হাইকোর্টে বেকসুর খালাস; তিন রাজনৈতিক বন্দি পতিতপাবন হালদার, সন্তোষ দেবনাথ ও সুশীল রায়। ১৪ বছরেরও বেশি জেল খাটার পর! তাঁদের অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায়; শুক্রবার তাঁরা বেকসুর খালাস পান; কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। তাঁরা যদি নিরপরাধ হন; তাহলে ১৪ বছর গারদের আড়ালে থাকার জন্য; প্রশাসনের কোন পদাধিকারীর কেন শাস্তি হবে না? উঠে গেল প্রশ্ন। তবে এই প্রশ্ন করার জন্য; আর বেঁচেই নেই সুশীল রায়।
২০০৫ সালের ২১ শে মে হিন্দমোটর থেকে; গ্রেফতার করা পতিতপাবন হালদারকে। তিনি ছিলেন মাওবাদীদের প্রথম রাজ্য সম্পাদক। মাওবাদী রাজ্য কমিটির সদস্য সুশীল রায়ের সঙ্গেই; তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখার অভিযোগ ছিল।
২০০৫ সালেরই ৩০ শে মে বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখার অভিযোগেই; কলকাতার বড়বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় সন্তোষ দেবনাথকে। এঁদের তিনজনের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির আর্মস অ্যাক্ট ১২১, ১২১এ, ১২২, ১২৩, ১২৪এ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা হয় পুরুলিয়ার বেলপাহাড়ি থানার আন্ডারে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ এর ডিভিশন বেঞ্চ; অভিযুক্ত তিনজনকেই বেকসুর খালাস করে দেয়। এঁদের বিরুদ্ধে কোন মার্ডার চার্জ নেই। তাতেও ১৪ বছর জেল খাটার পর; তবেই মুক্তি তিন বাঙালির। ১২ বছর ধরে আদালতে বুক বাইন্ডিং হয়নি বলেই; দীর্ঘদিন শুনানিই হয়নি এই মামলায়।
২০০৬ সালের ১৭ই মার্চ ঝাড়গ্রাম আদালত; এই মামলায় তিনজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়। তারপর থেকেই তাঁদের ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেল। ১৪ বছর পর; বেকসুর খালাস পেলেন রাজনৈতিক বন্দি পতিতপাবন হালদার, সন্তোষ দেবনাথ ও সুশীল রায়। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪-র ১৮ জুন; হাসপাতালে মৃত্যু হয় সুশীল রায়ের।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে; এখন তাঁরা নিরাপরাধ। তবু দীর্ঘ ১৪ বছর কাটাতে হয়েছে জেলের অন্ধকারে। একজন তো মাথায় দায় নিয়েই; চলে গেছেন পরপারে। এর দায় কাদের? এর পিছনে প্রশাসন বা আদালতের যে সব মানুষ দায়ি; তাদের কেন শাস্তি হবে না?
এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, “পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের কিছু কর্মীর গাফিলতিতে; বিনাবিচারে এইভাবেই বছরের পর বছর; জেল খাটছেন আরও অনেক রাজনৈতিক বন্দী”।