নদিয়ায় কৃষ্ণনগরে ভোটের ইভিএম মেশিনের দায়িত্বে থাকা এক নোডাল অফিসার গতকাল থেকে নিখোঁজ। আর এই নিয়ে ভোটকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। কোথায় গেলেন নদিয়ায় ইভিএমের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসার অর্ণব রায়। তদন্ত শুরু করেছে নদিয়ার কোতোয়ালি থানার পুলিশ। ঘটনার দিকে কড়া নজর রেখেছে নির্বাচন কমিশনও। আর ভোটের দায়িত্বে থাকা অর্ণব রায়ের উধাও হওয়া ফিরিয়ে এনেছে পঞ্চায়েত ভোটে রাজকুমার রায়ের স্মৃতি।
নদিয়া জেলার সব ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যাঁর দায়িত্ব তিনিই এখন নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আর কোনও খোঁজ মিলছে না নদিয়ার নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের। আর এই নিয়েই ভোটকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর অবস্থাও পঞ্চায়েত ভোটে প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায় এর মত হবে না তো? প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ নদিয়ায় ইভিএমের দায়িত্বে থাকা নোডাল অফিসার নিখোঁজ, ভোটকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য
নির্বাচনে ডিউটি পড়ায় রোজকারের মতো বৃহস্পতিবার সকালেও বীপ্রদাস পালচৌধুরী পলিটেকনিক কলেজে নির্বাচনের কাজে যান অর্ণব রায়। এদিন দুপুরে খাওয়ার পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন সেটিও রয়েছে পলিটেকনিক কলেজেই। গাড়ির চালকের কাছে অর্ণব রায়ের কোনও খবর নেই। অর্ণব উধাও রহস্য নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আরও পড়ুনঃ ভোটের পরেও অশান্ত চোপড়ায় গুলির লড়াই, গুলিবিদ্ধ সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র
ঠিক এইভাবেই পঞ্চায়েত ভোটের দিন ইটাহারের একটি বুথ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়। হুমকি উপেক্ষা করে নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিলেন পঞ্চায়েতের ভোটের এই প্রিসাইডিং অফিসার। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুথের বাইরে বেরোন নি। ভোটের পরদিন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে বুথ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রেললাইনের ধার থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় অপহরণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের হয় থানায়।
আরও পড়ুনঃ মমতার সভা আলো করে বসে দাগী সমাজবিরোধী, নির্বাচন কমিশনে গেল বিরোধীরা
মৃতের নাম ছিল রাজকুমার রায়। বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরে। করণদিঘির রহতপুর হাই মাদ্রাসার ইংরেজির সহকারি শিক্ষক ছিলেন রাজকুমারবাবু। সরকারি কর্মচারী হওয়ার সুবাদে পঞ্চায়েত ভোটে ডিউটি পড়েছিল। ইটাহারের বানবোল প্রাথমিক স্কুলের বুথে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ চলে গেলেন ৪২ এর স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ জীবিত সৈনিক
অভিযোগ ছিল, ভোটগ্রহণ চলাকালীন বারবার রাজকুমার রায়ের কাছে হুমকি ফোন আসছিল। ফোনে তাঁকে বুথের বাইরে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্ত, শত হুমকিতেও ওই সরকারি কর্মচারীকে কর্তব্য থেকে টলানো যায়নি। রাজকুমার রায় সাফ জানিয়ে দেন, ভোট চলাকালীন তাঁর পক্ষে বুথের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। বুথ থেকে বেরোলে দেখা নেওয়ার পালটা হুমকি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ পাঁচে পাঁচ, ভোট হয়ে যাওয়া বাংলার ৫টি আসনেই জিতবে বিজেপি, দাবি মুকুল রায়ের
