ৪০০০০ কোটি টাকা। বাংলায় যে কোন সরকারী নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয়ের ১০-১৫ % কাটমানি হিসাবে যায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের পকেটে। ঠিক এর সমানুপাতে টাকা তৃণমূল নেতারা; বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, যেমন কন্যাশ্রী, রুপশ্রী অথবা গৃহনির্মাণ প্রকল্প থেকে সরিয়েছে।
২০১৯-২০ আর্থিকবর্ষে; বাংলার প্রস্তাবিত বাজেট ব্যয় ২লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দায় (পেনশন, বেতন এবং সুদপ্রদান); এবং ঋণ পরিশোধের যৌথ মিলিত পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৪০হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১ লক্ষ কোটি টাকার; বেশিরভাগই খরচা ধরা হয়েছে পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন প্রকল্প নির্মাণ এবং বিভিন্নভাবে ভর্তুকি প্রদানে।
এই সমস্ত কিছুই কাটমানির আওতায় পড়ে; এবং এগুলির থেকে কাটমানি নেওয়া হয়। এবছর নির্মাণ ও মেরামতি প্রকল্প এবং সাধারণ ভর্তুকি খাতে; আনুমানিক বরাদ্দ ৪০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আমরা যদি ভালো মনে ধরেও নি যে; অন্য কোথাও কাটমানি নেওয়া হবে না; তবুও কমপক্ষে ধরলে ৫০০০ কোটি টাকা শুধু এখান থেকেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তার পরিমাণ ১৫০০০ কোটি টাকা পর্যন্তও হতে পারে।
এর সাথে যোগ করুন সিন্ডিকেট রাজের ফলে; বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে ৩০% থেকে ৪০ % খরচা বৃদ্ধি। বেসরকারী নির্মাণ প্রকল্পগুলি; বাংলার গড় রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিএসডিপি)-র ১০% উৎপন্ন করে। এবং বেসরকারী নির্মাণ ক্ষেত্রের; প্রায় অর্ধেক অংশে এই অন্যায় জুলুমবাজির জন্য; সোজা হিসাবে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা; তৃণমূল নেতাদের পকেটে যায় বছরে।
শেষে যোগ করুন চাকরি দেওয়ার নাম করে এবং তা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে; একবারে মোটা টাকা নেওয়া। প্রভাব খাটিয়ে কোন কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের উপর ‘জরিমানা’ চাপিয়ে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিক্সাওয়ালা এবং অটোচালকের কাছ থেকে; প্রতিদিন তোলার নামে কমপক্ষে বছরে আরও ৫হাজার কোটি টাকা।
এবারে দেখুন, কম করে ধরেও এই কাটমানির আনুমানিক হিসাব; বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা কিভাবে মিলে যাচ্ছে। এই অঙ্ক বাংলার প্রস্তাবিত মোট আয়ের ২% এবং গোটা শিক্ষা বাজেটে মোট বরাদ্দের সমান”।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন; গরিব ও গৃহহীনদের সরকারি বাড়ি প্রকল্পে ৩০০০০ টাকা করে কাটমানি নেওয়া হয়েছে। আবার মমতার সরকারি হিসাবে; রাজ্যে ৪০ লাখ এরকম বাড়ি তৈরি হয়েছে। সেই সোজা হিসাবেই; এই কাটমানিরই পরিমাণ দাঁড়াবে ১২০০০ কোটি টাকা।
তাই, রাজ্যের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলও অনেকটাই; এই কাটমানির হিসাবে একমত। গত বছর মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের; মোট মুনাফা ছিল ৪০০০০ কোটি টাকা। আর তৃণমূলের কাটমানির পরিমাণ বছরে ৩০০০০ কোটি টাকা। তৃণমূল নেতাদের ফুলে ফেঁপে ওঠার ব্যাপারটা; এই হিসাব দেখেই; অনেকটাই আন্দাজ করা যায়। তবে এই কাটমানির হিসাব; উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের বক্তব্য; অনেকেই এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পরেছেন।