The News বাংলা, কলকাতাঃ মাঝে মাঝে সবারই ইচ্ছে করে সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিতে। ইচ্ছে করে, কাছে কিংবা দূরে কোথাও ঘুরে আসতে। কাছের বা দূরের যেখানেই আপনি ভ্রমণ করুন না কেন, আপনার ভ্রমণ সুন্দর এবং ঝামেলা মুক্ত রাখতে আপনাকে আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। একই সঙ্গে জানতে হবে নানা তথ্য সম্পর্কে।
আপনাদের ভ্রমণকে আরও সুন্দর করে তুলতে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখুনঃ
পোশাক নির্বাচনঃ
ভ্রমনের ধরন এবং আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করুন। তবে এমনটা যেন না হয়, পোশাকের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আবার প্রয়োজনীয় জিনিসই নিতে পারছেন না। জুতোর ব্যাপারে বাড়তি মনোযোগ দিন। আরামদায়ক কেডস হলে ভালো হয়। মেয়েরা হিল জুতা ব্যবহার না করলেই ভালো।
প্যাকিং-প্রসেসঃ
ভ্রমণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো প্যাকিং-প্রসেস। এ ক্ষেত্রে সঠিক ব্যাগ নিবার্চন করতে পরিচয় দিতে হবে খানিকটা বুদ্ধিমত্তার। কোথায় যাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পরিমাণ কেমন হতে পারে। আর এজন্য কী ধরনের ব্যাগ নিলে ভালো সেটাও বুঝতে হবে। অযথা বড় ব্যাগ নিলে বিভিন্ন ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ যৌনতা কেন্দ্রিক বিনোদনের জন্য বিশ্বের সেরা ২০ টি ঠিকানা
সুতরাং সব থেকে ভালো হলো সহজে বহন করা যায় এমন ব্যাগ নেওয়া। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনীয় জিনিস যেন বাদ না যায়। স্টাইল,সুবিধা,ব্যক্তিত্ব ও বয়স অনুযায়ী বেছে নিতে হবে সঠিক ব্যাগ। বেশি দিনের জন্য বেড়াতে গেলে সাধারণ ট্রাভেল ব্যাগের চেয়ে বড় ট্রলি ব্যাগই ভলো। বড় লাগেজ বিমানবন্দরে চেকিং করতে প্রচুর অর্থ খরচ হতে পারে। সুতরাং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগ বহন থেকে সাবধান।
কেমন ব্যাগ কিনবেনঃ
ট্রাভেল ব্যাগ কেনার ক্ষেত্রে দরকার একটু বাড়তি সচেতনতা। কেনার সময় দেখে নিন ব্যাগটি জলরোধক কি না। জলরোধক ব্যাগে কাপড় ও দরকারি জিনিস যত্নে থাকবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাগের কাপড়টিও দেখে কিনতে হবে। কমফোর্ট বা প্যারাসুট কাপড়গুলো বেশ ভালো।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বে আলোড়ন ফেলে চুমু খেতে রাজি সোফিয়া
প্রাযুক্তিক প্রস্তুতিঃ
ব্যক্তিগত,পারিবারিক বা অফিসিয়াল যে ভ্রমণ হোক, এমন কিছু জিনিস থাকে সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা সবার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন সেলফোন,ক্যামেরা,হেডফোন, আইপড, ল্যাপটপ, ইলেক্ট্রিক রেজার ইত্যাদি। মনে করে সব গুছিয়ে নিন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ক্যামেরা,ল্যাপটপ রক্ষার জন্য জলনিরোধক কভার সাথে নিন।
মোবাইল, ল্যাপটপ বা ক্যামেরার চার্জার নিতে ভুলবেন না। পাওয়ার অ্যাডাপ্টার সঙ্গে রাখুন। যে কোন জায়গাতে ব্যবহার করা যায় এমন অ্যাডাপ্টার সাথে রাখুন। মোবাইলের জন্য কিছু বাড়তি সতর্কতামূলক এক্সট্রা ব্যাটারি সঙ্গে রাখতে পারেন।
টুকিটাকি প্রস্তুতিঃ
পোশাক, ব্যাগ, ইলেক্ট্রোনিক সামগ্রী নেওয়া শেষ। এবার বের হওয়ার পালা। না ভ্রমণের প্রস্তুতি কিছুটা বাকি রয়ে গেছে এখনও। টুকিটাকি কিছু জিনিস বাকি রয়ে গেছে যেগুলো ভ্রমণে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করতে পারে। যেমন টুথপেস্ট, ব্রাশ, ফেইস ওয়াশ, ক্রিম, লোশন, বডি স্প্রে, হেয়ার ক্রিম, এক জোড়া বাড়তি স্যান্ডেল, বাস অথবা ট্রেন জার্নিতে পড়ার জন্য গল্পের বই-ম্যাগাজিন। মশা নিধনকারী স্প্রে বা এরোসলও সাথে রাখুন।
আরও পড়ুনঃ ‘তাজমহল’ গড়া শেষ না করেই মারা গেলেন ‘শাহজাহান’
যে বিষয়গুলো ভ্রমণকে সহজতর করবেঃ
১। যে কোন দেশে ভ্রমণের জন্য লোকাল কারেন্সি লাগে যেটা এয়ারপোর্ট বা হোটেল থেকে নিতে হয়। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হোন এবং লোকাল কারেন্সি পেতে কত কি ফি লাগে সেটা সম্পর্কেও ধারণা রাখুন।
