The News বাংলা, কলকাতা: ১১ ডিসেম্বর দিল্লিতে তৈরি হবে মোদী বিরোধী মহাজোট, নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রবাবু নাইডুর জোট বৈঠকের পর জানালেন উভয়েই। বৈঠক শেষে দুজনের মুখেই বিজেপি সরকার বিরোধী মহাজোটের সুর। উভয়েই জানালেন, ১১ ডিসেম্বর, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে দিল্লিতে বৈঠক করবে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। সেখানেই ঠিক হবে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের রণকৌশল।
আরও পড়ুনঃ ‘গুজরাট দাঙ্গা’, ২৬ নভেম্বর মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনবে সুপ্রিম কোর্ট
৫ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পরেই সম্ভবত এপ্রিল-মে মাসে দেশে লোকসভা ভোট। বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা উপনির্বাচনে দেখা গেছে বিরোধী ভোট এক হলেই হেরেছে বিজেপি। আর তাই লোকসভা ভোটেও, ‘একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়ের রাস্তা তৈরি করতে সোমবার বিকালে নবান্নে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রবাবু নাইডু।
এই বছরই বিজেপির এনডিএ ছেড়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তারপর থেকেই তিনি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব। ইতিমধ্যেই অখিলেশ যাদব, মায়াবতী থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়ার সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন। ২২ নভেম্বর দিল্লিতে সব বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটের জন্য সে বৈঠক পিছিয়ে হবে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে।
আরও পড়ুন: বিজেপি বিরোধী ভোট এক করতে নবান্নে মমতা-চন্দ্রবাবু বৈঠক
ডিসেম্বরে দিল্লিতে সব বিরোধী দলকে নিয়ে বৈঠকের ব্যপারে চন্দ্রবাবু নাইডু বেশ কিছু দিন ধরেই তৎপর। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, এর আগে কর্নাটকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর সঙ্গে ও তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর সঙ্গেও বৈঠক হয়ে গিয়েছে। নবান্নে এসে দিল্লীর বিরোধী বৈঠকে মমতাকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’বিরোধীরা সবাই এখন এক সুরে কাজ করছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব। দেশকে বাঁচানোর জন্য একজোট হব। বিজেপি বিরোধী মহাজোটের মুখ সবাই। কেউ একজন নন’।
অন্যদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন,’মোদী সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। অকারণে ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম হুহু করে বেড়েছে। এই সব কিছুর বিরুদ্ধে মমতাজি সরব। আমরাও চাই মমতাজিকে পাশে পেতে। ২০১৯ সালে বিজেপিকে দেশছাড়া করতে চাই। সবাই মিলে মহাজোট করতে চাই’৷
আরও পড়ুন: মোদী সরকারের কাছে মমতাকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার দাবি তুললেন ইদ্রিস
সম্প্রতি সিবিআই নিয়ে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাত চরমে নিয়ে গেছেন। প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশ, তারপর বাংলায় প্রত্যাহার করা হয়েছে সিবিআই তদন্তের ‘সাধারণ সম্মতি’। যার জেরে রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া, এই দুই রাজ্যে সিবিআই তদন্ত করত পারবে না। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধং দেহী আবহেই নবান্নে সোমবার বৈঠক করলেন মমতা-চন্দ্রবাবু। শুরু হয়ে গেল মহাজোটের ভিতটা আরও পোক্ত করার কাজ।
যদিও ইতিমধ্যে মায়াবতী যে ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তাতে বিরোধী জোট নিয়েই উঠে গেছে প্ৰশ্ন। জানা গেছে, সোমবার চন্দ্রবাবুর সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। পাশাপাশি, গুরুত্ব পাবে ১৯ জানুয়ারি মমতার ব্রিগেড সমাবেশ। কারণ সেখানেও সব বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি চাইছেন মমতা।
আরও পড়ুন: মোদী অমিতের রথযাত্রার পর বাংলার শুদ্ধিকরণে মমতার পবিত্র যাত্রা
এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করে অ-কংগ্রেসি-অ-বিজেপি ফেডেরাল ফ্রন্টের বার্তা দেন। তারপরই হাওয়া অন্য দিকে বইতে শুরু করে। এদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু মনে করেন, মোদীকে সরাতে গেলে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা বিশেষ জরুরি। অন্য দলগুলিরও এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে। এই সব নিয়েই আজ আলোচনা হয়।
তবে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে, সোমবারের নবান্নের বৈঠকের যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মমতা-চন্দ্রবাবুর এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল বিজেপিও। মহাজোট নিয়ে চিন্তায় পরবে তারাও। নবান্ন থেকেই মোদী বিরোধী মহাজোটের প্রস্তুতি শুরু হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষঙ্গরা।