Editorial – The News বাংলা https://thenewsbangla.com Bengali News Portal Mon, 05 Sep 2022 12:17:03 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.7.2 https://thenewsbangla.com/wp-content/uploads/2018/09/cropped-cdacf4af-1517-4a2e-9115-8796fbc7217f-32x32.jpeg Editorial – The News বাংলা https://thenewsbangla.com 32 32 শিক্ষক দিবস, টাকা দিয়ে কেনা পেশায় শ্রদ্ধা থাকে না, লজ্জার অন্ধকারে বাংলার শিক্ষা https://thenewsbangla.com/teachers-day-no-respect-for-teacher-professions-bengal-education-in-darkness-of-shame/ Mon, 05 Sep 2022 05:19:13 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=16642 শিক্ষক দিবস, টাকা দিয়ে কেনা পেশায় শ্রদ্ধা থাকে না, লজ্জার অন্ধকারে বাংলার শিক্ষা। আমাদের বাংলায় এখন টাকা দিলেই, শিক্ষকের চাকরি কিনতে পাওয়া যায়। নেতার পরিবারের কেউ হলেই চাকরি পাওয়া যায়, যোগ্যতা না থাকলেও। এমনকি নেতাদের দেহরক্ষীদের চেনা হলেও, শিক্ষকতা করা যায় সরকারি স্কুলে। এমনকি অন্য দেশ থেকে এসে টাকা দিয়ে ভোটার আধার কার্ড বানিয়ে, আমার রাজ্যে শিক্ষকের চাকরি কেনা যায়। বাংলায় শিক্ষকের চাকরি এখন ইলিশ-পমফ্রেট মাছের বাজার, ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’। টাকা দাও চাকরি নাও। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। টাকা দিয়ে কেনা পেশায়, আর যাই হোক শ্রদ্ধা থাকে না। আর এর জেরেই পুলিশ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীর মত শিক্ষকও, একটা হাসির ও ব্যঙ্গের ‘জাত’ হয়ে গেছে।

পরীক্ষায় পাশ করেও, গান্ধীর পায়ের নিচে টানা দু বছর ধরে বসে, যোগ্য শিক্ষকরা। তাদের ন্যায্য চাকরি কবেই চোখ-কান-মুখ বুজে, লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে শাসক দলের ‘দুষ্টুমিষ্টি ভালো’ বাঁদররা। স্কুল কলেজে দাপাচ্ছে, অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত ‘বুড়ো ধামড়া’ ছাত্র নেতা। আঙুল তুলে শাসাচ্ছে শিক্ষকদের, বংশ পরম্পরার ধারা বজায় রেখে। তাদের বড় দাদাদের, ‘বুল স্টাইলে’ শিক্ষিকাকে জগ ছুঁড়ে মারার ঐতিহ্য আছে যে। শুধু কি তাই, অন্য ধর্মের শিক্ষিকা, মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ায়, স্কুলে ঢুকে সবার সামনে শিক্ষিকার শাড়ি খুলে দেবার নজিরও ঘটিয়েছে, পরিবর্তনের বাংলা।

আরও পড়ুনঃ ‘মমতাকে তাড়াতে সাহায্য করবে অভিষেক’, শুভেন্দুর ‘লক্ষণ’ মন্তব্যে শোরগোল বাংলায়

একটা সময় বেত হাতে, স্কুল ঘুরতেন আমাদের শিক্ষকরা। ছাত্র আর নেতা তো অনেক দূরের কথা, অভিভাবকরাও রীতিমত ভয় পেতেন এই শিক্ষকদের। তারপর হঠাৎ একদিন, বাবা-মায়েদের অতিরিক্ত আদর, আদালতে শিক্ষকদের হাত থেকে বেত কেড়ে নিল। ছাত্রদের কান থেকে নিষিদ্ধ করে দিল, শিক্ষকদের তর্জনী ও বুড়ো আঙুল। আর ‘লালের শাসন’ তাদের স্কুল ছেড়ে, সম্পূর্ণ রাজনীতিতে নামিয়ে দিল। শিক্ষার কবর তখনই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল। ‘মা মাটি মানুষ’ সেই কবরে শিক্ষাকে ঢুকিয়ে, উপরে ‘ঘাসফুল’ গজিয়ে দিয়েছে। ‘শিক্ষার ষোলকলা’ পূর্ণ হয়েছে।

আমাদের দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, পেশায় শিক্ষক, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান। ভারতের এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের জন্মতিথিতে, আজ সর্বত্র এই দিনটি পালিত হচ্ছে তাঁর ছবি ও মূর্তিতে মালা দিয়ে। বুঝিয়ে দেওয়া, মালা দিয়ে অতীত বরণ করলাম। ব্যাস…তারপরেই কলেজে যাব অনার্সের সিট-গুলো বেচার জন্য। দাদারা শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করছে, আর ভাইরা ছাত্রদের আসন বিক্রি করছে। আমার বাংলায় শিক্ষা এখন, বাজারে নিলাম হচ্ছে।

যারা এই বাজারের বাইরে থেকে, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে শিক্ষক-শিক্ষিকা হয়েছেন, আর এটাকে শুধুই পেশা আর ‘আয়ের উৎস’ বলে ভাবেন না, আজও আশা করেন পরিবর্তন আসবে, সব অন্যায় ও দুর্নীতির অবসান হবে, সেই সব ব্যতিক্রমি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানাই, শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা। (লিখলেন মানব গুহ)

]]>
মিডিয়া ট্রায়াল, তদন্তের আগেই নিজের রায় ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই https://thenewsbangla.com/media-trial-cm-mamata-banerjee-herself-announced-her-verdict-before-investigations/ Fri, 26 Aug 2022 04:26:45 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=16451 মিডিয়া ট্রায়াল, তদন্তের আগেই নিজের রায় ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। “বিচারাধীন মামলায় মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করুন”, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সত্যি বাংলায় এত ‘ট্রায়াল’ হয়, যে বলার নয়। একটার পর একটা ঘটনার কথা বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে, তবু শেষ হবে না। আজ প্রথমবার আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। তদন্ত চলছে, আদালতে মামলা চলছে, তাও আগেভাগেই ‘রায়’ ঘোষণা করে দেওয়াটা বাংলায় একটা পুরনো রোগ। যার নাম ‘ট্রায়াল।

১. ফেব্রুয়ারি ২০১২, পার্ক স্ট্রিট গণ’ধর্ষ’ন। কলকাতা পুলিশের রিপোর্টেই ছিল, পার্ক স্ট্রিটে ধ’র্ষ’ণ হয়েছিল। খোদ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান, সেই রিপোর্ট জানিয়েছিলেন। দিন দশেক পর পুলিশি তদন্ত চলাকালীন, কে যেন মহাকরণে দাঁড়িয়ে ‘ট্রায়াল’ করে দিল, ‘‘সাজানো ঘটনা। সরকারকে ম্যালা’ইন করার জন্য এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সব বের হবে”। অন্যদিকে সেদিনই কলকাতা পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন বলেছিলেন, “ধ’র্ষ’ণ হয়েছে”। দময়ন্তী সেনকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে, পাঠানো হয়েছিল গুরুত্বহীন পদে। কারণ সেদিন ‘পুলিশের রিপোর্ট’ আর ‘ট্রায়াল রিপোর্ট’ মেলেনি।

২. সেপ্টেম্বর ২০১৮, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাঁড়িভিট হাইস্কুলে গু’লি চলে। মা’রা যায় রাজেশ সরকার নামে এক ছাত্র। পড়ুয়াদের অভিযোগ ছিল, স্কুলে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। কিন্তু নবনিযুক্ত শিক্ষকরা সব উর্দু ভাষার। পড়ুয়াদের দাবি ছিল, ওই স্কুলে উর্দুর ছাত্র-ছাত্রীই নেই। স্কুল চত্বরে পুলিশ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রবল সং’ঘর্ষে গু’লিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু রাজেশের। তদন্ত চলাকালীন কে যেন ‘ট্রায়াল’ করে দিল, “পুলিশ গুলি চালায়নি”।

৩. সেপ্টেম্বর ২০১৮, ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট ব্রিজ। তিনজনের মৃত্যু। পরেরদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছেই হয়ে গেল ‘ট্রায়াল’, “দায়ী মেট্রো রেলের কাজ”। অনেক পরে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে জানা জয়, “ট্রায়াল ভুল ছিল, গাফিলতি পূর্ত দফতরের। তদন্তের ঘোষণা হল। তদন্ত শেষ হবার আগেই আবার ‘ট্রায়াল’, “পূর্তমন্ত্রীর কাছে কোনও ফাইলই পাঠানো হত না, মেট্রোর তরফে”।

