১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হামলায় কেঁপে উঠেছিল জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা। এই ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শহিদ হন ৪৪জন সিআরপিএফ জওয়ান। ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশবাসী। এই ক্ষোভের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। আর সেই শোকের মহলেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করে মানুষের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতের রাজনীতিবিদরা।
আরও পড়ুনঃ বাংলায় যুবরাজ হবার পথে পার্থ চট্টোপাধ্যায়
কী বিচিত্র এই দেশ! কী বিচিত্র দেশের রাজনীতিবিদ! গত বৃহস্পতিবার থেকে ৪৪ জওয়ানের ভয়াবহ মৃত্যুর শোক পালন করছে এই দেশ। নৃশংস ও ভয়ানক সেই জঙ্গি হানায় কোনও মায়ের কোল খালি হয়েছে, কোনও স্ত্রী হারিয়েছেন তাঁর প্রিয়তমকে। কোনও সন্তান হয়ত এখনও বুঝে উঠতে পারেনি কী ঘটে গিয়েছে তার জীবনে। অথচ সেই শহিদ জওয়ানের অন্তিমযাত্রায় গাড়ি থেকে হাসি মুখে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ।
এই নিয়েই শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক। গত শনিবার উন্নাওয়ের রাস্তায় শহিদ জওয়ান অজিত কুমারের মরদেহ নিয়ে অন্তিমযাত্রায় সামিল হন হাজার হাজার মানুষ। সেই যাত্রাতেই একটি গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে হাসি মুখে সকলকে হাত নাড়তে দেখা যায় মহারাজকে। ঠিক যেন ভোটের প্রচারে বেড়িয়েছেন। তফাৎ একটাই, এবার শুধু সঙ্গে একজন শহিদ জওয়ানের পার্থিব শরীর।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তান নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত রিলায়েন্সের মুকেশ আম্বানির
শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়লেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আলফন্স কান্নাথনমও। পুলওয়ামায় শহিদদের মধ্যে আছেন কেরলের এক জওয়ান বসন্ত কুমার। শনিবার ওই জওয়ানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কেরলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আলফন্স কান্নাথনম। জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানোর সময় বিজেপি নেতাকে শহিদ জওয়ানের দেহের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয় সেই ছবি তুলে তিনি নিজের ফেসবুকে পোস্টও করেন।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, বসন্ত কুমারের মতো বীর জওয়ানের বলিদানের জন্যই দেশ নিরাপদে রয়েছে। সীমান্তে থেকে তারা দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দেয়। ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতেই বিতর্ক বাধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল হওয়ার পরেই সব মহল থেকে নিন্দার ঝড় উঠতে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি নেতাকে আক্রমণ করে সবাই। বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হন মন্ত্রী। শহিদ জওয়ানের মৃতদেহের সামনেও কেউ সেলফি তুলতে পারে তা তিনিই দেখিয়ে দিলেন। তবে সেই পোস্টটি ভাইরাল হতেই কিছুক্ষণের মধ্যে তা তুলে নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো জুতো পরেই শ্রদ্ধা জানালেন শহিদদের। পালাম বিমানবন্দরে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জুতোটুকুও খোলার প্রয়োজন বোধ করলেন না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এটাও জানেন না, যে ভারতে জুতো পরে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান হয় না। ছবি ভাইরাল হতেই দেশ জুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। যদিও আর্মি অফিসাররা কিন্তু জুতো পড়েই শেষ শ্রদ্ধা জানান, সেখানে জুতো খোলার কোন রেওয়াজ নেই।
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় সেনার বদলা, খতম পুলওয়ামা কাণ্ডে জড়িত দুই পাক জঙ্গি
