আজ ওদের ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪ দিন…। দিন কেটে যায়। গুরুতর অসুস্থ অনেকেই। তবু টনক নড়ে না রাজ্য প্রশাসনের। কলকাতার রাজপথে ৪০০ জন শিক্ষা চাকুরি প্রার্থী আজও অনশনে। অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আবার ফিরে এসে যোগ দিচ্ছে অনশনে। ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে এক মহিলার গর্ভস্থ ভ্রূণ। তবু টনক নড়ে নাই প্রশাসনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ২৫ দিনের সিঙ্গুর আন্দোলনের অনশনের রেকর্ড ভেঙে যাবে কাল। বাংলার নেতা নেত্রীরা এসএসসি নিয়ে তদন্ত চাইছেন না কেন?
আরও পড়ুনঃ বাংলাকে চরম লজ্জায় ফেলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের অনশন আন্দোলন ২১ দিনে
কথায় কথায় সিবিআই চাওয়া বাংলার নেতা নেত্রীরা এসএসসি নিয়ে তদন্ত চাইছেন না কেন? ফেব্রুয়ারী ২৮ থেকে শুরু হয়েছে এই আমরণ অনশন আন্দোলন। যাই হোক, আজ ২৪ দিন হল ভবিষ্যতের শিক্ষকদের অনশন আন্দোলনের। কেন মানা যাচ্ছে না এসএসসির দাবি? কি চলছে আসলে এসএসসি তে? আসুন একটু পিছনের গল্প জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুনঃ বাম কংগ্রেস বিজেপির আপত্তি নেই, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কেন মাথাব্যথা শুধু তৃণমূলের
২০১২ সালের ৪ বছর পর ২০১৬ তে হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন এর পরীক্ষা। স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের আকাল থাকলেও কিন্তু ২০১৬ র আগে আর পরীক্ষা হয়নি। এটা মনে রাখা জরুরি যে এই এসএসসি কে পাখির চোখ রেখে এই রাজ্যের কয়েকটি এলিট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র ছাত্রীরা প্রস্তুতি নেয়। বিশেষত যারা মফস্বল, গ্রাম থেকে উঠে আসা ছাত্র ছাত্রী তাঁদের কাছে এসএসসি এমন একটি সরকারি চাকরি যা তাঁদের হাতের নাগালে সহজে আসে।
আরও পড়ুনঃ বিরোধী মহিলা প্রার্থীদের ‘মাল’ সম্বোধন করে কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ ফিরহাদের
২০১৬ সালে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষাতে বসেন। ২০১৮ তে তার রেজাল্ট বেরোয়। মেরিট লিস্ট প্রথমে দেওয়া হয় না। তারপর আদালতে মালদা হয়। মামলার পর মেরিট লিস্ট বেরোয়। মেরিট লিস্টে দেখা যায় অসংখ্য অসঙ্গতি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কম স্কোরের ক্যান্ডিডেট চাকরি পেয়ে গেলেও বেশি স্কোর করা প্রার্থীর নাম ওয়েটিং লিস্টে ঝুলছে। কম স্কোরের প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিলেও অনেক বেশি স্কোরের প্রার্থীর নাম চাকরি তালিকায় নেই।
আরও পড়ুনঃ ‘ভারতমাতা কি জয়’, বলে দলের মধ্যেই ফের বিপদে নেতা
অভিযোগ ওঠে বিপুল টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে এক একটা সিট। হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে ভ্যাকেন্ট সিট এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চোখের সামনে অজস্র অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য শিক্ষা দফতর, এমনটাই অভিযোগ। তৃণমূল নেত্রী যিনি বাম আমলে বারবার, কথায় কথায় সিবিআই চাইতেন তিনিও কোন বিশেষ কারণে চুপ। বিরোধীদেরও তেমন আন্দোলন নেই এসএসসি নিয়ে।
আরও পড়ুনঃ লোকসভা রিপোর্টে গত ৫ বছরে তৃণমূল সাংসদদের পারফরম্যান্স লজ্জাজনক
গত ২৩ দিন ধরে ধর্মতলায় প্রেস ক্লাব এর সামনে চাকরি না দেবার প্রতিবাদে এসএসসি উত্তীর্ণ প্রার্থীরা অনশন করছেন। আর আমরা বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছি। কেউ ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি না। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন একে একে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে এক-একজনকে। আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ।
আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে ভরা তৃণমূলের তারকা তালিকা নির্বাচন কমিশনে
অহল্যার সন্তান এর মত আরও এক মা তার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলেন না। গর্ভেই শিশুর মৃত্যু ঘটেছে! আর এক মা তার দুধের শিশুকে রেখে এসেছেন বাড়ি, মাতৃত্বের কষ্ট অনুভব করতে করতে বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে কান্নায়। চোখের জল ভাগ করে নিয়েছেন কবি মন্দাক্রান্তা সেন । আরও অনেক বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী সাহিত্যিকদের থাকার কথা কিন্তু ছিল! কিন্তু কই দেখতে পাচ্ছি না যে!