৪. জুলাই, ২০১৭, বাদুড়িয়া, বসিরহাট লাগোয়া বিস্তীর্ণ জায়গায় সা’ম্প্রদা’য়িক উত্তেজনা। তদন্ত, পুলিশের রিপোর্ট পৌঁছানোর আগেই ‘ট্রায়াল’, “একটা ছোট জায়গায় গোলমাল হয়েছে। এত ভাববার কিছু নেই। ২-৩টি ছোট ব্লক এলাকার গোলমাল”।

৫. জুন ২০১৬, নারদ স্টিং অপারেশনের তদন্ত কলকাতা পুলিশকে দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা। পরের দিন প্রকাশ্যে ‘ট্রায়াল’, “সব চক্রান্ত, আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে, টেবিলে টাকা রেখে ছবি তুলে বলছ ঘুষ নিয়েছে। তাহলে কী কারও সঙ্গে দেখা করা যাবে না? এই ভাবে ব্ল্যাক’মেলের চেষ্টা চলছে”।

৬. জুন ২০১৩, কামদুনি নৃ’শংস ধ’র্ষ’ণ, এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়েও বিক্ষোভে ফেঁসে সেই ‘ট্রায়াল’, ‘‘চোপ। সব সিপিএম, সব মাও’বাদী, আমাকে খু’ন করার চক্রান্ত হয়েছিল”। ‘ট্রায়ালে’ প্রতিবাদী গ্রামবাসীরা হয়েছিলেন, ‘সিপিএম’ এবং ‘মা’ওবাদী’।

৭. ফেব্রুয়ারি ২০১২, বর্ধমানের কাটোয়ায় চলন্ত ট্রেনে কিশোরী মেয়ের সামনে এক মহিলাকে গণ’ধর্ষ’ণের ঘটনা। সেদিনই ‘ট্রায়াল’, ‘ছোট ঘটনা, এতকিছু হয়নি’।

৮. আগস্ট ২০১২, বেলপাহাড়িতে জনসভা। সভায় যোগ দিয়েছিলেন শিলাদিত্য চৌধুরি। ফসলের দাম নিয়ে অভিযোগ জানানোয়, ‘ট্রায়ালে’ তাঁকে ‘মাও’বাদী’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পুলিশের হাতে গ্রেফতার, ১৪ দিনের জেল হেফাজত। পরে হাইকোর্টে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার।

৯. এপ্রিল ২০১২, কার্টুন কান্ড। অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ফেসবুকে একটি কার্টুন পোস্ট করায়, তা ‘খু’নের চক্রান্ত’ হিসাবে বর্ণনা করে হয়েছিল ‘ট্রায়াল’। অধ্যাপকের বাড়ি আক্র’মণ করে শাসক দল। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন অধ্যাপক। বহু বছর পরে, হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে, মুখ পুড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। সঙ্গে দুই পুলিশ কর্তা সাসপেন্ড। সব ওই ‘ট্রায়াল’ শুনে কাজ করতে যাওয়ার ফল।

১০. মে ২০১০, বাম শাসন। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। ১৪৯ জনের মৃত্যু। পরেরদিন ‘ট্রায়াল’, “গভীর ষড়’যন্ত্র, সিপিএমের হাত আছে”। জ্ঞানেশ্বরী ‘ষড়’যন্ত্রের’ সিবিআই তদন্ত করিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। সিবিআই চার্জশিটে ‘স্যবোটাজ’ বলা হলেও, ‘সিপিএম-র চক্রান্ত’-র তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়েছিল সিবিআই। নৃশং’স সেই ঘটনার পান্ডা বলে যারা চিহ্নিত হয়েছিল, তাদের বেশ কয়েকজন ছিল বর্তমান শাসক দলের কর্মী, যেমন উমাকান্ত মাহাতো।
আরও কত কত ‘ট্রায়ালের’ স্বাক্ষী এই বাংলা। বলেছিলাম না, তদন্ত চলাকালিন ‘ট্রায়ালের’ কথা বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে…১০টা নয় এমন ১০০টা ‘ট্রায়ালের’ খবর লিখতে পারি। তাই বলি, কখনও বিচারের আগেই ‘ট্রায়াল’ করাটা একদম ঠিক নয়…একদম ঠিক কথা বলেছেন আমাদের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, “মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করুন”।

]]>
Big Breaking News, নেহরু-গান্ধি পরিবারের ‘শাসনমুক্ত’ হতে চলেছে কংগ্রেস https://thenewsbangla.com/congress-is-about-to-be-nehru-gandhi-family-rule-free-ashok-gehlot-may-be-congress-president/ Wed, 24 Aug 2022 15:47:21 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=16430 দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশক পরে, নেহরু-গান্ধি পরিবারের শাসনমুক্ত হতে চলেছে কংগ্রেস। সহসা কোনও বড় ধরণের বিপর্যয় না হলে, সনিয়া গাঁধির উত্তরসূরি হতে চলেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। আগামী রবিবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং বৈঠকে নতুন সভাপতি নির্বাচনের নির্ঘন্ট, নিয়মকানুন চূড়ান্ত হতে চলেছে। সনিয়া ও তাঁর পুত্র-কন্যা, নিউইয়র্ক থেকে ভার্চুয়ালি এই সভায় যোগ দেবেন। মেডিকেল পরীক্ষা করাতে, নিউইয়র্কে গিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

হিন্দি বলয়ে কংগ্রেসের অবশিষ্ট প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে, অশোক গেহলট অবশ্যই হেভিওয়েট, প্রশাসন ও সংগঠন দু’য়েতেই তিনি অভিজ্ঞ, ভাবমূর্তি স্বচ্ছ্ব, নরেন্দ্র মোদির মতো তিনিও ওবিসি সম্প্রদায়ভূক্ত। সর্বোপরি তিনি দশ নম্বর জনপথের বিশেষ অনুগত, বলা যায় পরিবারের রিটেইনার। ৭১ বছরের প্রবীণ এই নেতা সেদিক থেকে দেখলে, কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার যোগ্য প্রার্থী বটেই।

এই সেদিন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি থেকে ভাই-ভাতিজা-তন্ত্র নির্মূল করার দর্পিত আহ্বান জানিয়েছিলেন। অবশ্যই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, নেহরু-গান্ধি পরিবার। কংগ্রেসের নেতৃত্বে এমন অর্থবহ পরিবর্তনের পরে, সেই অস্ত্র কিঞ্চিৎ ভোঁতা হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে বিজেপি নেতৃত্বকে পরিবারবাদের কথা বলার সুযোগ দেবেননা বলেই, রাহুল গান্ধি নিজেকে সরিয়ে রাখার কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কংগ্রেসের সভাপতি হলে গেহলট আর রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেননা। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করবেন, কংগ্রেসের সম্ভাবনাময় যুবনেতা শচীন পাইলট। মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে অশোক বনাম শচীনের যে সম্মুখ সমর চলছিল, এই সুযোগে তাতেও যবনিকাপাত হবে। কংগ্রেসের কাছে সেটা স্বস্তিদায়ক ঘটনা।

গেহলট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতবেন না জি-টুয়েন্টি থ্রির বিক্ষুব্ধ শিবির তাদের কোনও প্রার্থী দেবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। দিলে সমানে-সমানে টক্কর হবে না, বরং বিক্ষুব্ধদের মুখেই চুনকালি পড়বে। পরিবারের প্রার্থীর বিরুদ্ধে, কংগ্রেসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অন্যনাম হারাকিরি। ২০০১ সালে জিতেন্দ্র প্রসাদ এবং তারও চার বছর আগে, শরদ পাওয়ার ও রাজেশ পাইলট তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।

সভাপতি বদল হওয়া মানে কংগ্রেস সংগঠনে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ফিরে আসবে, একথা মনে করার কোনও কারণ নেই কেননা দল থাকবে দশ নম্বর জনপথের ছায়াতেই। গেহলটও এমন কোনও কাজ করবেননা, যাতে মাই-বাপেরা ক্ষুব্ধ হন। তবু নেই মামার চেয়ে তো, কানা মামা ভাল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়।

]]>
ইতিহাস বইয়ে নেই, বাংলার হিন্দুদের রক্ষা করেছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায় https://thenewsbangla.com/gopal-mukherjee-saved-the-bengal-hindus-on-16th-august-not-in-history-books/ Tue, 16 Aug 2022 11:39:15 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=16156 বড় বড় নেতা, বুদ্ধিজীবী, সবাই যখন ভয়ে কাঁটা/বোনের সিঁদুর, মায়ের শাঁখা বাঁচিয়েছিল গোপাল পাঁঠা। গভীর চক্রান্তের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা পশ্চিমবঙ্গে, আজ আরও একটা ১৬ই আগস্ট। ১৬ই আগস্ট ১৯৪৬ শুক্রবার, পাকিস্তানের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে অবিভক্ত ভারতে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ বা ‘Direct Action Day’র ডাক দিয়েছিলেন মু’সলিম লীগের নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ। অবিভক্ত বঙ্গে তখন সুহরাওয়ার্দি-র নেতৃত্বাধীন, মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রেখে, ১৬ আগস্ট কলকাতায় মু’সলিম লীগের গু’ন্ডারা, হিন্দুদের ওপর এক ভ’য়াবহ সা’ম্প্রদা’য়িক হা’মলা করে।