অভিযোগ, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ যখন ভোটের নথি ও ব্যালট জমা দিয়ে বুথ থেকে বেরোন রাজকুমারবাবু, তখন তাঁকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। এদিকে ভোটের ডিউটি সেরে স্বামী বাড়ি না ফেরায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হন রাজকুমার রায়ের স্ত্রী অর্পিতা রায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, ভোটের পর রাজকুমার রায়কে যে অপহরণ করা হয়েছে, তা প্রথমে মানতে চাননি প্রশাসনের আধিকারিকরা। জানানো হয়, তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। যদিও তা মানতে চাননি ওই প্রিসাইডিং অফিসারের স্ত্রী। শেষপর্যন্ত, চাপে পড়ে রাজকুমার রায়ের নামে থানায় মিসিং ডায়েরি করেন ইটাহারের বিডিও রাজু লামা।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের বোকামিতে বাংলার ফিল্ম সিরিয়াল পরিচালকদের মাথায় হাত
পরের দিন পঞ্চায়েত ভোটের প্রিসাইডিং অফিসারের রাজকুমার রায়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া যায়। রায়গঞ্জের সোনাডাঙি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া রেললাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পকেটে প্রিসাইডিং অফিসারের পরিচয়পত্র। ইটাহারের বিডিও রাজু লামা জানান, “ভোটের পর থেকেই রাজকুমারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। অপহরণের পরও তাঁর মোবাইল ব্যবহার করা হয়েছে। ফোন ট্যাপ করার কথা বলি। দুপুরে অভিযোগ জানানো হয়। সন্ধ্যায় মৃতদেহ উদ্ধার হয়”।
আরও পড়ুনঃ পুরুলিয়ায় আবার বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার
কী কারণে খুন হলেন ওই সরকারি কর্মচারী, তা তদন্ত করে ইটাহার থানার পুলিশ। রাজ্য ছাড়িয়ে হইচই পড়ে যায় গোটা দেশে। সেই ঘটনার আজও কোন কিনারা করতে পারে নি পুলিশ। এরমধ্যেই একইভাবে নোডাল অফিসার অর্ণব রায় গতকাল থেকে নিখোঁজ। এদিকে অর্ণব রায়ের সহকর্মীদের বক্তব্য, বহু জায়গায় খুঁজেও অর্ণব রায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় নি। তাঁর ব্যবহার করা দুটি মোবাইলও সুইচড অফ দেখাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ রিভালবার নিয়ে বুথে ঢুকে ভোট দেওয়ায় সঞ্জয় দত্তকে শোকজ করল নির্বাচন কমিশন
এদিকে, অর্ণব রায়ের খোঁজ না মেলায়, বৃহস্পতিবার রাত বারোটার পর অর্ণব রায়ের স্ত্রীকে নিয়ে কোতয়ালি থানায় যান জেলার এসপি ও জেলাশাসক। সেখানে তাঁরা একটি নিখোঁজ ডাইরি করেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, অর্ণবের জন্য একটি মিসিং ডাইরি করা হয়েছে। পুলিশ এই নিয়ে তদন্ত করছে। তবে দারুণ চিন্তায় নদিয়ায় কৃষ্ণনগরের ভোট কর্মীরা।
আরও পড়ুনঃ ভুল করে বিএসপি কে ভোট না দিয়ে নিজের হাতের আঙুল কেটে প্রায়শ্চিত্ব
নদিয়ার সব বুথের ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন এই অর্ণব। আগামী ২৯ এপ্রিল সেখানে ভোট। ফলে এই নিয়ে সমস্যায় পড়েছে জেলা প্রশাসন। তবে সেটা ছাড়িয়েও একটা আশঙ্কা সবার মনে। অর্ণব রায়ের উধাও হওয়া ফিরিয়ে এনেছে রাজকুমার রায়ের স্মৃতি। বেঁচে আছেন তো অর্ণব রায়? নাকি তাঁর অবস্থাও প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায় এর মত হবে? উঠে গেছে আশঙ্কার প্রশ্ন।
আরও পড়ুনঃ দুদফায় ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলায় তৃতীয় দফায় সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।