পুলওয়ামা হামলা থেকে শুরু করে বায়ুসেনা কমান্ডার অভিনন্দনকে প্রত্যার্পন এবং শেষ মুহুর্তেও সীমান্তে গোলাগুলিতে ৫জন জওয়ানের শহিদ হওয়া, ঘটনাগুলো পরপর পর্যবেক্ষণ করলে পাকিস্তানের মুখ ও মুখোশ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকগুলো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনঃ কাশ্মীরে লড়ছে মরছে সেনা আর তাঁদের নিয়ে চলছে মুনাফার মারপিট
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪৯ জন জওয়ানের মৃত্যুর পর ঘটনার দায় স্বীকার করে জইশ ই মহম্মদ জঙ্গিগোষ্ঠী। তারপরেই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে দেশবাসী। প্রত্যাঘাতের দাবী ওঠে দেশজুড়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফেও চাপ সৃষ্টি হতে থাকে কেন্দ্রের ওপর।
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় বায়ুসেনা অভিনন্দনের স্ত্রী সাজিয়ে নোংরা রাজনীতি মোদী বিরোধীদের
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে পাকিস্তানের মূল ভূখন্ড বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়। বায়ুসেনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাসুদ আজহারের তিন আত্মীয় সহ কমপক্ষে ৩০০-৩৫০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই সারাদেশ জুড়ে আনন্দ উৎসবের চেহারা নেয়। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও পাকিস্তানকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপে ছেয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ ভারতের ভয়ে কাঁপছে পাকিস্তান, অভিনন্দনকে বিমানে আনার প্রস্তাব নাকচ
২৭শে ফেব্রুয়ারি, ঠিক ১ দিনের মধ্যে অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে যায়। সীমান্তে জারি হয় অঘোষিত যুদ্ধ। ভারতের ওপর আঘাত হানার জন্য ইমরান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে থাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। সীমান্তে যুদ্ধের আবহ তৈরি হলেও যুদ্ধের বাস্তবিকতা পাকিস্তানের ভালোই জানা ছিল।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানে ভারতীয় সেনার সাহস ও বীরত্ব দেখিয়ে দেশে ফিরলেন অভিনন্দন
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা পাকিস্তানের পক্ষে যে যুদ্ধ বেশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তা পাকিস্তান বিলক্ষন জানে। তাছাড়া ফুল ফর্ম যুদ্ধ হলেও ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের ক্ষতি বেশি হবে, তা পরিষ্কার হয়ে যায় দুদিন আগেই পারভেজ মোশারফের একটি বক্তব্য থেকে। এদিকে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থনও পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়। ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপে চীন ও সৌদি আরবও সরে দাঁড়ায় পাকিস্তানের পাশ থেকে।
আরও পড়ুনঃ বন্দি হয়েও ভারতীয় বায়ুসেনা অভিনন্দন এর সাহস দেখে কেঁপে গেল পাকিস্তান
এরই মধ্যে পাকিস্তান অপ্রত্যাশিতভাবেই মোক্ষম অস্ত্র পেয়ে যায়। পাক সীমানা লঙ্ঘন করে মিগ চালিয়ে নিয়ে পাক সেনার হাতে পাকড়াও হন বায়ুসেনা কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়াতে এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপ এড়াতে সাইকোলজিক্যাল ব্ল্যাকমেলের আশ্রয় নেয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের তরফে ৩টি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ যা হয়েছে তা ট্রেলার, আসল ফিল্ম এখনও বাকি বললেন নরেন্দ্র মোদী
প্রথম ভিডিওটিতে দেখা যায়, মারমুখি পাকিস্তানি জনতার হাত থেকে রক্তাক্ত অভিনন্দনকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পাক সেনা। অভিনন্দনের এই রক্তাক্ত ছবি দেখেই স্যোসাল মিডিয়ায় বহু মানুষ আঁতকে ওঠেন। বায়ুসেনা কমান্ডারের মুক্তির জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে থাকে।
আরও পড়ুনঃ যুদ্ধের উত্তেজনা ভারত পাক সীমান্তে নামল ট্যাঙ্ক, সমুদ্রে প্রস্তুত যুদ্ধজাহাজ