কয়েক হাজার হি’ন্দুকে হ’ত্যা করা হয়, হাজার-হাজার হিন্দু নারী ধ’র্ষি’তা হন এবং হি’ন্দুদের সম্পত্তি লু’ঠ করা হয়। একদিন পর ১৭ই আগস্ট গোপাল পাঁঠার নেতৃত্বে হি’ন্দুরা, মুস’লিমদের এই হা’মলা প্রতিহত করে। ১৮ তারিখ সংগঠিত হি’ন্দুদের নেতৃত্বে শি’খ ও বিহা’রীরা কলকাতার মুস’লিম মহ’ল্লাগুলোতে হা’মলা চালিয়ে, এর প্র’তিহিং’সা নেয়। অসংখ্য মু’সলিম মারা যান। গোপাল পাঁঠা ডাক দেন, “মার খাওয়া মানেই শান্তি নয়, অশান্তিকে ঠান্ডা করতে অশান্তির দরকার, আক্রমনের পাল্টা আক্রমন”।

জিন্নার প্রধানমন্ত্রী হবার নেশা ও কংগ্রেসের চরম উদাসীনতার, ফল ভোগ করে অবিভক্ত বাংলার হি’ন্দুরা, কিছুটা মুস’লিমরাও। নেতাদের ব্রেনওয়াশে হি’ন্দু মা’রতে রাস্তায় নামে মুসল’মানরা। মুসলিম আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন কয়েকশো বাঙালি, ঘর ছাড়া হয়েছিলেন আরও প্রায় কয়েক হাজার হিন্দু। রাজাবাজার, সুখিয়া স্ট্রিট, মানিকতলা, ধর্মতলা, সেন্ট্রাল এভিনিউ, চিৎপুর, নারকেলডাঙা, ফুলবাগান, বিবেকানন্দ রোড, ক্যানিং স্ট্রিট, খিদিরপুরের রাস্তা ভিজে ছিল লু’ঠ, খু’ন, ধর্ষ’ণের র’ক্তে। কমলালয় স্টোর্স, ভারতকলা স্ট্রিট, লক্ষ্মী স্টোর্সের লু’ঠের ঘটনা আজও সকলের স্মৃতিতে তাজা রয়েছে।

ইতিহাস বইয়ে নেই, বাংলার হিন্দুদের রক্ষা করেছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায়
ইতিহাস বইয়ে নেই, বাংলার হিন্দুদের রক্ষা করেছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায়

দিকে দিকে যখন বাঙালি হি’ন্দুদের র’ক্ত ঝরছে, তখন একজন এগিয়ে এসেছিল, গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, যিনি জনপ্রিয় ছিলেন গোপাল পাঁঠা নামে। এই বাংলার বাঙালি হিন্দুদের স্বার্থে যিনি এগিয়ে এসেছিলেন, আশ্চর্য লাগে যে আজও ওনার কথা অনেকেই জানেন না বা জানতে দেওয়া হয়না। আমাদের ইতিহাস বইয়ে গোপাল পাঁঠার লড়াই স্থান পায়নি। তাঁর নাম ইতিহাসে রাখা হয়নি।

গোপাল পাঁঠা ওরফে গোপাল মুখার্জী একদল হিন্দু যুবককে নিয়ে যখন রুখে দাঁড়ালেন, তখন একটা কথা পরিষ্কার বলেছিলেন যে, “বাচ্চা, নারী ও নিরস্ত্রদের উপর কোন আক্রমণ নয়”। জানিনা মহাভারতের মত এখনকার যুদ্ধেরও আবার নিয়ম হয় নাকি, বিশেষ করে মুসলিম লীগের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু উনি করেছিলেন। এটাই হিন্দু ধর্মের শিক্ষা। তবু তবু আজও বিশ্ব জুড়ে, শান্তির ধর্ম কিন্তু অন্যই।

আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি গোপাল মুখার্জী বা গোপাল পাঁঠার ব্যাপারে না জানে বা ওনাকে না চেনে, তাহলে সেটা খুব লজ্জাকর হবে আমাদের পক্ষে। যেভাবে উনি জি’হাদি চ’ক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, যেভাবে উনি জিন্না-সোরাবর্দির যুক্তবঙ্গের স্বপ্নে জল ঢেলেছিলেন, তাতে আমাদের ওনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত আজীবন।

]]>
তৃণমূল কি স্বীকার করেই নিল, “আমরা সবাই চোর” https://thenewsbangla.com/tmc-admits-we-all-are-thieves-tmc-protest-rally-against-ed-cbi-tmc-leaders-arrest/ Fri, 12 Aug 2022 05:03:42 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=16082 তৃণমূল কি স্বীকার করে নিল, “আমরা সবাই চোর”। তৃণমূল কি স্বীকার করেই নিল, তারা সবাই চোর? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। দুদিন আগেই বিশ্বের প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রেস কনফারেন্স করে, দলের ৬ নেতা-মন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, পার্থ চোর, কিছু চোর, কিন্তু তৃণমূলের সবাই চোর নয়’। অনুব্রত গ্রেফতার হবার পরে কি, তারা বোকার মত স্বীকার করেই নিল, “আমরা সবাই চোর” ?? দলের কাজ তো তাই বলছে।

পথে নামছে তৃণমূল। দলের দুই হেভিওয়েট নেতা, পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে নয় কিন্তু। ইডি সিবিআই এর দ্বিচারিতার প্রতিবাদে, আজ পথে নামছে তৃণমূল। অর্থাৎ ইডি সিবিআই দুরকম কাজ করছে। তৃণমূলের চোরদের ধরছে আর বিজেপির চোরদের ধরছে না। অর্থাৎ ইডি সিবিআই একটা কাজ ঠিক করছে, অন্য কাজ ঠিক করছে না। এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের।

তৃণমূলের অভিযোগের তীর ইডি সিবিআই এর দ্বিচারিতার দিকে। পার্থ অনুব্রত ববি শোভন কুণাল মদনকে ধরছে, অভিষেককে ডাকছে, অন্যদিকে শুভেন্দু, মুকুল, শঙ্কু এদের ডাকছেও না, ধরছে না। সামনে তৃণমূল থাকলেই চোর ধরছে ইডি সিবিআই। সামনে বিজেপি থাকলে ধরছে না, এটাই ইডি সিবিআই এর দ্বিচারিতা।

আরও পড়ুনঃ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের পর, সিবিআই ইডির নজরে বাংলার আইপিএস-আইএএস

এখন তৃণমূলের সুরে সুর মিলিয়ে সব অভিযোগ মেনে নিয়ে বলি, হ্যাঁ ইডি সিবিআই দ্বিচারিতা করছে। তারা ঠিকঠাক কাজ করছে না। সব চোরদের ধরা উচিত, দল না দেখেই। একদলের চোর ধরে ঠিক কাজ করছ, অন্যদলের চোর ধরেও ঠিক কাজটা করো, এই দ্বিচারিতা কেন? চোর তো চোরই, যে দলেই থাকুক।

কিন্তু তৃণমূল কি ভুলে গেছে, শুভেন্দু, মুকুল, শঙ্কু এরাও তো প্রথমে তৃণমূলেই ছিল। বিজেপির যাদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রধান অভিযোগ, তারা সবাই কিন্তু Made in TMC। চুরি করার সময় তারা তৃণমূলেই ছিল। অর্থাৎ তৃণমূল কিন্তু স্বীকার করে নিল, বর্তমান, প্রাক্তন, আদি, নব্য, সবাই চোর। এখন যেদিকেই থাকুক না কেন। বিষয়টা কি এরকমটাই দাঁড়াচ্ছে না?

আর এটা প্রমাণ করতেই, আজ থেকে দুদিন মাঠে নামবে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা আর তাদের দিদিমণি। যারা বোঝেইনি ইডি সিবিআই দ্বিচারিতা করছে বললে স্বীকার করে নেওয়া হয়, সব তৃণমূলী চোর।

]]>
বাংলায় আওয়াজ উঠে গেল, ‘এই গরু চোর’, ‘এই চাকরি চোর’ https://thenewsbangla.com/west-bengal-people-voice-went-up-cow-thief-job-thief-tmc-leaders-in-problem/ Mon, 08 Aug 2022 14:15:38 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=15944 বাংলায় আওয়াজ উঠে গেল; ‘এই গরু চোর’, ‘এই চাকরি চোর’। ২০২১ মে, সবে একবছর বয়স হয়েছে; ২১১ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসা একটা দলের সরকারের। এক-বছরের মধ্যে সেই দলটার দোর্দণ্ডপ্রতাপ দুই নেতাকে; এই বাংলার মানুষই চিৎকার করে ডাকছে, ‘এই গরু চোর’, ‘এই চাকরি চোর’। অবিশ্বাস্য, ভাবা যায়!?

বাংলার মানুষকে, ভোটারদের যারা ‘গাধা’ ভাবেন; তারা এখনও শুধরে যান। এসএসকেএম হাসপাতালে কিছু সাধারণ মানুষ আজ চিৎকার করে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম প্রিয় নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে রীতিমতো আওয়াজ দিল, “এই গরু চোর”। দুদিন আগেই আলিপুর জেলে, কিছুদিন আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মন্ত্রী থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়-কে; আওয়াজ দিয়েছে “এই চাকরি চোর” বলে।

দুদিন আগেই জোকা ইএসআই হাসপাতালে, বাংলার এক সাধারণ নারী, জুতো ছুঁড়ে মেরেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-কে। পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি; মহিলার বাড়িতেও তৃণমূলের হা’মলা হয়নি। ওই মহিলা, ভাণ্ডার ও ভাতা পান বলেই জানা গেছে। অর্থাৎ ভাণ্ডার-ভাতা দিয়ে, আর বাংলার মানুষের মুখ বন্ধ করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ পাঁচ বছরে উনিশজন তৃণমূল নেতার অস্বাভাবিক সম্পত্তি বৃদ্ধি, ইডিকে পার্টি করল হাইকোর্ট

২০০৬ সালে ২৩৫ আসন পাবার পরে, রাইটার্সে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিরোধীদের ব্যঙ্গ করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন; “আমরা ২৩৫, ওরা শুধু ৩৫”। ২০১১ সালে মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল; সিপিএম সহ বামেদের। আর ২০১৬তে ২১১ আসন দিয়ে ক্ষমতায় আনা তৃণমূলের দুই বড় নেতাকে, প্রকাশ্যে ‘চোর’ বলছে বাংলার মানুষ।

বাংলার আমজনতা-কে ‘Taken For Granted’ করে ডুবেছিল বামেরা। সেই এক জিনিস করল তৃণমূল। ভাণ্ডার আর ভাতায় মানুষকে ভিক্ষা দিয়ে যারা ভেবেছিল, যত খুশি দুর্নীতি করা যাবে; আজ তাদের আওয়াজ দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ‘চোর-চোর’ বলে। বাংলার মানুষের ধৈর্য বেশি, তাঁরা যাদের নির্বাচন করেন, তাদের সময় দিতে পছন্দ করেন। তাই বাম ৩৪ বছর, তৃণমূল ১৫ বছর। কিন্তু জল মাথার উপর উঠলে, কিভাবে ‘খাল কেটে’ জল-জঞ্জাল সাফ করতে হয়, সেটাও তাঁরা বিলক্ষণ জানেন।

আওয়াজ কিন্তু উঠে গেছে; ‘এই গরু চোর’, ‘এই চাকরি চোর’। অপেক্ষা করুন, দুদিন বাদেই আরও শুনতে পাবেন, ‘এই কয়লা চোর’, ‘এই বালি চোর’……
(সম্পাদকীয় লিখলেন, মানব গুহ)

]]>
বাংলার নেতাদের মতই, এবার ‘পাল্টি’ খেলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন https://thenewsbangla.com/nobel-laureate-amartya-sen-acts-like-bengal-politician-regarding-tmc-cpm-bjp-congress/ Sat, 06 Aug 2022 10:08:01 +0000 https://thenewsbangla.com/?p=15855 বাংলার নেতাদের মতই, এবার ‘পাল্টি’ খেলেন; নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। ঠিক বাংলার ‘গদিপ্রিয়’ রাজনৈতিক নেতাদের মতই; এবার ‘পাল্টি’ খেলেন নোবেলজয়ীও। তৃণমূল শিবির ছেড়ে ফের; সিপিএম শিবিরে ফিরে গেলেন অমর্ত্য সেন।

যতদিন রাজ্যে বাম শাসন ছিল; ততদিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন বলে কেউ দেখেনি। উল্টে, বাম সরকারের ‘নীতিগত সমর্থক’ ছিলেন অমর্ত্য সেন। আবার তৃণমূল আসার পরে; তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘মা মাটি মানুষের সরকার’ এর পরামর্শদাতাও ছিলেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার ও বিভিন্ন ভাতা নিয়ে যখন সমালোচনার পাহাড় উঠেছিল; তখনও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ মমতার সমর্থক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রশংসা করেছেন সব সময়।

অন্যদিকে কেন্দ্রে আবার কংগ্রেস সরকারের সমর্থক ছিলেন, এখনও আছেন। বিজেপি আসার পরে সরিয়ে দেওয়া হয় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর থেকেই তিনি বিজেপি বিরোধী; ইস্যু যাই হোক না কেন, নরেন্দ্র মোদীর কট্টর সমালোচক।

‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য থাকাকালীন বিপুল আর্থিক দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণে যুক্ত ছিলেন; নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় এসে; হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁর সমস্ত দুর্নীতি। নালন্দা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অমর্ত্য-কে। তারপর থেকেই মোদীকে অকারণ সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন অমর্ত্য’। এমনটাই বিজেপির অভিযোগ; বাংলার নোবেল জয়ী-কে নিয়ে।

সেই অমর্ত্য সেন, আবার ‘দলবদল’ করলেন। নেতাদের মতই নীতি-আদর্শ চুলোয় দিয়ে। মমতার ‘বিভূষণ’ ফিরিয়ে; সিপিএমের ‘পুরষ্কার’ নিলেন অমর্ত্য। তৃণমূলের চুরি আর দুর্নীতি দেখেই কি, এই ‘দলবদল’? তাঁকে সম্মানিত করতে চেয়েছিল; মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মা মাটি মানুষের সরকার’। কিন্তু প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই দেরি না করে; তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। সেই অর্মত্য সেনই এবার পুরষ্কার নিলেন সিপিএমের কাছ থেকে! সেদিন পর্যন্ত মমতার সঙ্গে থাকা অমর্ত্য; কেন হঠাৎ দলবদল করলেন?

কিছুদিন আগেই রাজ্য সরকারের তরফে কৃতী এবং গুণীজনদের; বঙ্গ সম্মানে সংবর্ধিত করা হয়। অর্মত্য সেনকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন; মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পত্রপাঠ তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; অপমানিত হয়েও চুপ, ঘাসফুল সরকার।

আরও পড়ুনঃ চুরি দেখেই ‘দলবদল’, মমতার ‘বিভূষণ’ ফিরিয়ে সিপিএমের পুরষ্কার নিচ্ছেন অমর্ত্য সেন

এরপরেই গত ৫ আগস্ট, প্রয়াত কমরেড মুজফফর আহমেদের জন্মদিনে; মুজফফর আহমেদ ট্রাস্ট স্মৃতি পুরস্কার নিলেন অমর্ত্য। যে পুরস্কারের দায়িত্বে রয়েছে সিপিএম দল। ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: আ মেমোয়ার’ বা ‘জগৎকুটির’ বইটির জন্য; সম্মানিত করা হল অমর্ত্য সেনকে। “পুরস্কার নেব না”, বলেননি অমর্ত্য।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার নেননি অমর্ত্য। তাঁর তরফ থেকে তাঁর পরিবার জানিয়ে দেয়; তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অন্য কাউকে এই পুরষ্কার দেওয়া হোক’। কয়েকদিনের মধ্যে কি এমন ঘটল; যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন নোবেলজয়ী? কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাত ছাড়লেন; অমর্ত্য সেন?

চারপাশে তৃণমূল নেতাদের এত দুর্নীতি দেখেই কি, এই সিদ্ধান্ত? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। আর এটা শুনেই সদ্য মমতার মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়া বাবুল সুপ্রিয়; কড়া সমালোচনা করেছেন এই অর্থনীতিবিদের। বাবুলের দাবি, “অমর্ত্য সেন তো একজন পর্যটক; একটি রাজনৈতিক রঙের বাইরে বেরতে পারেননি”। এক ‘পর্যটক’ যে দুদিন আগেও বিজেপিতে ছিল; সে কিনা আর এক ‘দলবদলু’-কে ‘পর্যটক’ বলছে! ভাবা যায়!

তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাছে; আর কিছুই পাবার নেই অমর্ত্য সেনের? তাই কি আবার সিপিএম ও পুরনো দল কংগ্রেস এর হাত ধরা? দেখি অমর্ত্য সেন কি বলেন? হাজার হোক তিনি আবার আমাদের ভারতরত্নও; জনগণের টাকায় তাঁর বিমানভাড়া একেবারে ফ্রি। একমাত্র ভারতরত্ন, যিনি টাকার অভাব না হওয়া সত্ত্বেও এই সুবিধা নেন।

লিখলেন মানব গুহ।

]]>
বেমালুম উধাও হয়ে যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-কে ইঞ্জেকশন দেওয়া নার্স রাজদুলারী টিকু https://thenewsbangla.com/nurse-rajdulari-tiku-who-injected-shyama-prasad-mukherjee-goes-missing/ Thu, 23 Jun 2022 06:19:56 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=15678 বেমালুম উধাও হয়ে যান; শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-কে ইঞ্জেকশন দেওয়া নার্স রাজদুলারী টিকু। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হিন্দু মহাসভার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা; এবং জনসংঘ দলের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু; আজও ভারতবাসীর মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। জওহরলাল নেহেরুর আমলে, কাশ্মীরে শেখ আবদুল্লার হাতে ব’ন্দি অবস্থায়; শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর কারণ আজও ভারতবাসীর কাছে রহস্য। কাশ্মীরে জওহরলাল নেহেরু ও শেখ আবদুল্লার পুলিশ কাস্টডিতে; অদ্ভুতভাবে মৃ’ত্যু হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। আর অনেকটাই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মত উধাও হয়ে গিয়েছিলেন; শ্যামাপ্রসাদকে শেষ ইঞ্জেকশন দেওয়া নার্স রাজদুলারী টিকু।

কাশ্মীর উপত্যকার সু’ন্নী মু’সলিমদের একটি অংশের নেতা; শেখ আবদুল্লার সঙ্গে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠে। শেখ আবদুল্লার আবদারে, ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারাটি ঢোকাতে; উঠে পরে লাগেন নেহেরু। এই ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরে থাকবে আলাদা সংবিধান, আলাদা পতাকা; ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশের মানুষ এখানে জমি কিনে থাকতে পর্যন্ত পারবেন না; কোন কাশ্মীরি মেয়েকে বিয়েও করতে পারবে না।

তখনও বাবাসাহেব আম্বেদকরের নেতৃত্বে সংবিধান সভা; সংবিধান রচনার কাজ করছে। আম্বেদকর দেশের অ’খণ্ডতা বিরোধী, জাতীয় স্বা’র্থবিরোধী এই কা’লাকানুন; সংবিধানে ঢোকাতে পরিষ্কার অস্বীকার করেন। তখন নেহরু ঘুরপথে সংসদ হয়ে, এই আইনকে পাশ করিয়ে; সংবিধানে ঢোকাতে বাধ্য করেন। নেহরুর প্রশ্রয়ে ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর নেতা শেখ আবদুল্লা; বাদশাহ-র মতো কাশ্মীর শাসন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ নেহরুর আশীর্বাদ ও সমর্থন নিয়ে; তিনি নিজেকে কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করলেন, মুখ্যমন্ত্রী নয়।

১৯৫২ সাল নাগাদ অবস্থাটা এরকম দাঁড়াল যে, ভারত রাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীরকে যার অবিচ্ছিন্ন অংশ বলে মনে করা হচ্ছে; দুজন প্রধানমন্ত্রী, নেহরু ও আবদুল্লা; দুজন রাষ্ট্রপ্রধান, ভারতের রাষ্ট্রপতি ও কাশ্মীরের সদর-ই-রিয়াসৎ; দুটি সংবিধান, তার মধ্যে কাশ্মীরেরটি তখনও লিখিত হচ্ছে ও দুটি পতাকা। দেশের এই অসম্মানের বিরুদ্ধেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ঘোষণা করেন; “এক দেশ মে দো বিধান, দো প্রধান ঔর দো নিশান নেহি চলেঙ্গে’; এক দেশের মধ্যে দুরকম সংবিধান, দুই প্রধানমন্ত্রী ও দুই পতাকা চলবে না।

আরও পড়ুনঃ বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন ও জানান

ইতিমধ্যেই গোঁ’ড়া সু’ন্নী শেখ আবদুল্লা-র সা’ম্প্রদায়িক ও পক্ষ’পাতদুষ্ট শাসনের ফলে; জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ অঞ্চলের কাশ্মীরি পণ্ডিত, ডোগরা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, শিয়া মুসলিম ও বিভিন্ন উপজাতীয় মু’সলিম জনগোষ্ঠী সবাই তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিল। জম্মুর অবিসংবাদিত নেতা প্রেমনাথ ডোগরা-র নেতৃত্বাধীন জম্মু-কাশ্মীর প্রজা পরিষদের ওপর; শেখ আবদুল্লার পুলিশ ভয়াবহ দ’মনপী’ড়ন, হ’ত্যা, নারী ধ’র্ষণ নামিয়ে আনে। লড়াই শুরু করে কাশ্মীরের হিন্দুরা; তাঁরা ভারতীয় সংবিধান ছাড়া কিছুই মানতে রাজি ছিলেন না।

এই ন্যায্য দাবীকে সমর্থন জানাতেই, ১৯৫৩ সালের ১১ মে পারমিট ছাড়াই; (তখন জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকতে ভারতীয়দের পারমিট করাতে হত) জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকতে গিয়ে জম্মুর মাধোপুর সীমান্তে শেখ আবদুল্লা-র পুলিশ শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে তাঁকে ডাল লেকের তীরে; একটি ছোট্ট কুটিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিনা বিচারে তাঁকে প্রায় ৪০ দিন, আটক করে রাখার পর; কাশ্মীরের একটি হাসপাতালে খুবই রহস্যজনকভাবে ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে মাত্র ৫১ বছর বয়সে শ্যামাপ্রসাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

একথা পরে প্রমাণ হয়েছিল যে, ভারত সরকার বিনা অনুমতিতে; কাশ্মীর প্রবেশের জন্য তাঁকে গ্রেফতার করেনি। আসলে প্রধানমন্ত্রী নেহরু ভয় পেয়েছিলেন। যদি তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কাশ্মীরে ঢুকে; জনসাধারণের কাছে প্রকৃত সত্যটা তুলে। তাহলে চরম বিপদ। বিশেষ করে জনরোষের কবলে পড়বেন তিনি। অতএব তাঁরই নির্দেশে কাশ্মীর সরকার; শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে জন নিরাপত্তা আইনে।

গ্রেফতার করার পরে শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে আসা হয়; কাশ্মীর সেন্ট্রাল জেলে। পরে হঠাৎ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত একটি কুটিরে। শ্যামাপ্রসাদের অপরাধ ছিল, তিনি কাশ্মীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জানতে চেয়েছিলেন; কাশ্মীর-বাসীরা কী চান। কাশ্মীর-বাসীরা কেমন আছেন। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে নিয়েই শুরু করবেন জন আন্দোলন; নেহরু তা মেনে নিতে পারলেন না। অগত্যা শ্যামাপ্রসাদ ও তার দুই সঙ্গীকে একরাতের জন্য, শ্রীনগর সেন্ট্রাল জেলে রাখলেও; পরদিনই তাদের নিয়ে যাওয়া হল এক অজানা জায়গায়। ডাল লেক তীরবর্তী পাহাড়ের খাড়াই চূড়ায় এক ছোট্ট কুটিরে; চারপাশে কোনো বসতি নেই; কোনও চিকিৎসালয় নেই।

কাশ্মীর তাঁর দেখাশনার দায়িত্বে থাকা নার্স রাজদুলারী টিক্কু পরে জানান; সেদিন গভীর রাতে ডাক্তারের নির্দেশ মতো তিনি একটি ইঞ্জেকশন শ্যামাপ্রসাদকে দেওয়ার পর তিনি প্রচণ্ড ছটফট আর চিৎকার করতে লাগলেন, ‘জ্বল যাতা হ্যায়, হামকো জ্বল রাহা হ্যায়’। তারপরেই শ্যামাপ্রসাদ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন ও সব শেষ হয়ে যায়। মৃত্যুর অফিসিয়াল কারণ; হার্ট অ্যা’টাক।

আরও পড়ুনঃ কলকাতা জানতেই পারেনি, তার ‘পাগল প্রেমিক’ ছেড়ে চলে গেল চিরবিদায়ে

২৩ জুন সকালেও ব্যারিস্টার ত্রিবেদী; সুস্থই দেখে গেলেন শ্যামাপ্রসাদকে। দু-একদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে; ছাড়া পেয়ে যাবেন শ্যামাপ্রসাদ; এমনটাই বলা হল। ঐদিনই ভোর পৌনে চারটের সময় ব্যারিস্টার ত্রিবেদীকে খবর দেওয়া হল; শ্যামাপ্রসাদের অবস্থা ভালো নয়। গুরু দত্ত বেদ, টেকচাঁদ, পন্ডিত প্রেমনাথ ডোগরা প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে; ব্যারিস্টার ত্রিবেদী যখন হাসপাতালে পৌঁছলেন ততক্ষণে সব শেষ। হাসপাতালের বক্তব্য ৩.৪০ মিনিটেই মারা গেছেন শ্যামাপ্রসাদ। কিন্তু কীভাবে? কেন?

