The News বাংলা: সব দেবীর উর্দ্ধে মা তারা বা তারা মা। তাই তারাপীঠে অন্য কোনও দেবীমূর্তি পুজোর চল নেই। মা তারাকে সামনে রেখেই সমস্ত দেবীমূর্তির পুজো করা হয় সিদ্ধপিঠ তারাপীঠে।
তারাপীঠের মা তারা। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। কালিপুজোর দিনও তাই মা তারাকেই শ্যামা রূপে পুজো করা হয়। এদিন মায়ের নিত্য পূজার্চনা ছাড়াও শ্যামা রূপে মায়ের বিশেষ আরাধনা করা হয়।
তারাপীঠ, বীরভূম জেলায় অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র মন্দির নগরী। এই শহর তান্ত্রিক দেবী, তারার মন্দির ও মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত। হিন্দুদের বিশ্বাসে, এই মন্দির ও শ্মশান একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। এই স্থানটির নামও এখানকার ঐতিহ্যবাহী মা তারা আরাধনার সঙ্গে যুক্ত।
তারাপীঠ এখানকার “পাগলা সন্ন্যাসী” বামাক্ষ্যাপা-র জন্যও প্রসিদ্ধ। বামাক্ষ্যাপা এই মন্দিরে পূজা করতেন এবং মন্দির-সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রে কৈলাসপতি বাবা নামে এক তান্ত্রিকের কাছে তন্ত্রসাধনা করতেন। বামাক্ষ্যাপা তারা দেবীর পূজাতেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মন্দিরের অদূরেই তাঁর আশ্রম অবস্থিত।
তারাপীঠ ৫১ পীঠের অন্তর্বর্তী নয়। ‘মহাপীঠপুরাণ’-এ উল্লিখিত পীঠস্থান-তলিকায় তারাপীঠের উল্লেখ নেই। জনচিত্তে অবশ্য একথা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে যে, সতীর তৃতীয় নয়ন এখানে পড়েছিল। কিন্তু পুরাণাদি গ্রন্থে এর কোনও সমর্থন পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুনঃ স্বপ্নের কালিপুজোয় মা কালির সঙ্গে সাধারণ নারীর পুজো
তারাপীঠ আসলে একটি ‘সিদ্ধপীঠ’। সুদূর অতীত থেকে এখানে বহু সাধক এসেছেন তপস্যা করার জন্য। এবং তাঁদের সিদ্ধিলাভেই ধন্য হয়েছে এই পীঠ। সুতরাং এই পীঠের মহিমা অন্য শক্তিপীঠগুলির চাইতে একাবেরেই আলাদা।
কালি পুজোর দিন আর পাঁচটা দিনের মতোই মা তারাকে ভোরবেলা স্নান করানো হয়। এর পরেই মা তারাকে অষ্টধাতুর মুখাভরন, মুণ্ডমালা, মুকুট, সোনার অলঙ্কার, শোলা ও ফুল-মালা দিয়ে শ্যামা রূপে সাজানো হয়।
এরপর শুরু হয় মঙ্গলারতি। মায়ের প্রথম পুজোর সঙ্গে দেওয়া হয় শীতলা ভোগ। আর পাঁচটা দিনের মতো এদিনও মায়ের নিত্যভোগ হয়। সন্ধ্যারতির আগে মা’কে পুনরায় ফুল-মালা দিয়ে সাজানো হয়।
মন্দির কমিটির তরফ থেকে বলা হয়, “শ্যামা পুজোর শুভক্ষণে নাটোরের পুরোহিত এবং মন্দিরের পালাদার সেবাইত পুজোয় বসেন। একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ, অন্যদিকে চলে পুজো। পুজো শেষে মায়ের আরতি এবং দ্বিতীয়বার ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে পোলাও, খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ভাজা মিষ্টি, পায়েস দেওয়া হয়”।
মন্দির কমিটি আরও বলে, “কালিপুজো উপলক্ষে সেবাইতদের বাড়ির মেয়েরা মন্দিরের চারিদিক মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে তোলেন। সারারাত মোমবাতি আর মাটির প্রদীপে আলোকময় হয়ে থাকে শ্মশান চত্বর’।
আরও পড়ুনঃ ৩০০ বছরের ডাকাতে কালির হাড় হিম করা কাহিনি
রাতভর চলে যজ্ঞ। শ্মশানের বিভিন্ন জায়গায় সাধুসন্তরা ভক্তদের মঙ্গল কামনায় যজ্ঞ করে থাকেন। কেউ কেউ শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকা নদীতে প্রদীপ ভাসিয়ে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।
কালিপুজো উপলক্ষে ছাগ বলি দেওয়া হয়। বহু ভক্ত মানত করে বলি দিয়ে থাকেন। মা তারাকে শ্যামা রূপে পুজো দিতে দূরদূরান্তের বহু ভক্ত সকাল থেকে ভিড় জমান। সারাদিনই মাকে শ্যামা রূপে পুজো দেওয়া হয়।
কালিপুজোর দিন সারারাত খুলে রাখা হয় মন্দির। কালিপুজোতে তারা মার পুজো দিয়ে দর্শনার্থীরাও খুব খুশি হন। দর্শনার্থীরা অন্যান্য দিন মা তারা রূপে পুজো দিয়ে থাকেন। কিন্তু কালিপুজোয় মা কালির অন্য রূপে মা তারাকে পুজো দিতেই তারাপীঠে আসেন সবাই।