আরও পড়ুনঃ ভোটের গানে বিপাকে বাবুল, কমিশনের হাতে টুইট অস্ত্র
কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেত্রী যখন অনশন করেন তখন অদ্ভুত ভাবে তাদের প্রতিটা মুহূর্ত উঠে আসে খবরের পাতায় অথবা টিভির শিরোনামে। টিআরপি বাড়াতে মাঝেমধ্যেই লাইভ টেলিকাস্ট। ঐতিহাসিক অনশন এর প্রতিটা মুহূর্ত যেন আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে, তাইতো প্রতি পদে পদে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে আমাদের মাঝে নেতা-নেত্রীর অনশন!
আরও পড়ুনঃ সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন
কিন্তু ২৪ দিনের এমন একটা ঘটনা নিয়ে রাস্তাঘাটে অলিতে গতিতে কোনো আলোচনা নেইতো! কিছু সাধারণ মানুষ লিখছেন ফেসবুকের পাতায়। কিন্তু এত হাজার ঘটনার মধ্যে সেই প্রতিবাদ কোথায় যেন ভেসে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আসলে প্রতিবাদী মানুষগুলোর সংখ্যা যে বড় কমে আসছে! বাংলার প্রতিবাদীরা এখন সবাই যেন সুবিধাবাদী। আর কলকাতা প্রেস ক্লাবের পাশে আমরণ অংশনে বসলেও শিরদাঁড়া বিকিয়ে যাওয়া সাংবাদিকদের কাছ থেকে কিছু আশা না করাই উচিত।
আরও পড়ুনঃ আইএমএফ রিপোর্টে দ্রুততম অর্থনৈতিক বৃদ্ধির তালিকায় ভারত
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এর পাশে দিনের পর দিন থেকে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দ্রুত। পাশেই ড্রেন, নোংরা জল এর থেকে উঠে আসছে বিচ্ছিরি গন্ধ। মশার কামড়ে অসুস্থ অনেকেই। জ্বর শরীর নিয়ে মনের জোর কিন্তু একটি মানুষেরও কমেনি। দাঁতে দাঁত চেপে তাদের দাবি জানিয়ে চলেছেন প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। ডেঙ্গু, আমাশা, জ্বর, গর্ভপাত সবটাই হয়ে চলেছে। এবার আরও ভয়ঙ্কর কিছু হবার পালা।
আরও পড়ুনঃ বাবুলকে হারাতে ১ কোটি টাকার কাজের টোপ, বিতর্কিত ঘোষণা মেয়রের
আসলে বাংলা এখন লাশের রাজনীতিতে অভ্যস্থ। একটা লাশ চাই বুঝলেন, একটা লাশ। শুধু একটা লাশ চাই আমাদের। তারপর দেখবেন কোথা থেকে যেন ছুটে আসবে অসংখ্য মানুষ আট ইঞ্চির মোমবাতি হাতে! এই বৃষ্টির দিনেও রাজপথে শোকের যাত্রায় তারা হেঁটে যাবেন মুখে কালো কাপড় বেঁধে করুণ মিছিলে! ‘তোমরা আমাদের লাশ দাও, আমরা তোমাদের মোমবাতি মিছিল দেব’। অবস্থাটা ঠিক এরকমই। লাশ পরলে তবেই আসবে রাজ্য প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমও। লজ্জা পেয়ে, এলেও আসতে পারে বুদ্ধিজীবী মহলও।
আরও পড়ুনঃ ৪৮ ঘণ্টা পর ৬০ ফুট গভীর গর্ত থেকে শিশুকে উদ্ধার করে কামাল ভারতীয় সেনার
“এদের এক কি দুজন সেদিন হয়তো থাকবে না। আপনি তো থাকবেন বিষয়টা মিলিয়ে নেবেন!”, বলেই হেসে উঠলেন তরুণ যুবক শুকনো মুখে গালে জমে থাকা দাঁড়ি নিয়ে। হারিয়ে যাওয়া শিরদাঁড়া নিয়ে অনেকেই অবশ্য ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। দাবি, জেদ আর সহনশীলতা না থাকলে মেরুদন্ড কখনোই সোজা থাকে না যে! এই গল্পের শেষ দেখার অপেক্ষায়।
The News বাংলায় সম্পাদকীয় লিখলেন এক প্রতিবাদী
আরও পড়ুনঃ নির্বাচন কমিশনের নতুন অ্যাপ সি ভিজিল, জনতার অভিযোগে ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।