“ম্যাডাম, আপনি কি চুরি করে চাকরি পেয়েছেন”………

462
ম্যাডাম, আপনি কি চুরি করে চাকরি পেয়েছেন......
ম্যাডাম, আপনি কি চুরি করে চাকরি পেয়েছেন......

ম্যাডাম, আপনি কি চুরি করে চাকরি পেয়েছেন? এরপরেও কেউ প্রশ্ন করবে না? আসলে দুর্নীতিটা ঠিক করে করতে পারেননি। না হলে ভেবেছেন; যা খুশি করব। তোরা কেউ কিছুই করতে পারবি না। কিন্তু অন্যায় থামাতে কিছু ‘কাজপাগল’ সবসময়ই সামনে আসেন। ঠিক যেমন এবার সামনে এসেছেন; কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিখাদ বাঙালি সন্তান; শিরদাঁড়া-হীন বাঙালির রাজ্যে একজন ব্যতিক্রমী বিচারপতি। যার এজলাসে; ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে না’।

বাম ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে ঘাসফুলে বাবা; তারপরেই মেধা তালিকায় নাম না থাকলেও মেয়ের চাকরি। ঠিক কী ঘটেছিল? ১৭ অগাস্ট, ২০১৮, তৃণমূলে যোগ দেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ অধিকারী; আর তারপরেই ২০১৮-তে স্কুলে চাকরি পান পরেশ-কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। মেধা তালিকায় নাম না থেকেও, চাকরি হয় পরেশের মেয়ে অঙ্কিতা! এমনকি তাঁকে কোন ইন্টারভিউ দিতে হয়নি; স্বীকার করে নিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন।

প্রকাশিত প্রথম মেধা তালিকাটিতে; প্রথম স্থানে নাম ছিল ববিতা বর্মনের। নতুন তালিকায় তাঁর নাম দ্বিতীয় স্থানে চলে যায়। আবার তালিকায় ৬০ নম্বর স্থানে ছিল; রূপালি রায়ের নাম। অঙ্কিতার নাম তালিকায় ঢুকে পড়ায় রূপালি-র নাম; ৬১ তম স্থানে চলে গিয়েছিল। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানতেনই না, এসএসসি-র তালিকা চাকুরী প্রার্থীদের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে; যেখানে পরেশ পালের মেয়ের নাম নেই। ‘পরেশের মেয়ের নাম লিস্টে ছিল না; প্রমাণ আছে কি?’ জিজ্ঞাসা করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রশ্ন করা হয়েছিল কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান শর্মিলা মৈত্রকেও। কিন্তু তিনিও ‘ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব’ বলে; জবাব এড়িয়ে যান।

মামলাকারী যেখানে নিয়োগ পরীক্ষায় ৭৭ নম্বর পেয়েছেন; সেখানে মন্ত্রীর মেয়ে ৬১ নম্বর পেয়েই চাকরি পেয়েছেন। রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির; আরও একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। পরেশ অধিকারীকে নিজাম প্যালেসে ডেকে; জেরা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিবিআই-কে। পাশাপাশি তাঁকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যও; সুপারিশ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। যা এককথায় নজিরবিহীন। হ্যাঁ এমন সিদ্ধান্তই নেন; ব্যতিক্রমী বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

বাম আমলে খাদ্যমন্ত্রী, আদর্শ নীতি চুলোয় পাঠিয়ে; তৃণমূল জমানায় রাজ্যের শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী। সেই পরেশ অধিকারীর কন্যার, শিক্ষক পদে নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগে; কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হল। একেবারে হাইজাম্প ফর্মুলায় যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে; মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বাংলায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, মেধা তালিকায় নাম না থাকলেও মন্ত্রীর মেয়ের চাকরি

অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের তালিকায় তাঁর নামই ছিল না। কিন্তু তাঁর বাবা পরেশচন্দ্র অধিকারী ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দিতেই; পিসি সরকারের ম্যাজিকের মত তালিকায় এক নম্বরে পৌঁছে যান অঙ্কিতা অধিকারী। কোচবিহারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য; এসএসসি তালিকা প্রকাশ হয়েছিল। SC জাতিভুক্তদের জন্য মেধা তালিকার ওয়েট-লিস্টে; প্রথমে নাম ছিল ববিতা বর্মনের। অথচ পরে এসএসসি-র ওয়েবসাইটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের ওয়েট-লিস্টে; দেখা যায় ববিতার নাম চলে গিয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে রয়েছে পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম। পিসির সরকারের চরম ম্যাজিকে।

চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের সময়েও; অঙ্কিতাকে দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ। হঠাৎ করে মেধাতালিকায় নাম ওঠা অঙ্কিতাকে; মেখলিগঞ্জে তাঁর বাড়ির পাশের স্কুলে যোগ দিতে দেখে অবাক রাজ্যের হবু শিক্ষকরা। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে ঘুরপথে, বেআইনীভাবে; স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন বলেই অভিযোগ। পরেশ অধিকারীকে এবার সিবিআই জেরার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।

পরেশের মেয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি-র ছাত্রী ছিলেন। খসড়া গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার সময়; পরেশ অধিকারী সারাক্ষণ হাজির ছিলেন মেয়ের সঙ্গে। ফলে সেখানেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে পরেশের বিরুদ্ধে।

এরপরেও স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারবেন; পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। তবে আদালতে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বাপ-বেটি নিরপরাধ। তাই ছাত্র ছাত্রীদের মুখে না থাকলেও, চোখে তো প্রশ্ন থাকবেই; “ম্যাডাম, আপনি কি চুরি করে চাকরি পেয়েছেন”……???

সম্পাদকীয় লিখেছেন মানব গুহ

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন