The News বাংলা, কলকাতা: প্ৰশ্নটা অদ্ভুত, তাই না? সত্যি তো, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কার? বাংলা সিনেমার? বাংলার সিনেমা প্রেমিকদের? না, শুধুই ‘তাঁর’? প্ৰশ্নটা কিন্তু উঠছে, সাড়ম্বরে উঠে গেছে।
ভোটের সময়ও ‘তাঁর’ এত হাসিমুখ দেখা যায় না! মেলা, সংস্কৃতি বা জেলা সফরেও ‘তাঁর’ এত ছবি দেখা যায় না! যত হাসিমুখ আর বড় বড় কাট আউট এখন দেখা যাচ্ছে নন্দন চত্বর ছাড়িয়ে গোটা কলকাতা জুড়ে।
দমদম, রাজারহাট, নিউটাউন, সল্ট লেক থেকে শুরু করে টালিগঞ্জ, সোনারপুর, হরিদেবপুর, বেহালা গোটা কলকাতা জুড়ে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পোস্টার। সঙ্গে অবশ্যই ‘তাঁর’ হাসিমুখ। শুধু কলকাতা নয়, হাওড়া হয়ে চুঁচুড়া, চন্দননগর হয়ে ব্যান্ডেল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আর ‘তাঁর’ হাসিমুখের পোস্টার।
আরও পড়ুন: লাইফ বিয়ন্ড ডেথ’, কী ভাবে জানবেন মৃত্যুর পর কী
ঠিক যেমন, বিশ্বের দরবারে বাঙালির দুর্গাপুজোকে তুলে ধরতে ‘তাঁর’ হাসিমুখের কার্নিভ্যাল দেখেছিল গোটা বাংলা। সব পুজো কমিটির শুরুর গাড়িতেই ছিল ‘তাঁরই’ হাসিমুখের কাট আউট। ঠিক তেমনই, আবার ‘তাঁর’ কাট আউট, ব্যানার ও পোস্টার গোটা কলকাতা জুড়ে।
কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মুখ যে ‘তিনি’ই। কোন ফিল্ম, কোন পরিচালক বা প্রযোজক বা কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী নন, ‘তিনি’ই রাজ্যের সব ইভেন্টের ব্র্যান্ড। তাই নন্দন চত্বরে শুধু তিনিই তিনি। বাংলা বা ভারতীয় ফিল্মের কেউই সেখানে নেই।
দুঃখের বিষয় এটাই যে, ‘তাঁর’ এই হাসিমুখ ‘তাঁর’ অনেক কিছু ভালো জিনিসও চাপা দিয়ে দিচ্ছে। সেটা ‘তিনি’ বুঝতেও পারছেন না। আর ‘তাঁর’ ‘তোষামোদী চামচারা’ ‘তাঁকে’ ভুল ধরিয়ে দেবার সাহসও রাখেন না।
আরও পড়ুন: সনাতন হিন্দু ধর্মকে ছোট করার চেষ্টা সফল হবে না
নন্দনের বাঁধা ধরার জীবন থেকে এক ঝটকায় কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে বের করে আনার কৃতিত্বও যে ‘তাঁর’ই। তাঁর ‘পূর্বাধিকারী’র অল্প সংখ্যক অনুরাগী ও ‘অনুগত’ লোকজনকে নিয়ে ‘৩৪ বছর আমলে’র বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে এই ফেস্টিভ্যালকে মুক্তি দিয়েছেন ‘তিনি’ই।
ঠিক যেমন, রেড রোডে দুর্গা পূজার কার্নিভ্যাল তাঁরই মস্তিস্ক প্রসূত। বাঙালির সেরা উৎসবকে ভারতের দরবারে ও বিশ্বের আঙিনায় পৌঁছে দেবার জন্য ‘তাঁর’ চিন্তাধারা অসাধারণ, প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সর্বত্র ‘তাঁর’ হাসিমুখের কাট আউট ‘তাঁর’ ভাবনা-চিন্তা-প্রয়োগের পুরোটাই কেটে গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা ও তারপরের গণহত্যার না জানা সত্যি
ঠিক তেমনই, কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে আরও আকর্ষণীয় করতে, সাধারণ মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দিতে ‘তাঁর’ উদ্যোগের প্রশংসা, যত করা যায় ততটাই কম।
এক বছর আগে থেকেই জোর জবরদস্তি অমিতাভ বচ্চনের ডেট নিয়ে রাখা ভারতের আর কোন মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে কল্পনা করাও সাধ্যাতীত। একমাত্র ‘তিনিই’ পারেন কলকাতার মেয়রকে ঠেলে জলে ফেলে দিতে আর শাহরুখ খানকে ভাই বানিয়ে তুই-তোকারি করতে।
কিন্তু ওই যে বলে, এক বালতি দুধে একফোঁটা চোনা। আর ‘তাঁর’ ক্ষেত্রে পুরোটাই চোনা। কে বোঝাবে ‘তাঁকে’, নিজের হাসি মুখের ছবির বদলে বাংলা তথা ভারতীয় ফিল্ম, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ছবি দেওয়াটাই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পক্ষে দৃষ্টিগ্রাহ্য।
কে বলবে ‘তাঁকে’, কার্নিভালের মাধ্যমে বাংলার পুজোকে বিশ্বের দরবারে তুলে আনতে গেলে সর্বত্রই ‘তাঁর’ মুখ বসানোর স্বভাব ত্যাগ করতে হবে। কার্নিভ্যালকে ভোট প্রচারের আওতা থেকে বাদ দিতে হবে। নিজের হাসি মুখ কমাতে না পারলে এই কার্নিভ্যাল বাংলার মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: অনেক চমক নিয়ে ২৪ তম কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু
ঠিক তেমনই, ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সর্বত্রই নিজের মুখ না দেখিয়ে ফিল্ম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পোস্টারে ছবি থাকাটাই বাঞ্ছনীয়, বলছেন ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। না হলে কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নামেই আন্তর্জাতিক থেকে যাবে, কাজে নয়।
‘তাঁর’ ‘পূর্বাধিকারী’ নন্দনকে কুক্ষিগত রেখেছিলেন বলে বারবার অভিযোগ করেন ‘তিনি’ই। কার্যক্ষেত্রে ‘তিনি’ও কি তাই করছেন না? হিসাব করে দেখা গেছে শুধু নন্দন চত্বরেই তাঁর ৫০০র বেশি হাসিমুখের ছবি আছে। সর্বত্র ‘তাঁর’ হাসিমুখ, হাস্যকর করে দিচ্ছে সব ইভেন্টকেই। কে বলবে ‘তাঁকে’, কুক্ষিগত করে রাখার যে সমালোচনা ‘তিনি’ হামেশাই করেন, এটাও সেই একই। মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। কোন তফাৎ নেই।
তাই তো প্রশ্ন ওঠে কার্নিভ্যাল তুমি কার? প্ৰশ্ন ওঠে, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল তুমি কার? যুব বিশ্বকাপ তুমি কার? দুর্গা পুজো তুমি কার? ‘তাঁর’ হাসিমুখের পোস্টার বানাতে জনগণের টাকা খরচের কার্পণ্য করে না রাজ্যের প্রায় পুরসভার মাথায় বসে থাকা ‘তাঁর’ই ভাইরা।
আপনার আমার ট্যাক্সের টাকায় সরকারি কোষাগারের ‘হাত উপুর’ করা খেলায়, মেলা থেকে রাজ্যের উন্নয়ন, এই পর্যন্তই ‘তাঁর’ হাসিমুখের বিজ্ঞাপন থাকা উচিত ছিল। সেটা হলেও সীমারেখার মধ্যেই থাকত বলে মনে করা হত।
আরও পড়ুন: আমার আপনার ‘অসুখ’ নিয়ে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘অসুখওয়ালা’
কিন্তু, যুব বিশ্বকাপ থেকে দুর্গা পুজো, কার্নিভ্যাল থেকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, এখানেও ‘তাঁর’ হাস্যকর হাসিমুখ এবার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আম বাঙালির। সর্বত্র ‘তাঁর’ হাসিমুখের ছবি কিন্তু এবার বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ‘সর্বঘাটে কাঁঠালি কলা’র মত ‘তাঁর’ হাসিমুখ নিয়ে এবার প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ সব চরিত্র চিনতে পারলে আপনি ঠিক রাস্তায় আছেন। আর না পারলেও, আপনি ঠিক রাস্তাতেই আছেন।