নার্সের বয়ান অনুযায়ী, ‘যন্ত্রণায় কাতর শ্যামাপ্রসাদকে ইঞ্জেকশন রেডি করে দিয়েছিলেন চিকিত্‍সক; সেই ইঞ্জেকশন শ্যামাপ্রসাদের শরীরে পুশ করেছিলেন নার্স রাজদুলারী টিকু। তারপরেই ছটফট করতে করতে মারা যান; বাংলা ও হিন্দুদের রক্ষাকর্তা শ্যামাপ্রসাদ। শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর পর কাশ্মীরে গিয়ে, নার্স রাজদুলারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন; শ্যামাপ্রসাদের কন্যা সবিতা এবং তাঁর স্বামী নিশীথ। পরিচয় গোপন করেই তারা দেখে এসেছিলেন; পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত সেই কুটির, যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল শ্যামাপ্রসাদকে।

তারপর অনেক অনুসন্ধান করে পৌঁছেছিলেন রাজদুলারীর কাছে। রাজদুলারী সব সত্য ফাঁস করে দিয়ে; ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। বলেছিলেন, “আমি পাপ করেছি, মহাপাপ”। শ্যামাপ্রসাদের মেয়ে সবিতার চোখের জল; তাকে সত্য বলতে বাধ্য করে। তারপরই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান; আর তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন সেই বাড়িতে গিয়ে সবিতাদেবী; আর রাজদুলারীকে দেখতে পাননি। আজও তিনি নিখোঁজ; কেউ জানে না তিনি কোথায়। যেমন নিখোঁজ শ্যামাপ্রসাদের গুরুত্বপূর্ণ ডায়েরি; প্রেসক্রিপশন এবং সেই ইনজেকশনের অ্যাম্পুলটিও।

শুধু সরকারি সত্য হিসেবে বেঁচে আছে; হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান। রহস্যজনক ভাবে, বেমালুম উধাও হয়ে যান; শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-কে শেষ ইঞ্জেকশন দেওয়া নার্স রাজদুলারী টিকু। সারা দেশব্যাপী শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত দাবী করা হলেও; কোন এক অজ্ঞাত কারণে প্রধানমন্ত্রী নেহরু কোনরকম তদন্ত করাতে রাজী হলেন না।

শ্যামাপ্রসাদের মা যোগমায়া দেবী একটি চিঠিতে নেহরুকে লেখেন যে; “আপনি সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। আমি মনে করি আমার পুত্রের অকালমৃ’ত্যুর জন্য; জম্মু-কাশ্মীর সরকার দায়ী। আমি আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছি যে; এই যো’গসাজসে আপনারাও আছেন। কিন্তু সত্য একদিন উদ্‌ঘাটিত হবেই; ও এর জন্য আপনাকে দেশের মানুষ ও ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে হবে”।

]]>
বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন ও জানান https://thenewsbangla.com/shyamaprasad-mukherjee-most-important-role-of-the-creation-of-west-bengal-out-of-pakistan/ Thu, 23 Jun 2022 05:08:08 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=15675 বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের; পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন। ২৩শে জুন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণের দিন। অসংখ্য অজানা সত্য ঘটনা রয়েছে; পশ্চিমবঙ্গের ‘ত্রাতা’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। জেনে নিন, পশ্চিমবঙ্গ তৈরির কথা ও বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের জন্মদাতার ভুমিকার কথা। আপনারা সেই সত্য ইতিহাস জানুন ও জানান।

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বাবা ‘বাংলার বাঘ’; যিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যও বটে; স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তাঁর সুযোগ্য পুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্বাধীনতার আগেই পূর্ব বঙ্গপ্রদেশের অর্থমন্ত্রী; স্বাধীনতার পর নেহেরু সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী। একসময় সামলেছেন; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদও। পরবর্তীতে তৈরি করেন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসঙ্ঘ। যা আজ ভারতীয় জনতা পার্টিতে রূপান্তরিত হয়ে; বর্তমানে ভারতের শাসক দল। এহেন বর্ণময় যার জীবন; তাঁর পশ্চিমবঙ্গের রূপায়ণে ভূমিকার কথা আমরা বাংলার কটা মানুষ মনে রেখেছি?

একটু শুরু থেকে শুরু করা যাক। ১৯৩৫ এর ভারত শাসন আইন অনুযায়ী; বাংলাকে স্বতন্ত্র প্রদেশের মর্যাদা দেওয়া হয়। স্বাধীনতা পূর্বে মু’সলিম লীগ সবসময় চেয়ে এসেছিল; বাংলা যাতে ভাগ না হয়। এবং বাংলার পুরোভাগই যাতে; ধ’র্মের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া দেশ পা’কিস্তানের অন্তর্গত হয়। তার সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল মুসলিম লীগ। কারণ স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে; পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের আলাদা বিভাজন ছিল না।

স্বতন্ত্র প্রদেশ হবার দরুন এবং সামগ্রিকভাবে অখন্ড বাংলায় মু’সলিম অ’ধ্যুষিত হবার কারনে; সমগ্র বাংলার পা’কিস্তানে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায় মু’সলিম লীগ। কিন্তু অখন্ড বাংলার পশ্চিমাংশ ছিল হি’ন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। মু’সলিম লীগের দাবির মুখে বাংলার পশ্চিমাংশের জনগনের ত্রাতার ভূমিকায়; অবতীর্ণ হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বাংলার পশ্চিমাংশের এই সংকটের সময়ই; পশ্চিমবাংলার রক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভাব হল তাঁর।

প্রথমে ভারত ভাগের প্রবল বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও; পরে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বুঝতে পারেন, মু’সলিম লীগের দেশভাগের মরিয়া নীতি এবং ধ’র্মের উ’স্কানির সামনে ভারত ভাগ এক অনিবার্য পরিণতি হতে চলেছে। তখনই তিনি ঠিক একই দাবি নিয়ে; বাংলা ভাগের দাবি তুলে পশ্চিমভাগকে ছি’নিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর হন। ১৯০৫ সালে প্রথম বাংলা ভাগের সময়; ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কারণ দেখিয়েছিল পরবর্তীতে মূলত পশ্চিমভাগের চাপে ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। কিন্তু দ্বিজাতি তত্বের ওপর ভিত্তি করে; ভারত ভাগের সময় বাংলার বিভাজনও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন; কলকাতা জানতেই পারেনি, তার ‘পাগল প্রেমিক’ ছেড়ে চলে গেল চিরবিদায়ে

সেই সময় বঙ্গ প্রদেশের মু’সলিম লীগ নেতা; হোসেন সুরাবর্দী স্বাধীন বাংলার দাবি তুললেন। যা ভারত কিংবা পা’কিস্তান কারোর সাথেই যাবেনা। সুরাবর্দী জানতেন যে বাংলা ভাগ হলে; অর্থনৈতিক ভাবে পূর্ব ভাগের ক্ষতি। কারণ কয়লা খনি, পাটকল, শিল্প প্রভৃতির বেশির ভাগটাই পশ্চিমভাগে পড়ছে। তারপর তৎকালীন ভারতের সবচেয়ে বড় শহর, বন্দর ও বাণিজ্য নগরী কলকাতাও হাতছাড়া হতে চলেছে। কিন্তু মুশকিল হলো, তার এই নীতি তার দলের নীতির বিরদ্ধে যাচ্ছিল।

প্রথম দিকে বর্ধমানের মু’সলিম লীগ নেতা আবুল কাশিম; তাকে সমর্থন করে। কিন্তু অন্য দুই নেতা নুরুল আমিন ও আক্রম খান এর বিরোধিতায় সরব হলো। অবাক করে মহম্মদ আলি জিন্নাহ ব্যপারটির গুরুত্ব বুঝে; তাকে নীরবে সমর্থন দিলেন। শুরু হল লড়াই। কংগ্রেস নেতৃত্ব তৎক্ষনাৎ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করল। গুটিকয়েক নেতা এর সমর্থন করলেন; যার মধ্যে ছিলেন নেতাজির দাদা শরৎ বোস ও কিরণ শংকর রায়। পন্ডিত নেহেরু এনং সর্দার প্যাটেল; এরকম দাবি উড়িয়ে দিলেন।

প্রবল বিরোধিতা শুরু করলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বোঝালেন এটা মু’সলিম লিগের চাল। মর্যাদাপূর্ণ কলকাতা হাতছাড়া হওয়া ও পশ্চিমভাগের দখল হারানোর ভয়ে; মু’সলিম লীগ তথা জিন্না সুরাবর্দীকে ঢাল করে এই চাল চেলেছেন। স্বাধীন বঙ্গ আসলে পা’কিস্তানের প্রভাবেই চলবে। তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হবে। তিনি আরও বললেন, তিনি আলাদা পশ্চিমবঙ্গ চান; যা জিন্নার তথা পা’কিস্তানের প্রভাব থেকে সর্বৈব মুক্ত হবে।