শুধুই কি বিজেপি নেতারা? শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানোর মঞ্চে নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন রাহুল গান্ধী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই ছবিও। যা নিয়ে দেশ জুড়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছেন সেনাদের প্রতি রাহুল গান্ধীর মনোভাব নিয়ে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দিল্লি বিমানবন্দরে শহীদ জওয়ানদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একমনে মোবাইল চেক করছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
আর সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই ওই ছবিকে হাতিয়ার করেই কংগ্রেস সভাপতিকে তুলোধোনা করছে বিরোধী শিবির। বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়াল রাহুল গান্ধীর সেই ছবি তুলে ধরে টুইটও করেছেন। কংগ্রেস সভাপতির সেই ছবি ঝড়ের মত ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিযায়। কেউ বলছে, এই ছবিই প্রমাণ করে দেয় দেশ তথা সেনার প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই কংগ্রেসের। কেউ কেউ আবার এই ঘটনার জন্য কংগ্রেস সভাপতির শাস্তিও দাবি করছে।
আরও পড়ুনঃ সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী হানা, পাক জঙ্গিদের টার্গেটে এবার পাকিস্তানই
শহিদ জওয়ানদের মৃত্যু নিয়ে চলছে চরম রাজনীতি। চলছে কাদা ছোড়াছুঁড়ি। রবিবার অসমের লাখিমপুরে এক জনসভা থেকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দাবি করলেন, পুলওয়ামায় ৪০জন সিআরপিএফ জওয়ানের আত্মবলিদান বৃথা যাবে না। কোনও মূল্যেই পাকিস্তানি জঙ্গিদের রেয়াত করা হবে না। কারণ কেন্দ্রে আছে বিজেপি সরকার। আগের কংগ্রেস সরকারের মতো এই সরকার আপোষের রাজনীতি করে না। লাখিমপুরে যুব মোর্চার সভায় কিন্তু পুলওয়ামার ঘটনা টেনেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ঠুকলেন আগের কংগ্রেস সরকারকে।
আরও পড়ুনঃ কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নিল মোদী সরকার
এদিকে নরেন্দ্র মোদীও ঘটনার পর থেকেই একের পর এক জনসভা করে যাচ্ছেন আর ভোট প্রচারের পাশাপাশি পাকিস্তানকে হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন। মোদীর উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আবার মমতাও দেশবাসীর মনোভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে, বিজেপি বিরোধিতা করার জন্যই বলেছেন তদন্তের আগেই পাকিস্তানকে দোষী বলা ঠিক নয়। যখন পাকিস্তানে বসে মাসুদ আজাহারের জইশ ই মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে, তখনও পাকিস্তানকে ‘ক্লিন চিট’ মমতার।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার অনুমতি চাইল দেশের সেনা
একের পর জওয়ান মরলেও বামেরা শান্তি চায়। তারাও নেমেছে বিজেপি বিরোধিতায়। শিবসেনা আবার বালাসাহেব থ্যাকারের মত অনুযায়ী সব বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি মুসলিমকেই দেশ থেকে ভাগাতে চায়। বিরোধীদের অনেকেই নেমে পরেছেন বিজেপি বিরোধিতায়। ভোট সামনে বলে কথা! আবার বিজেপি সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করছে কংগ্রেসকে।
ভারত পাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বললেই তাকে হেনস্থা করতে গোটা দেশেই সক্রিয় গেরুয়া বাহিনী। সেনাদের শহিদ বলা যাবে কিনা বা কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় বসা যাবে কিনা, সেই নিয়ে আবার ব্যস্ত কংগ্রেস ও বাম নেতারা। সব মিলিয়ে সুবিধাবাদীরা যে যার জায়গাতেই ঠিক দাঁড়িয়ে। শুধু ৪ দিনে অকালে ঝরে গেল দেশের প্রায় ৫০জন সেনা। আর সবকিছু যেমন ছিল তেমনই আছে। মেরা ভারত মহান। ধন্য ভারত, ধন্য ভারতের রাজনীতিবিদ।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
আরও পড়ুনঃ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলা হবে জানিয়েছিলেন কাশ্মীর পুলিশের আধিকারিক
আরও পড়ুনঃ পাক জঙ্গিদের খুঁজে বের করে মারতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিল মোদী সরকার
আরও পড়ুনঃ দেশ জুড়ে বদলার দাবি, কাউকে ছাড়া হবে না জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।