কি অভিনয়টাই না করতে পারেন ডব্লিউবিসিএস অফিসার অনিশা যশ। জেলাশাসক থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের সামনে তাঁর কুমিরের কান্না দেখেছে গোটা বাংলা। স্বামী অফিসার অর্ণব রায়ের উধাও রহস্য পরিকল্পনা করে; সব জেনেও তাঁর অসাধারণ অভিনয়ে মুগ্ধ গোটা রাজ্য। একের পর এক মিথ্যা বলে গোটা বাংলাকে আশঙ্কায় রাখার শাস্তি কি পাবেন অর্ণব-অনিশা?
সাত দিন নিখোঁজ থাকার পর; গত বৃহস্পতিবার খোঁজ মেলে নদিয়ার নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের। ফোনের নেটওয়ার্কের সূত্র ধরে অর্ণব রায়কে উদ্ধারের দাবি করেছিল সিআইডি। কিন্তু তাঁর অন্তর্ধান নিয়ে রহস্য আরও দানা বেঁধেছে। অর্ণববাবুর হাওড়ার শ্বশুরবাড়ির সিসিটিভির যে ফুটেজ মিলেছে; তার জেরে এই অন্তর্ধান নিয়ে দেখা দিয়েছে ধন্দ।
সিআইডি জানিয়েছিল; হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ি হাওড়ার শিবপুর পুলিশ আবাসনের সিসি ক্যামেরার যে ছবি ধরা পড়েছে; তাতে দেখা যাচ্ছে সেখানকার ফ্ল্যাটে এসেছিলেন অর্ণব। সব ধরা পরে গেছে সিসিটিভিতে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪৫ নাগাদ তিনি আসেন শিবপুরের ওই ফ্ল্যাটে। সেখানে তাঁর স্ত্রী অনিশা যশও ছিলেন আগে থেকে। শ্বশুর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএসপি (ট্র্যাফিক) নির্মল যশও ছিলেন সেই ফ্ল্যাটে। সে দিন জামাই আসার পর নির্মল তাঁকে নিয়ে বের হন ৯টা নাগাদ। ফিরে আসেন ৯টা ২৩ মিনিটে। সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন।
তারা কারা সে সম্পর্কে জানা যায় নি। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন অর্নব রায়। সিসিটিভি-তে আরও দেখা গেছে যে ফিরে আসার আগের দিন একটি ব্যাগ নিয়ে বাবার সাথে বেরিয়েছিলেন অর্নবের স্ত্রী।
পরের দিন সেই ব্যাগ নিয়েই ফিরে আসেন অর্ণব। তাই পুলিশের ধারণা; অর্ণব সম্পর্কে সব কিছু জানা ছিল তাঁর স্ত্রীর। শুধুমাত্র বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতি দিচ্ছিলেন তিনি। ফেসবুকে মিথ্যা পোস্টও দেন অনিশা।
সিআইডি বলেছিল; কাজের চাপে পালিয়ে এসে টানা সাত দিন হাওড়া স্টেশনেই পড়ে ছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে নিখোঁজ অফিসার অর্ণব রায়। মোবাইল ফোনের সূত্রে খবর পেয়ে গোয়েন্দারা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন।
সব মিলিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। সিসিটিভি ফুটেজ যদি সত্যি হয়; তাহলে সিআইডির দাবি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। সব মিলিয়ে অর্ণব ফিরে আসার পর তাঁর নিখোঁজ রহস্য; আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।
গত ১৮ এপ্রিল কৃষ্ণনগরে নিজের কর্মস্থল থেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ডব্লিউবিসিএস অফিসার অর্ণব। দুদিন পরে তাঁর স্ত্রী তথা সহকর্মী অনিশা যশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল; কাজের চাপে পালিয়ে যাওয়ার লোক অর্ণব নন। এর আগেও তিনি একাধিক ভোটের দায়িত্ব সামলেছেন। সিআইডি তদন্তের দাবিও তুলেছিলেন তিনি। কি অসাধারণ অভিনয়!
তবে সব জেনেও যেভাবে সাংবাদিকদের সামনে স্বামীর নিখোঁজ থাকার সময় কান্নাকাটি করতেন; তাতে অনিশা যশ যে দারুণ অভিনেত্রী তা নিয়ে এখন আর কোন সন্দেহ নেই সাংবাদিক ও বাংলার আমজনতার মনে। কিন্তু; একের পর এক মিথ্যা বলে গোটা বাংলাকে আশঙ্কায় রাখার শাস্তি কি পাবেন অর্ণব অনিশা? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।