বেলেঘাটার অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ওই মহিলার আরজি খারিজ করে দেন। ১৯৭১ সালের গর্ভপাত আইন অনুযায়ী, গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের মধ্যে জটিলতা দেখা দিলে কোনও অন্তঃসত্ত্বা গর্ভপাত করাতে পারেন। কিন্তু ওই সময়সীমার পরে গর্ভপাত করাতে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ২৬ সপ্তাহের এক অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাত করানোর অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ নয়, এই কথা জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার ওই মহিলা।
আরও পড়ুনঃ নিয়ম মেনে ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে রাখা যায় রাতেও
কলকাতা হাইকোর্টে মঙ্গলবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী মহিলার আরজি খারিজ করে বলেন, মহিলার গর্ভে থাকা ভ্রূণটির বয়স ২৬ সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ফলে এই অবস্থায় ভ্রূণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকশিত হতে শুরু করেছে। এই বিষয়ে এসএসকেএম এর ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা গঠিত বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী ভ্রূণটি মাতৃগর্ভে যত বড় হবে ততই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।
আরও পড়ুনঃ জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস
শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের মতে শিশুটির দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই অবস্থায় জীবিত প্রাণকে কিভাবে মেরে ফেলার অনুমতি দিতে পারে হাইকোর্ট? এই প্রশ্ন তুলে মূলত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের ভিত্তিতে অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাতের এই আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী।
আরও পড়ুনঃ কাঠফাটা রোদে পড়ুয়াদের অসুস্থ করে ছায়ায় বসে রেকর্ড গড়ার নেশা মন্ত্রীর
অন্তঃসত্ত্বার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে গত ২২শে অক্টোবর। তারপরেও তারা কেন এত দেরি করে আদালতে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। অতিরিক্ত এডভোকেট জেনারেল বলেন ৩০ নভেম্বর রিপোর্টে জানতে পারা যায় শিশুটির সমস্যা রয়েছে। অন্তঃসত্ত্বার আইনজীবী কল্লোল বসু জানান, এই নিয়ে নিশ্চিত হতে এর পরে তারা এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসক গর্ভপাতের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সাড়া দিতে চাননি চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুনঃ Exclusive কংগ্রেস ছেড়ে মমতার হাত ধরলেন মৌসম বেনজির নূর
এর আগে ২৪ সপ্তাহের এক অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীই গর্ভপাতের সেই ঐতিহাসিক রায় দেন। পিএস চক্রবর্তী যিনি এসএসকেএমের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক তাঁর তত্ত্বাবধানেই এই গর্ভপাত করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। ভ্রূণের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধিও স্বাভাবিক নয় তাই গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন যোধপুর পার্কের এক দম্পতি। রায়ে গর্ভপাতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ জওহরলাল নেহেরুর গলায় মালা দিয়ে ৬০ বছর পরেও একঘরে ‘নেহেরুর বউ’
তবে সেখানেও আদালতে রিপোর্ট জমা দেয় মেডিক্যাল বোর্ড। তারপরই ঐতিহাসিক রায় দেয় উচ্চ আদালত। কিন্তু বেলেঘাটার দম্পতির ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ড এর রিপোর্ট দেখেই গর্ভপাতের অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী।
আরও পড়ুনঃ আম দরবারে প্রকাশ্যে মহিলার ওড়না ধরে টান কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে আবেদনকারীর আইনজীবী অপলক বসু ও কল্লোল বসু জানিয়েছিলেন, আবেদনকারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই চিকিত্সকের কাছে যান। সেই সময় ধরা পড়ে গর্ভস্থ সন্তানের একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে। এরপর দম্পতি একাধিক চিকিত্সকদের কাছে যান।
আরও পড়ুনঃ মাঠ দিল না রাজ্য, মোদীর সভা ও হেলিকপ্টারের জন্য ফসল ত্যাগ শিক্ষকের
সেখানেও চিকিত্সকরা আবেদনকারীর শারীরিক পরীক্ষা করে জানান গর্ভস্থ সন্তানের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের গঠনও অসম্পূর্ণ। ওই শিশু জন্মালে সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকবে না। দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। সমস্ত শারীরিক পরীক্ষা করতে করতেই পেরিয়ে যায় ২৫ সপ্তাহ।
আরও পড়ুনঃ কালামের নামে ছাত্রদের তৈরি হালকা উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে নজির ভারতের
আবেদনকারীর দাবি ছিল, এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিত্সকেরাও জানিয়েছেন, জন্মের পরই শিশুটির মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ভ্রূণের গঠন স্বাভাবিক নয়। শিশুটির হৃদপিন্ডের গঠন অসম্পূর্ণ। তাই গর্ভপাত করাতে চান বেলেঘাটার ওই মহিলা। আবেদনকারী বেলেঘাটার আবেদনকারীর বয়স ৩৯ বছর। তাঁর স্বামীর বয়স ৫০। তাঁদের ১৫ বছরের একটি মেয়েও আছে। সম্প্রতি আবেদনকারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ২৪ ঘন্টায় এসএসসির রেজাল্ট প্রকাশ না হলে সচিবকে জেলে ভরার হুঁশিয়ারি বিচারপতির
এই মহিলার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ২৬ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ায় কোনও চিকিত্সকই রাজি হননি গর্ভপাত করাতে। এরপরই তাঁরা গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন কলকাতা হাইকোর্টে। শেষ পর্যন্ত বেলেঘাটার এই অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।