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই রক্তাক্ত ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে জেনেভা কনভেনশনের নিয়ম লংঘন করার অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, আর এখানেই পরিষ্কার হয়ে যায় পাকিস্তানের কৌশলগত পদ্ধতি ও অভিসন্ধি। আসলে রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করে ভারতবাসীর সাইকোলজিতে আঘাত করার চেষ্টা করে পাকিস্তান। তাতে সাড়াও মেলে।
আরও পড়ুনঃ বায়ুসেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে মমতার সন্দেহকে হাতিয়ার পাক মিডিয়ার
পরবর্তী ভিডিওটিতে পাকিস্তান এই কৌশলকে আরও বেশি কাজে লাগায়। ভিডিওতে দেখা যায়, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা অভিনন্দন সদর্পে পাকিস্তানি সেনার একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। পাকিস্তানে ঢোকার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাকে বলতে শোনা যায়, “স্যার, আই অ্যাম নট সাপোজ়ড টু টেল ইউ”। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভিডিও প্রকাশ করেই পাকিস্তান মূলত ভারতবাসীর মনস্তত্বের ওপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায়। অভিনন্দনের শৌর্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে যুদ্ধ পরিহার করে অভিনন্দনকে মুক্তির দাবি ওঠে লক্ষ লক্ষ ভারতীয়র তরফে।
আরও পড়ুনঃ যুদ্ধ লাগলে বাঁচতে সীমান্তে ১৪ হাজার বাঙ্কার নির্মাণ করছে ভারত
শেষ ভিডিওতে অভিনন্দনকে বলতে শোনা যায়, “পাকিস্তানি সেনা তার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেছে”। সত্যিই ভাল ব্যবহার হলে অভিনন্দনকে রক্তাক্ত করতে স্থানীয়দের প্ররোচনা দিয়ে আবার সেই রক্তাক্ত ভিডিও প্রকাশ করে ভারতীয়দের ইমোশন কাজে লাগানোর দরকার হত না। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিডিও প্রকাশের কৌশল পালন করে পাকিস্তান নিজেদের উদার ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছে। পাকিস্তানের ব্যবহারে বিগলিত কিছু ভারতীয় ইমরান খানকে কার্যত শান্তির বার্তাবাহক হিসেবেও তুলে ধরলেন।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানে ভারতের বিমানহানার সময় জন্ম নবজাতকের নাম মিরাজ
ভিডিওগুলো প্রকাশ করে ভারতীয়দের ক্ষোভে জল ঢেলে দিলেন ইমরান খান। আর ভারতের তরফের নিঃশর্তে অভিনন্দনকে মুক্তির দাবি তোলা হয় এবং কূটনৈতিক তরফেও প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়। ঢোক গিলতে হবে, এটা পাকিস্তানের জানাই ছিলো। তাই অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়ার আগে লোক দেখানো নাটকের আশ্রয় নেয় পাকিস্তান। তাতে নিজেদের অনেকটা ভালো মানুষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে তারা।
আরও পড়ুনঃ বাজপেয়ীর মত ভুল করেননি, পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করলেন মোদী
রাতারাতি পাকিস্তান কি তাহলে বদলে গেলো। সত্যিই কি তাই? হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহারকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া সহ পাকিস্তানের ছত্রছায়ায় গজিয়ে ওঠা ভারত বিরোধী সন্ত্রাসবাদী ঘাটি ধবংস করার দাবি বহুদিনের। উল্লেখ্য, পাকিস্তান কোনোদিনই ভারতের এই দাবিতে কর্নপাত করেনি। উলটে মুখে শান্তির কথা বললেও সীমান্তে তাদের লালিত জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা ছায়াযুদ্ধ বরাবর চালিয়ে গেছে।
এমনকী যখন শান্তির আলোচনা চলছে, তখনও সীমান্তে জারি রয়েছে তুমুল সংঘর্ষ। গত রাতেও জঙ্গিহানায় কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে ৫ জওয়ানের। অতএব, কোনো আলোচনাই যে আখেরে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে সহজ হবে না, তা বুঝতে আর বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন পড়ে না। আর এতেই পাকিস্তানের মুখ ও মুখোশের তফাৎ বুঝতে শুরু করেছেন দেশবাসী।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।