The News বাংলা: লড়াইটা ছিল দূর্নীতি, অপরাধজগৎ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের লড়াই। এখন লড়াইটা নিজেদের মধ্যেই। সিবিআই বনাম সিবিআই। আর এতেই হাস্যরসে ডুবে আছেন সাধারণ মানুষ। আইন, বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনের প্রতি যেটুকু বিশ্বাস ছিল তাও প্রায় শেষ।
যে লড়াই ছিল সিবিআইয়ের অভ্যন্তরে, এ বার তা ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়াতেও। দেশের সেরা গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়ে শুরু হয়েছে কমেডি সার্কাস। ভরসা ও বিশ্বাস যেটুকু ছিল তাও এখন প্রায় শেষ।
সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার নামে সিবিআই যে এফআইআর করেছে, তা ছড়িয়ে পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকী, সতীশ সানা নামে যে ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এফআইআর, তাঁর ৬ পাতার সেই অভিযোগও চলে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সানা এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত।
লড়াইটা মূলত সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অবসর নেওয়ার কথা অলোক বার্মার। তারপরেই ডিরেক্টর হওয়ার কথা রাকেশ আস্থানার। আস্থানা শিবিরের অভিযোগ, আস্থানা যাতে ডিরেক্টর না হতে পারেন তার জন্য এই এফআইআর করানো হয়েছে আলোক বার্মার নির্দেশে।
সিবিআইয়ের অফিসারেরাও কার্যত দু’টি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, তাঁদেরই কেউ অভ্যন্তরীণ নথি বাইরে ছড়াচ্ছেন। যেমন অলোক বর্মার শিবির, আস্থানার বিরুদ্ধে সানার অভিযোগ প্রকাশ করে দিয়েছেন, তেমনই আস্থানা ঘনিষ্ঠরাও পাল্টা অভিযোগ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু যেই করুন, সিবিআইয়ের গোপন নথি এইভাবে সাধারণ মানুষের হাতে চলে আসায় সিবিআইয়ের উপর ভরসা উঠছে তাদের। তার চেয়েও বড় কথা, যাদের কাজ দুর্নীতি ও ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাদের বিরুদ্ধেই কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এখানেই বিশ্বাস ও ভরসা দুটোই হারাচ্ছে সিবিআইয়ের মত প্রতিষ্ঠান।
অলোক ও রাকেশের ঝগড়া মেটাতে দুজনকেই ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে সেই আলোচনায় যে ফল হয়নি তা জলের মত পরিষ্কার। এবার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছেন মোদি। দুই কর্তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে বিজেপি সরকার বলেছে, সংস্থার ঐক্য ধরে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।
এরই মধ্যে নতুন সিবিআই প্রধান নাগেশ্বর রাও-এর বিরুদ্ধেও আপত্তি উঠেছে। ‘অফিসার’ নাগেশ্বর রাওয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ‘ডাইরেক্টর’ অলোক ভার্মার কাছে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি ওই সব অভিযোগের তদন্ত শুরু করার উদ্যোগও নিয়েছিলেন ভার্মা। আর সেই ব্যক্তিই এখন হয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সিবিআই প্রধান !
অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনাকাটায় দুর্নীতির বিষয়ে নথিপত্র সংগ্রহ করছিলেন অলোক ভার্মা। আর সেই কারণেই তাঁকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দিল মোদী সরকার। রাকেশ আস্থানাকে নরেন্দ্র মোদীর ‘নয়নের মণি’ অভিহিত করে রাহুল আরও বলেছেন, ভারত ও ভারতের সংবিধান এখন বিপদাপন্ন।
বিজেপি অবশ্য দলীয়ভাবে প্রকাশ্যে কোনো পক্ষ নেয়নি। এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি বলেছেন, “এখানে দুটি প্রতিবেদন আছে। একটি পরিচালকের বিরুদ্ধে, আবার আরেকটি বিশেষ পরিচালকের বিরুদ্ধে। আমরা চাই, সিবিআইয়ের মতো সংস্থার ওপর জনগণের বিশ্বাস যেন অটুট থাকে। তাই, দুজনকেই সরিয়ে দেওয়া হল”।
তবে সরকার সরিয়ে দিলেও দমে যাওয়ার পাত্র নন অলোক ভার্মা। পদ ফিরে পেতে বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেছেন তিনি। মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, সব তদন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে না যাওয়াতেই আজ তাঁর এই দশা।
আগামী শুক্রবার এই পিটিশনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। যদি শুনানির পর আদালত অলোকের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত দেন, তবে ফের বেকায়দায় পড়বেন নরেন্দ্র মোদী। ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ আর হবে না। উল্টে মোদী সরকারের ভাবমূর্তি ‘ড্যামেজ’ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে! সব মিলিয়ে সিবিআই বনাম সিবিআইয়ের লড়াইয়ে সমস্যায় দেশের সরকারও।
বছর কয়েক আগে বলিউডে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। নাম ছিল ‘স্পেশাল ২৬’। অক্ষয় কুমার-মনোজ বাজপেয়ি অভিনীত সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। সিনেমায় দেখানো হয়েছিল চোর-পুলিশের লুকোচুরি। প্রতারক অক্ষয়কে গ্রেপ্তার করার অভিযানে নেমেছিলেন সিবিআই কর্মকর্তা মনোজ।
ছবিতে একজন সৎ সিবিআই কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মনোজ, যিনি কিনা সব প্রলোভন দূরে ঠেলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর নকল সিবিআই কর্মকর্তা সেজেই প্রতারণা করতেন অক্ষয়। সেখানেও সৎ সিবিআইয়ের মুখে হারার কালি মাখিয়ে মানুষের কাছে হাসির খোরাক করা হয়েছিল সিবিআইকে।
এর এখন, বাস্তবেও হাসির খোরাক ভারতের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা। এমনিতেই দুর্নীতি আর কালোবাজারির শীর্ষে ভারত। আর এরপরে অন্যতম সেরা গোয়েন্দা সংস্থার এই হাল হলে, নিজেদের ভবিষ্যত চিন্তা করে প্রাণ খুলে হাসা ছাড়া কিই বা করার আছে ভারতবাসীর।