পা’কিস্তানের হাত থেকে বাংলার পশ্চিম অংশকে রক্ষা করতে; তিনি মরিয়া হয়ে উঠলেন। এই দাবির ভিত্তিতে বাংলার বিধানসভায়; ৩টি পৃথক ভোট সংগঠিত হয়েছিল। কি কি সেশন; কারা ভোট দিয়েছিল; কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; সেই তিনটি ভোট থেকে? দেখুন একনজরে।

১) জয়েন্ট সেশন; এখানে সমস্ত সদস্যদের ভোটে ১২৬-৯০ ব্যবধানে ভারতীয় কন্সটিটুয়েন্ট এসেম্বলিতে যোগদানের বিপক্ষে রায় দেওয়া হল।
২) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার সদস্যদের সেশন; এখানে ১০৬-৩৫ ভোটে বাংলা ভাগের বিপক্ষে রায় দেওয়া হল। এবং পরিবর্তে পাকিস্তানের কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলিতে যোগদানের পক্ষে মত দেওয়া হল।
৩) অমুসলিম এলাকার সদস্যদের সেশন; এখানে ৫৮-২১ ভোটে বাংলা ভাগের পক্ষে রায় গেল। মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান অনুযায়ী; বাংলা ভাগের পক্ষে যেকোন সেশনের একটির সিঙ্গেল মেজরিটি ভোটের ফলস্বরূপ; বাংলা ভাগের পক্ষে সায় দেওয়া হল।

বাউন্ডারি কমিশনের প্রধান স্যার রাডক্লিফের তত্বাবধানে; শুরু হল বঙ্গ বিভাজনের তোড়জোড়। ঠিক হল, ১৪ ও ১৫ ই আগস্ট যথাক্রমে পা’কিস্তান ও ভারতকে স্বাধীনতা হস্তান্তর করা হবে; ১৯৪৭ এর ভারত স্বাধীন আইন অনুসারে।

জিন্নার ডাইরেক্ট একশন ডে, দা’ঙ্গা’র রাজনীতি এবং ধ’র্মীয় বি’ভাজনকা’মী এ’জেন্ডা দেখে; শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন; বাংলার সংখ্যাল’ঘু অমু’সলিমরা ধ’র্মীয় কারণে বিভক্ত পা’কিস্তানে সুরক্ষিত নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের দাবি থেকে তিনি সরেন নি। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে; তিনি নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন; পশ্চিমবঙ্গের প্রাণপুরুষ হিসেবে।

সম্পাদকীয় লিখলেনঃ অভিরূপ চক্রবর্তী (লেখা ও তথ্য সম্পূর্ণ লেখকের)

]]>
গভীর চক্রান্তের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা পশ্চিমবঙ্গের আজ জন্মদিন https://thenewsbangla.com/west-bengal-birthday-dr-shyama-prasad-mookerjee-creator-of-west-bengal/ Mon, 20 Jun 2022 06:49:40 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=15545 গভীর চক্রান্তের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা; পশ্চিমবঙ্গের আজ জন্মদিন। আজ ২০ শে জুন, পশ্চিমবঙ্গের জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২০ শে জুন, অফিসিয়ালি পশ্চিমবঙ্গের জন্ম হয়েছিল; অভিব্যক্ত বাংলা ভেঙে। যে বাংলা ভাগ আটকানোর জন্য বাঙালিদের লড়াই, রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধন; সেই বাংলা ভাগ হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব বাংলায়। শুনতে খুব খারাপ লাগলেও, ভাগ হয়েছিল হি’ন্দু অধ্যুষিত বাংলা ও মু’সলিম অধ্যুষিত বাংলার; আর তাই আজ আমরা ভারতে, না হলে হয় থাকতাম পাকিস্তানে বা বাংলাদেশে।

১৬ই আগস্ট ১৯৪৬ শুক্রবার, পাকিস্তানের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে অবিভক্ত ভারতে; ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ বা ‘Direct Action Day’র ডাক দিলেন মু’সলিম লীগের নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ। অবিভক্ত বঙ্গে তখন সুহরাওয়ার্দি-র নেতৃত্বাধীন; মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রেখে; ১৬ আগস্ট কলকাতায় মু’সলিম লীগের গু’ন্ডারা হিন্দুদের ওপর এক ভ’য়াবহ সা’ম্প্রদা’য়িক হা’মলা করে। কয়েক হাজার হি’ন্দুকে হ’ত্যা করা হয়; হাজার হাজার হিন্দু নারী ধ’র্ষি’তা হন এবং হি’ন্দুদের সম্পত্তি লু’ঠ করা হয়।

“মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম”; তখন গঙ্গায় দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছিল। ১৭ই আগস্ট গোপাল পাঁঠার নেতৃত্বে হি’ন্দুরা; মুস’লিমদের এই হা’মলা প্রতিহত করে। ১৮ তারিখ সংগঠিত হি’ন্দুদের নেতৃত্বে শি’খ ও বিহা’রীরা; কলকাতার মুস’লিম মহ’ল্লাগুলোতে হা’মলা চালিয়ে, প্র’তিহিং’সা নেয়।

কলকাতা দা’ঙ্গার প্রতি’শোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়; অবিভক্ত বাংলার নোয়াখালিতে। তখন পূর্ববঙ্গের এই জেলাতে হি’ন্দুরা ছিল; মোট জনসংখ্যার ১৮%। ১৯৪৬-এর ১০ই অক্টোবর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন, উৎসবমুখর হিন্দু বাড়িগুলিতে; এক ভয়ং’কর বিভী’ষিকা নেমে আসে। শুরু হয়, গ’ণহ’ত্যা, লু’ঠ, বাড়িতে আ’গুন দেওয়া, অ’পহর’ণ, ব্যাপকহারে নারী ধ’র্ষ’ণ; মহিলাদের তু’লে নিয়ে গিয়ে আ’টক করে রাখা এবং ব’লপূর্ব’ক ধ’র্মান্ত’করণ।

প্রাক্তন বিধায়ক মৌলানা গোলাম সারওয়ার ছিলেন; এই গ’ণহ’ত্যার মাস্টারমাইন্ড। প্রায় দশহাজার হি’ন্দুকে হ’ত্যা করা হয় নোয়াখালিতে। এর থেকেও বেশি মানুষকে জোর করে ধ’র্মান্ত’রিত করা হয়; এবং গো’মাং’স খেতে বাধ্য করা হয়। গোটা জেলায় এমন কোনও হি’ন্দু বাড়ি ছিল না; যার অন্তত একজন মহিলা ধ’র্ষিতা বা অপ’হৃতা হননি।

কলকাতার দা’ঙ্গা ও নোয়াখালির গ’ণহ’ত্যার অভিজ্ঞতা থেকে, কলকাতার বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও শুভবুদ্ধিযুক্ত বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারেন যে; হি’ন্দুরা শত চেষ্টা করলেও মু’সলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অসম্ভব, যেখানে মু’সলিমরা সংখ্যাগুরু। আর দুই বঙ্গ মিলিয়ে তখন; মু’সলিমরাই সংখ্যাগুরু।

মুস’লিম লীগ নেতৃত্ব প্রথমে কলকাতা সহ সমগ্র বাংলাকেই; পা’কিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। কংগ্রেসী নেতৃত্বও এই বিষয়ে কিছু মনঃস্থির করতে পারছিলেন না। কিন্তু পা’কিস্তানে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিরুদ্ধে, বাঙালি হি’ন্দু জনমত প্রবল থাকায়; মু’সলিম লীগ নেতৃত্ব অন্য চাল দেয়। সমগ্র বাংলাকে পা’কিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা অসম্ভব বুঝে; মুস’লিম লীগ নেতা ক’ট্টর ধ’র্মা’ন্ধ সুহরাওয়ার্দি হঠাৎ বাঙালির ভেক ধারণ করলেন। তিনি বললেন- “দুই বাংলা নিয়ে অখণ্ড বঙ্গ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হোক; যা কিনা ভারত-পা’কিস্তান কোনপক্ষেই যোগদান করবে না”।

কিন্তু অখণ্ড বাংলাতেও বাঙালি হি’ন্দুরা সংখ্যাল’ঘু হত; জিন্নাহও এই প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। অনুমান করা যেতেই পারে, এই অখণ্ড বঙ্গ; পরবর্তীকালে পা’কিস্তানে যোগ দিত। যাই হোক, সুহরাওয়ার্দির পাতা ফাঁ’দে পা দিলেন; কংগ্রেসের দুই বর্ষীয়ান বাঙালি নেতা শরৎচন্দ্র বসু ও কিরণশঙ্কর রায়। মাত্র কয়েকমাস আগে ঘটে যাওয়া কলকাতা দা’ঙ্গা ও নোয়াখালি গ’ণহ’ত্যায়; সুহরাওয়ার্দির ভূমিকার কথা তাঁরা ভুলে গেলেন।

