নিজস্ব সংবাদদাতা: সময়সীমা শেষ হবার আগেই সরিয়ে দেওয়া হল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। রাজ্য কংগ্রেসের মাথায় বসানো হল সোমেন মিত্রকে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। সবটাই কি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বুদ্ধি অনুযায়ী ? মমতার ইচ্ছেতেই কি এমন সিদ্ধান্ত সনিয়া-রাহুলের ?
কংগ্রেসে অধীর বিদায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হল অসুস্থ সোমেন মিত্রকে। সময় শেষ হবার আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল সাংসদ অধীরকে। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ডের হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন ?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন এই হঠাৎ সিদ্ধান্তের। কারণগুলি হল:
১. লোকসভা ভোটের আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হবে প্রণবপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু সরাসরি অধীরকে হঠাৎ সরিয়ে অভিজিৎকে সভাপতি করলে সেটা প্রণবপুত্রের পক্ষে খুব একটা স্বস্তির হবে না। অধীর লবির সঙ্গে সরাসরি সংঘাত লেগে যাবার একটা সম্ভাবনা থাকছেই। তাই অধীরকে সরিয়ে অসুস্থ সোমেন মিত্র। পরে অসুস্থতার স্বাভাবিক অজুহাত দেখিয়ে বড়দাকে সরিয়ে অভিজিৎ এর হাতে বাংলা কংগ্রেসের দায়িত্ত্ব তুলে দেওয়া হবে।
2. অধীর চৌধুরী বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস ভেঙে নিজের দল গোছানোর মমতার কূটনীতির বিরুদ্ধে চিরকাল মুখ খুলে এসেছেন মুর্শিদাবাদের একসময়ের মুকুটহীন সম্রাট। ১৯ এর লোকসভাতেও তৃনমূলের সঙ্গে জোটের তীব্র বিরোধী অধীর ও অধীরপন্থী নেতারা। কিন্তু লোকসভাতে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট করেই লড়তে চান মমতা-সনিয়া। সেক্ষেত্রে অধীর চৌধুরীকে সভাপতি রেখে ভোটে লড়া সম্ভব নয়।
3. সেই জন্যই নতুন কমিটিতে বেশির ভাগ অধীর বিরোধী নেতারাই স্থান পেয়েছেন। যাঁদের অনেকেই প্রথমে প্রণব ও এখন অভিজিৎ লবিতে আছেন। সূত্রের খবর, দিল্লীতে অভিজিৎ বৈঠক করেন রাজ্যের অধীর বিরোধী নেতাদের সঙ্গে। আর তারপরই হাইকমান্ড এই সিদ্ধান্ত নিল।
4. সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই রাজ্যে লড়বে কংগ্রেস। অসুস্থ সোমেন মিত্রর সরে যাওয়াটা ও অভিজিৎ এর কাঁধে দায়িত্ত্ব যাওয়াটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
5. অধীর চৌধুরীকে অসময়ে সরিয়ে দেওয়ার অর্থই হচ্ছে ১৯ এর ভোটে রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া। রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের এই বার্তাও দেওয়া হল যে, লোকসভা ভোটে মমতার সঙ্গে জোটের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন।
আর এই সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মমতার অঙ্গুলিহেলনেই কাজ করলেন সনিয়া-রাহুল। শুধু বাংলায় নয়, লোকসভায় গোটা দেশেই জোট গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে আপাততঃ মমতাই বড় ভরসা কংগ্রেসের। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই বাংলার বেশিরভাগ কংগ্রেস নেতাদের জোট না করার ইচ্ছেকে আপাততঃ হিমঘরে পাঠিয়ে দিলেন কংগ্রেস হাইকমান্ড।
তবে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে বাংলায় কংগ্রেস কটি আসন পাবে বা বলা যায় মমতা দয়া করে কটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়বেন, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন। এর ফলে, বাকি পরে থাকা কংগ্রেস নেতারাও যে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকবেন তার আগাম আভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে। অধিরপন্থী বেশ কিছু নেতার কাছে বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর অফারও আছে বলেই সূত্রের খবর।
এখন দেখার এটাই যে, সোমেন মিত্রের রাজত্বকাল স্থায়ী হয়, না বিশেষজ্ঞদের মত পুরোপুরি মিলে বাংলা কংগ্রেসে প্রণবপুত্রের আমল শুরু হয়। তবে লোকসভা ভোটে যে ফের মমতা-সনিয়া জোট হচ্ছে, এটা এখন দিনের আলোর মতই পরিষ্কার।