The News বাংলা: মা কালী হলেন একজন হিন্দু দেবী। তাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় কালীপূজা করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে, কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত দশজন প্রধান তান্ত্রিক দেবীর প্রথম। কিন্তু মা কালীর পায়ের নীচে শিব কেন ?
শাক্ত মতে, কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। এগুলি হল: দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, শ্মশানকালী, মহাকালী, রক্ষাকালী ইত্যাদি।
কিন্তু, মা কালীর পদতলে শিব কেন?
পুরাণে আছে, অসুর কূলের আক্রমনের ফলে সঙ্কটে পরে দেবতারা। তাঁদের তাঁড়িয়ে স্বর্গরাজ্যের অধিকার নেওয়ার চেষ্টা করেছিল অসুররা। অসুরদের প্রধান ছিলেন রক্তবীজ। ব্রহ্মার বরে রক্তবীজের একফোঁটা রক্ত থেকে জন্ম নিচ্ছিল আরো হাজার রক্তবীজ।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সিদ্ধপুরুষ ‘জয় বাবা লোকনাথ’ এর অজানা কাহিনী
একফোঁটা রক্ত ভূমিতে পড়লেই আর্বিভূত হচ্ছিল অসুর বাহিনী। অসুর নিধন করতে অবর্তীণ হোন দেবী দূর্গা। সব অসুর নিহত হলেও বেঁচে থাকেন রক্তবীজ। কিন্তু সেই যুদ্ধেও ব্রহ্মার বরে অপরাজেয় থাকেন রক্তবীজ। এই অবস্থায় দূর্গার ভীষণ ক্রোধে তাঁর দুই ভ্রু এর মাঝখান থেকে জন্ম নেন দেবী কালী।
কালীর ভয়াল দৃষ্টিতেই নিহত হয় বহু অসুর। এরপর দেবীর চিৎকারে প্রাণহানি হয় আরও অনেক অসুরের। রক্তবরণ লকলকে জিব বের করে কালী গ্রাস করে নেন হাতিও ঘোড়া সওয়ার অসুর বাহিনীকে। তারপরেও টিকে থাকেন রক্তবীজ। এই অবস্থায় দেবী কালী তাঁকে অস্ত্রে বিদ্ধ করে তাঁর রক্ত পান করতে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ নরকঙ্কালের খুলি সাজিয়ে জাগ্রত মহাশ্মশান কালীর পুজো
রক্তবীজের একফোঁটা রক্তও যাতে ভূমিতে না পড়ে সেই কারনে রক্তবীজের দেহ শূণ্যে তুলে নেন দেবী কালী। এই অবস্থায় রক্তবীজের দেহের সবটুকু রক্তপান করেন দেবী কালী। শেষ বিন্দু রক্ত পান করার পর নিথর রক্তশূণ্য রক্তবীজের দেহ ছুড়ে ফেলে দেন মাতা কালী।
আকণ্ঠ রক্ত পান করে বিজয়নৃত্য শুরু করেন মাতা কালী। নিহত অসুরের হাত দিয়ে তিনি কোমড়বন্ধনী এবং মাথা দিয়ে মালিকা বানিয়ে পরিধান করেন। কালীর উন্মাদিনী নাচ দেখে প্রমোদ গোনেন দেবতারা। কারণ এই নাচে আসন্ন হচ্ছিল সৃষ্টির লয়।
পৃথিবীকে ধ্বংশের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য দেবতারা শিবের শরণাগত হলেন। শিবের একাধিক মৌখিক অনুরোধ শুনতে পাননি মাতা কালী। কারন তখন তিনি উন্মাদিনী মত নেচে চলেছেন। আর কোনও উপায় না দেখে নৃত্যরতা কালীর পায়ের তলায় নিজেকে ছুঁড়ে দিলেন মহাদেব।
এরপরই চৈতন্য হয় মা কালীর। থেমে যায় নাচ। পায়ের নিচে স্বামীকে দেখে লজ্জায় জিভ কাটেন দেবী কালী। এই পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বন করেই যুগ যুগ ধরেই পূজিত হয়ে আসছে মায়ের এই প্রতিমা। দূর্গার পাশে শিবকে নানা ভাবে দেথা যায়।
আরও পড়ুনঃ অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা
তার মধ্যে হরগৌরী রূপ বিখ্যাত। মাতা কালীর সঙ্গে শিব থাকলে তাঁর জায়গা সবসময় দেবীর পদযুগলের নিচে। এই বিগ্রহে কালীর ডান পা যদি এগিয়ে থাকে তবে তিনি দক্ষিণা কালী। আবার বাম পা এগিয়ে থাকলে তা মায়ের বামা ক্ষ্যাপা রূপ।