এখানেই খেলা শুরু হল; শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর। যে মুহূর্তে তিনি বুঝতে পারলেন যে, বাঙালি হি’ন্দু জাতটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাকে ভাগ করা; সেই সময় থেকেই তিনি তাঁর সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করলেন বাঙালি হি’ন্দুদের বিষয়টি; মানুষকে বুঝিয়ে জনমত তৈরি করার জন্য।

১৯৪৭-এর ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি হি’ন্দু মহাসভার নেতৃত্বে; একটি কমিটি গঠন করেন এবং তিনি নিজে সারা বাংলা চষে বেড়াতে লাগলেন; এবং বড় বড় জনসভায় ভাষণ দিয়ে মানুষকে বাংলা ভাগের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে লাগলেন। তিনি কংগ্রেসের কাছে আবেদন রাখলেন যে; তারাও যেন এই দাবিকে সমর্থন জানায়।

পশ্চিমবঙ্গ হতে কারা ভোট দিয়েছিলেন আর আটকাতে কারা ভোট দিয়েছিলেন
পশ্চিমবঙ্গ হতে কারা ভোট দিয়েছিলেন আর আটকাতে কারা ভোট দিয়েছিলেন

১৯৪৭-এর ১৫ই মার্চ কলকাতায় হিন্দু মহাসভা; একটি দু’দিন ব্যাপী আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে লর্ড সিনহা, রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ভবতোষ ঘটক, ঈশ্বরদাস জালান, হেমেন্দ্রচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ঠজন ছাড়াও; হি’ন্দু মহাসভার সঙ্গে সম্পর্কশূন্য বহু মানুষও উপস্থিত হন। এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গৃহীত হল যে; বাংলা প্রদেশের হি’ন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিকে নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠন করতে হবে। এই সভায় একটি কমিটিও গঠিত হল, যাদের কাজ হবে একটি স্মারকলিপি প্রস্তুত করা; যা সরকারের কাছে পেশ করা হবে।

বাংলা ভাগ করা উচিত কিনা এই প্রসঙ্গে ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’; ১৯৪৭-এর ২৩-এ মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত একটি জনমত সমীক্ষা করে। ফলাফল ঘোষিত হয় ২৩-এ এপ্রিল। এতে মোট ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৪৯টি উত্তর আসে; এর মধ্যে ১.১% উত্তর বাতিল হয়। বাকি উত্তরের মধ্যে ৯৮.৩% বাংলা ভাগের পক্ষে ও ০.৬% বিপক্ষে মত দেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ০.৪% ছিল মু’সলমান। অর্থাৎ, এ সময়ে বাঙ্গালী হি’ন্দুরা প্রায় সকলেই; বাংলা ভাগের পক্ষে ছিলেন তা বোঝা যায়।

১৯৪৭-এর ২৩-এ এপ্রিল শ্যামাপ্রসাদ বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে একটি বৈঠকে তাঁকে বুঝিয়ে বলেন; কেন বাংলা ভাগ করা দরকার। এই পরিকল্পনা বোঝানোর জন্য তিনি প্রচুর দলিল-দস্তাবেজ এবং মানচিত্র তৈরি করেছিলেন; এবং এইগুলি বড়লাটের আপ্তসহায়ক লর্ড ইসমে-র কাছে দিয়ে আসেন।

১৯৪৭-এর মে মাসে হি’ন্দু মহাসভা ও কংগ্রেস একত্রে একটি জনসভা ডাকে; যার সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য স্যর যদুনাথ সরকার। ১৯৪৭-এর ২ মে শ্যামাপ্রসাদ; লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে একটি দীর্ঘ পত্র লেখেন। এই তথ্যনির্ভর পত্রে তিনি বাংলাভাগের পক্ষে যুক্তি দেন। এই চিঠিতে বাংলা ভাগের দাবী করে, শ্যামাপ্রসাদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লেখেন যে; ‘‘Sovereign undivided Bengal will be a virtual Pakistan”।

তখন কলকাতার ব্রিটিশ মালিকানাধীন দৈনিক ‘The Statesman’ ১৯৪৭-এর ২৪-এ এপ্রিল, ‘‘Twilight of Bengal’’ শিরোনামে একটি সংবাদে লেখে; গত ১০ সপ্তাহের মধ্যে বাংলা ভাগ করার আন্দোলন একটি ছোট মেঘপুঞ্জের আকার থেকে একটি বিশাল ঝড়ের আকার নিয়েছে; এবং এই ঝড় পুরো প্রদেশ জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে; যদিও এর কেন্দ্রভূমি হচ্ছে কলকাতা। এই ঝড় আরম্ভ করেছিল হি’ন্দু মহাসভা।

ইতিমধ্যে শরৎ বসু ও আবুল হাশিম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার; একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করেন। বর্ধমানের মানুষ এই আবুল হাশিম ছিলেন বাংলা মুস’লিম লীগের সেক্রেটারি; যিনি কলকাতা দা’ঙ্গার আগে খুব স্পষ্ট ভাষায় ‘হিন্দু খু’ন’ করতে উ’স্কা’নি দিয়েছিলেন।

এই খসড়া সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী সব সময়েই হবেন একজন মু’সলিম; এবং সংবিধান প্রণয়নের জন্য যে সমিতি থাকবে তাতে ৩০ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি (১৬ জন) হবেন মু’সল’মান। অর্থাৎ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলায় হি’ন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখার; একটি পাকাপোক্ত বন্দোবস্ত করে রাখা হয়। যা পত্রপাঠ বাতিল করে দেন শ্যামাপ্রসাদ।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এইসময় চেষ্টা করছিলেন, সুহরাওয়ার্দি-বসু-হাশিম ত্রয়ীর; এই ভয়ং’কর পরিকল্পনাকে বানচাল করতে। ১৯৪৭ সালের মে মাসের প্রথম দিকে; গান্ধী ও নেহরু-কে তিনি বাংলা ভাগের পক্ষে বললে তাঁরা খুব একটা নির্দিষ্ট করে কিছু জানান নি।

১৯৪৭-এর ১৩ই মে শ্যামাপ্রসাদ সোদপুরে গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন; এবং সুহরাওয়ার্দির যুক্তবঙ্গের পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চান। গান্ধী বলেন, তিনি এখনও মনঃস্থির করে উঠতে পারেন নি। শ্যামাপ্রসাদ যখন গান্ধীকে জিজ্ঞাসা করেন; তিনি বাংলা ছাড়া ভারতবর্ষকে কল্পনা করতে পারেন কি না? স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে গান্ধী এর কোন উত্তর দেন নি।

হিন্দু মহাসভা বাংলা ভাগের দাবি নিয়ে সোচ্চার হতেই, কংগ্রেসিরা দেখল তাদের ভোটার যারা; সেই হি’ন্দুরা (বাংলার মুসলিমরা প্রায় সকলেই মু’সলিম লীগের সমর্থক ছিল) তাদের ন’পুংস’কতায় ক্ষুব্ধ হয়ে হি’ন্দু মহাসভার পতাকাতলে সমবেত হচ্ছে। তখনই বাংলার কংগ্রেস দল নড়েচড়ে ওঠে। তারাও তখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের মতামতের তোয়াক্কা না করে; হিন্দু মহাসভার প্রস্তাবানুসারেই বাংলার হি’ন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মু’সল’মান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের জন্য দুটো আলাদা মন্ত্রীসভা গঠনের দাবি তোলে ১৯৪৭-এর ৪ঠা এপ্রিল।

বাংলার আঞ্চলিক কংগ্রেস নেতৃত্ব শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্য মনীষীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে; বাঙালি হি’ন্দুর স্বার্থরক্ষায় ব্রতী হয়। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ১৯৪৭-এর ২০-এ জুন; বঙ্গীয় আইন পরিষদের পশ্চিম অংশের সদস্যরা বাংলার দ্বিখণ্ডীকরণ করে; বাঙালি হি’ন্দুর হোমল্যান্ড বা পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাব ৫৮-২১ ভোটে পাশ করান।

বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর পুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ গঠনে ভূমিকা নিয়ে; অনেকেই বলেন “তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি”।
নেহেরু একবার শ্যামাপ্রসাদকে বলেছিলেন যে; “আপনিও তো দেশভাগ সমর্থন করেছিলেন”। উত্তরে শ্যামাপ্রসাদ বলেন, ‘‘আপনারা ভারত ভাগ করেছেন; আর আমি পাকিস্তান ভাগ করেছি”।

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং পশ্চিমবঙ্গের অস্থায়ী রাজ্যপাল ফণিভূষণ চক্রবর্তী লিখেছেন যে; “শ্যামাপ্রসাদ তাঁর সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার প্রস্তাব প্রতিরোধ করতে সমর্থ হলেন; এবং দেশভাগের ভিতর আরেকটা দেশভাগ করিয়ে দিলেন”।

চক্রান্তের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা; আমাদের সেই পশ্চিমবঙ্গের আজ জন্মদিন। নিজে জানুন ও অন্যকে জানান ইতিহাসে চেপে যাওয়া সব তথ্য।

]]>