সুপ্রিম কোর্টেও জিত মমতার, পুজো অনুদানে কোন আসুবিধা নেই

599

নিজস্ব সংবাদদাতা: পুজো ও লোকসভা ভোটের আগে বড় জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারের। কলকাতা হাইকোর্টের পর এবার সুপ্রিম কোর্টেও জিত মমতার। পুজোর অনুদান নিয়ে হাইকোর্টের রায়কেই মান্যতা দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের ডিভিশন বেঞ্চ মুখ বন্ধ করে দিল বিরোধীদের।

মমতার পুজো অনুদান সিদ্ধান্তে কলকাতা হাইকোর্ট এর রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল ‘দুর্গা পুজো অনুদান’ সংক্রান্ত মামলা। শুক্রবার দেশের শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের আর্জি জানিয়ে এই মামলা করা হয়। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে, ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে এই অভিযোগ নিয়ে আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

কলকাতা হাইকোর্ট পুজোর আগে স্বস্তি দিয়েছিল রাজ্য সরকারকে। হাইকোর্ট রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুজো অনুদান সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলা গ্রহণ করে নি। পুজো উদ্যোক্তাদের অনুদানের সরকারি সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ নয়, পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিল হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়।

সেপ্টেম্বর মাসে পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা পুলিশ, দমকল এবং সিইএসই-র সমন্বয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সরকারি অনুদানের কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রতিটি পুজোকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল।

ওই বৈঠকে মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কলকাতার ৩ হাজার সহ রাজ্যের ২৫ হাজার দুর্গা পুজোকে রাজ্য সরকারের তরফে এককালিন ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। খরচ হবে ২৮ কোটি টাকা।

জনগণের করের টাকা এ ভাবে অনুদান হিসাবে দেওয়া যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলার আবেদন জানানো হয়েছিল। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে দুদিন পরপর স্থগিতাদেশ দিলেও, গত বুধবার সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত জানিয়ে দেয়, ক্লাবকে পুজো অনুদানের বিষয়টি আদালত গ্রাহ্য নয়।

রাজ্যের উন্নয়নে খরচা না করে কেন ২৮ হাজার পুজো কমিটিকে ২৮ কোটি টাকা দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নও তোলা হয় ওই জনস্বার্থ মামলায়। ওই জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর বক্তব্য ছিল, দুর্গাপুজোয় বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে অনুদান দিলে তা দেশের সংবিধানকে আঘাত করে। কারণ, বিশেষ কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এমন অনুদান দিয়ে উৎসাহিত করা সংবিধান-বিরোধী।

কিন্তু গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আইনসভার সিদ্ধান্তে আদালত নাক গলাবে না। ওই বিষয়টি দেখার জন্য পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি রয়েছে। যদি কোনও সমস্যা থেকে থাকে, সেই বিষয়টি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি দেখবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

কলকাতা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তে পুজোর আগে ও লোকসভা ভোটের আগে স্বস্তিতে রাখে রাজ্য সরকারকে। হাইকোর্টের এই রায়ের ওপরই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের আর্জি জানানো হয়েছিল শীর্ষ আদালতের কাছে।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা যাওয়ার কথা আগেই অনুমান করে রাত জেগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অনুদানের চেক বিলি শুরু করে রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের রায়ের পর রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই অনুদানের টাকা দেওয়া শুরু হয়ে যায়। বুধবার রাতেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পুজো কমিটিগুলিকে ১০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বর্ধমান ও হুগলিতেও বেশ কিছু পুজো কমিটিকে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর, আপাতত পুজো নিয়ে বিতর্ক চাপা পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পুজো উদ্যোক্তারাও। এই রায়ে পুজো ও লোকসভা ভোটের আগে বড় জয় পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন