শতদ্রু কর,The News বাংলা, নয়াদিল্লিঃ কৃষক র্যালিকে ঢাল করেই এবার মোদী বিরোধী মঞ্চ গঠনের মরিয়া চেষ্টা বিরোধীদের। কৃষক র্যালির ভিড় ভরসা জুগিয়েছে মোদী বিরোধীদের। লোকসভা ভোটের আগে এটাকেই বিরোধী ঐক্যের তুরুপের তাস করতে চায় বিরোধীরা।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। আকারে ইঙ্গিতে তার প্রস্তুতি শুরু হলেও বিরোধীদের ঘর এখনও অগোছালো। বলার অপেক্ষা রাখে না আগামী নির্বাচনে সমস্ত বিরোধী দলগুলোর একটাই লক্ষ্য, যেনতেন প্রকারে মোদী সরকারকে দিল্লির ‘মসনদ’ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে একক প্রচেষ্টায় কংগ্রেস সহ অন্যান্য যে কোনো দলের পক্ষেই যে বেশিদূর এগোনো সম্ভব নয়, তা সকলেরই জানা।
তার জন্য দরকার সমস্ত দলগুলোর একতা মঞ্চের। ইতিপূর্বেই বেশ কিছু ইস্যুতে অবিজেপি দলগুলো মিলিত হলেও লোকসভার কথা মাথায় রেখে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়নি। শুক্রবার কৃষক বিক্ষোভ মঞ্চ যেন আরও একবার বিরোধীদের মিলনমঞ্চ হয়ে উঠলো।
আরও পড়ুনঃ রথযাত্রা উপলক্ষে বাংলায় মোদীর জনসভায় লোকসভার দামামা
দেশের সিংহভাগ জনগন এখনও কৃষির সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। বিরোধী দলগুলো তাই ভোটের আগে নিজেদের এই বিপুল সংখ্যক কৃষকদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ফর্মুলা গ্রহন করেছে। আর তার লক্ষ্যেই দিল্লিতে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দলের নেতৃত্বে কৃষকদের জড় করে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে মোদী বিরোধিতার সুরে শান দিলেন বিরোধীরা।
এদিন কৃষকরা কৃষি ঋণ মুক্তি, ফসলের সহায়ক মূল্যবৃদ্ধি সহ অন্যান্য দাবিতে দিল্লি পৌঁছান। দুদিন আগে থেকেই তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা থেকে কৃষকরা আসতে শুরু করে। কৃষক বিক্ষোভকে ঢাল করে বিরোধী দলগুলোর মিলিত হবার যে এটা বড় সুযোগ ছিল, তা বলাই যায়।
আরও পড়ুনঃ ‘সফল’ কৃষক মিছিলে শুরু ব্রিগেড ও লোকসভার প্রস্তুতি
গতকালের এই মঞ্চে রাহুল গান্ধী সহ উপস্থিত ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শরদ পাওয়ার, ফারুক আবদুল্লা, সীতারাম ইয়েচুরি, দীনেশ ত্রিবেদী প্রমুখ। চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম, অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির প্রতিনিধিরাও সভায় অংশগ্রহন করেন। যদিও উল্লেখযোগ্যভাবে সভায় অনুপস্থিত ছিলেন বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী।
আরও পড়ুনঃ ধর্মান্তরিত না হলে খুনের হুমকি, মিশনারী স্কুলের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ
লোকসভা ভোটে মায়াবতীর অবস্থান কি হবে তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতী কংগ্রেসের সাথে জোট না করে বিজেপিকেই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন, বলে অনেকের ধারণা। ডিএমকের তরফেও কোনো নেতা বা দলীয় প্রতিনিধিকে সভায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।