২। আপনি যে ব্যাংকে লেনদেন করবেন অথবা যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, সেই ব্যাংক অথবা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে আপনার ভ্রমণ বিষয়ে জানিয়ে রাখুন। এতে তারা সন্দেহপ্রবণ হবে না, এমনকি এটিএম কার্ড বাজেয়াপ্ত করারও সম্ভাবনা থাকবে না।
৩। ওয়াই-ফাই কানেকশন থাকলে চলাফেরা-নির্দেশক স্কীনশট রাখুন। আপনি কিভাবে,কোথায় ঘুরছেন সেসবের স্কীনশট রাখা থাকলে আপনি আপনার মূল্যবান ডাটা ব্যবহার না করেই ভ্রমণের খুঁটিনাটি সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
৪। ওয়ালপেপার সিটি গাইড কিনে রাখুন। ওয়ালপেপার সিটি গাইডে খুব যত্ন সহকারে যেকোন শহরের দর্শনীয় স্থান, রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকে। এই গাইডবুক বহনে আরামদায়ক এবং এটি দেখতেও সুন্দর। গাইড অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। প্রতিনিয়ত গাইড টিপস পাবেন এই অ্যাপ থেকে।
৫। একাধিক শহরে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে এয়ারলাইন্সের টিকেট অগ্রিম বুক করে রাখুন। কায়েক এবং স্কাইস্ক্যানার সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে টিকেটের দাম সম্পর্কেও জানতে পারবেন। ব্যাগ চেকিং এর যে খরচ তা অনলাইনে অ্যাডভান্সে পে করলে খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব।
৬। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা প্ল্যান নিয়ে রাখুন। প্রিপেইড প্ল্যান ব্যতীত ডাটা রোমিং করলে প্রচুর বিল আসার সম্ভাবণা প্রবল। অবশ্যই ভ্রমণের সময় আপনি কত ডাটা ব্যবহার করলেন, কত উদ্ধৃত থাকলো সেটা খেয়াল করুন। বাড়িতে ফিরেই ইন্টারন্যাশনাল ডাটা প্ল্যান বন্ধ করুন তা না হলে আপনার প্রতি মাসে ডাটা প্ল্যান বাবদ অযথা খরচ হবে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পের বেশ কিছু অজানা কাহিনী
স্বাস্থ্য পরামর্শঃ
১। ‘মোশন সিকনেস’ভ্রমনের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। এতে বমি ভাব হয়। সেই সাথে মাথা ঘোরা, মাথা ধরা প্রভৃতি। মোশন সিকনেস থেকে বাঁচার উপায় হলো, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা। বড় বড় শ্বাস নিতে হবে। প্রয়োজন হলে চোখ বুজে থাকুন। বই পড়বেন না বা স্থির কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। আদা চিবাতে পারেন।
২। ভ্রমণের খুব কমন একটি সমস্যা‘ট্রাভেলার্স ডায়রিয়া’। বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন অল্প সিদ্ধ মাংস, সি ফুড, অপাস্তরিত দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাবার, জল ইত্যাদির মাধ্যমে এটি ছড়ায়। তাই এগুলোর ব্যাপারে সাবধান থাকুন।হাতের কাছে বিশুদ্ধ জলের বোতল রাখুন।
৩। ভ্রমনে এসিডিটি হতে পারে। আগে থেকেই অ্যাসিডিটির ওষুধ সাথে রাখুন। মাথা ব্যথার ওষুধ অবশ্যই সাথে রাখুন।
আরও পড়ুনঃ ধর্মান্তরকরণের উদ্দেশ্যে এসে আদিবাসীদের হাতে নিহত মার্কিন খ্রীষ্টান মিশনারী
৪। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরাবিশেষ সর্তক থাকবেন। ভ্রমনের দু’একদিন আগে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের চেম্বার ঘুরে আসুন। ডায়বেটিসের রোগীদের জন্যও একই পরামর্শ। একটা ট্রাভেল কিট বানিয়ে নিতে পারেন যেখানে থাকবে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ, গজ,ব্যান্ডেজ অ্যান্টিসেপটিক মলম ইত্যাদি।
সতর্কতাঃ
১। মানি ব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড সাবধানে রাখবেন। সব টাকা মানিব্যাগে না রেখে কিছু টাকা অন্য জায়গায় রাখবেন। একটি কার্ডে আপনার ঠিকানা লিখে রাখবেন। ব্যাগ হারিয়ে গেলে কেউ পেয়ে থাকলে ফের পাবার সম্ভাবনা থাকবে।
২। সন্ধ্যার পর অথবা বেশি রাত পর্যন্ত হোটেলের বাইরে অবস্থান করবেন না। বিশেষ করে পরিবার নিয়ে ভ্রমন করতে গেলে । অবশ্যই শিশুদের দিকে লক্ষ্য রাখুন। একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও মানসম্মত হোটেলে থাকার চেষ্টা করবেন।