মঞ্চে উপস্থিত না থাকলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের স্বার্থে বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, নিজের জীবন দিয়ে হলেও তিনি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবেন। তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী সভায় উপস্থিত থেকে রাজ্যের কৃষকদের প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন, ‘২০১০ সালের তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়ে কৃষকদের আয় প্রায় তিন গুন বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু কেন্দ্র সরকার কৃষকদের জন্য কিছুই করতে পারছে না। শিল্পপতিরা ঋণ শোধ না করে পালিয়ে যাচ্ছে আর কৃষকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে’।
রাহুল গান্ধী এদিন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী ১৫ জন শিল্পপতির সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছে। অতএব, কৃষক ঋণ মকুব করাও এই সরকারের পক্ষে সম্ভব। কৃষকরা কেউ ভিক্ষে করছেন না, তারা দকলেই ন্যায্য দাবি করছেন এবং কৃষকদের অপমান করলে অনিবার্যভাবেই এই সরকারের পতন হবে’। তিনি আরও বলেন যে, ‘সকল রাজনৈতিক দলের নীতি চিন্তাধারা আলাদা হতে পারে, কিন্তু কৃষক স্বার্থে সকলের একমত হওয়া উচিত’।
রাহলের পরেই সবশেষে বক্তৃতা রাখেন কেজরিওয়াল। কৃষকদের দুরবস্থার জন্য মোদীর কৃষকবিরোধী নীতির সমালোচনা করেন তিনি। কেজরিওয়ালের উপস্থিতি নিয়ে অনেকেই সংশয়গ্রস্ত ছিলেন। মঞ্চে সবার শেষে রাহুল গান্ধীর বক্তৃতা রাখার কথা হলেও রাহুলের বক্তৃতার সময়েই মঞ্চে প্রবেশ করেন কেজরিওয়াল।
আরও পড়ুনঃ রামমন্দির নয়, হিন্দু ক্ষোভ থামাতে অযোধ্যায় রামমূর্তির ঘোষণা যোগীর
যদিও ভোটের মুখে আপ- কংগ্রেসের মধ্যে আপস রফা হবে কিনা, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছেন কেজরিওয়াল। সময় ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখন জোটের প্রয়োজন হলেও দুই দলের মধ্যে পরস্পরের সাথে জোট হওয়া নিয়ে প্রবল মতানৈক্য রয়েছে।
সীতারাম ইয়েচুরি, মোদী এবং অমিত শাহ কে মহাভারতের কৌরব পক্ষের দুর্যোধন দুঃশাসনের সাথে তুলনা করে বলেন, ‘কৌরবদের পরাজয় হলে বিজেপিরও পরাজয় সম্ভব’। সভার শেষে রাহুল, ইয়েচুরি, ফারুক আব্দুল্লার সাথে কেজরিওয়ালকে ছবিও তুলতে দেখা যায়। কেরালায় দুই প্রধান পরস্পরবিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে কোনো জোটের সমাধানসূত্র যদিও এদিনের মঞ্চের মিলনসভা থেকে পরিষ্কার নয়।
আরও পড়ুনঃ ধর্মান্তরকরণের উদ্দেশ্যে এসে আদিবাসীদের হাতে নিহত মার্কিন খ্রীষ্টান মিশনারী
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে পাশে বসিয়ে তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বক্তৃতা রাখলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারও
বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধেও কৃষক বিরোধী তকমা লাগিয়েছেন। এই অবস্থায় শুধুমাত্র মোদী বিরোধীতার জন্য সেই সিপিএমের সঙ্গে জোট করা সম্ভব কিনা, সেই বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত পরিষ্কার হয়নি।
আরও পড়ুনঃ Exclusive: অমানবিক কলকাতার রাজপথে পড়ে অসহায় বৃদ্ধা
এর আগে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মোদী বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে আসতে দেখা গেছে। আগামী ১০ই ডিসেম্বর দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলোর বৈঠক হবার কথা আছে। তার আগে শুক্রবারের এই মঞ্চেও জোটের সমাধানসূত্র পরিষ্কার না হলেও আগামী দিনে জোটের রাস্তা খোলা রাখতে, এই মঞ্চ যে অনেকটাই সাহায্য করবে তা বলাই যায়।