কাঁথি ও তমলুকের দুই সাংসদকে বলা হয়েছে; উপরাষ্ট্রপতি পদে ভোটদানে বিরত থাকছে তৃণমূল। কেন চিঠি দিয়ে জানানো হল; এই দুজনকে? কারণ, আগেই এনডিএ প্রার্থী জগদীপ ধনকড়ের পক্ষে; সওয়াল করেন শিশির অধিকারী। তৃণমূলের অনুমান, ধনকড়কেই ভোট দেবেন অধিকারী পরিবারের দুই সাংসদ শিশির ও দিব্যেন্দু। সেই কারণেই দলের অবস্থান জানিয়ে দুই সাংসদকে চিঠি।
আরও পড়ুনঃ চুরি দেখেই ‘দলবদল’, মমতার ‘বিভূষণ’ ফিরিয়ে সিপিএমের পুরষ্কার নিচ্ছেন অমর্ত্য সেন
কেন বিরোধীদের মহিলা প্রার্থী মার্গারেট আলভা-কে; ভোট দিচ্ছে না মমতার তৃণমূল? কেন এতদিন তুমুল বিরোধিতা করা ধনকড়ের বিরুদ্ধে ভোট দেবে না ঘাসফুল? উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে বেঙ্কাইয়া নাইড়ুর মেয়াদ; শেষ হচ্ছে শনিবার; তাই নয়া উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এনডিএ পক্ষের প্রার্থী জগদীপ ধনখড় এবং অ-বিজেপি জোট প্রার্থী মার্গারেট আলভা।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন; “শেষ-মুহূর্তে মার্গারেট আলভার নাম বিরোধীপক্ষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যে দলের ৩৫ জন সাংসদ রয়েছে; সেই দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে”। তাই প্রতিবাদ-স্বরূপ সর্বসম্মতিক্রমে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়ায়; অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।
]]>জুন মাসের শুরুতেই, রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে; রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে এই সিদ্ধান্ত; বিধানসভায় এই মর্মে বিল আসবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই অনুযায়ী ১৩ই জুন সোমবার, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাদল অধিবেশনে; মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের ৩১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করতে পেশ হয় বিল। প্রায় ২ ঘণ্টা বিতর্কের পর; ভোটভুটিতে প্রত্যাশিতভাবেই পাশ হয়ে যায় বিলটি।
পরের দিন ১৪ই জুন মঙ্গলবার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপালের জায়গায়; উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীকে ভিজিটর পদে বসাতে বিধানসভায় বিল পাস হয়। বিধানসভায় বিল পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু; এই বিলে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটর হবেন রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য বা নথি চাইতে পারবেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ বেমালুম উধাও হয়ে যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-কে ইঞ্জেকশন দেওয়া নার্স রাজদুলারী টিকু
১৬ই জুন প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে; মুখ্যমন্ত্রীকে বসানো সংক্রান্ত বিলও পাস হয়েছে বিধানসভায়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরও আচার্য হবেন মুখ্যমন্ত্রী; এই বিল আনার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে মন্ত্রিসভায়। অর্থাৎ রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থা থেকেই, রাজ্যপালকে সরানোর জন্য একের পর এক বিল আনছে; মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।
এতদিন, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে; ল্যান্ড রিফর্ম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং জুডিশিয়াল মেম্বারদের নিয়োগ করতেন রাজ্যপাল। এবার, রাজ্যপালের সেই ক্ষমতা খর্ব করার প্রক্রিয়া শুরু হল; এরজন্যও আসছে নতুন এক বিল। এরপরেই রাজ্য সরকারকে একহাত নেন শুভেন্দু অধিকারী; বলেন, “মানুষের জন্য নয়, শুধু রাজ্যপালকে বিভিন্ন জায়গা থেকে সরাতেই; একের পর এক বিল মমতার”। “রাজ্যপাল থেকেও বিজেপির হয়ে কাজ করছে; তাই কি গায়ে লাগছে”; বক্তব্য তৃণমূল নেতাদের।
]]>ধনকড়ের জায়গায় মমতাকে বসানোর আরও একটি বিল পাস; রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন আনার রাস্তায়; আরও এক ধাপ এগোল মা মাটি মানুষের সরকার। রাজ্যপাল নন, রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যর আসনে বসানো হোক মুখ্যমন্ত্রীকে; এই মর্মে সোমবার বিল পাস হয়েছে বিধানসভায়। বুধবার পাস হল প্রাণি ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য পদেও; মুখ্যমন্ত্রীকে বসানো সংক্রান্ত বিল। এই নিয়ে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের জায়গায়; মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বসানো নিয়ে সংশোধনী বিল পাস হল বিধানসভায়।
আরও পড়ুনঃ ‘তৃণমূল-বাম সেটিং’, প্রাথমিক টেট দুর্নীতি, চাকরি গেল সিপিএম নেতার মেয়েরও
এই বিলের ওপর আলোচনার সময়, রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনায় করে, গেরুয়া শিবিরের বিধায়করা প্রশ্ন তোলেন; “যাঁর হাতে এতগুলো দফতর, সেইসব দফতর সামলানোরই সময় নেই; এতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় সামলাবেন কী করে”? বিজেপির অভিযোগ, “রাজ্যের শিক্ষায় দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি; সেই দুর্নীতিকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্যপাল দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন বলেই; তৃণমূলের এত সমস্যা”।
তৃণমূল বিধায়করা পাল্টা অভিযোগ করেন; রাজ্যপাল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলেন; বছরে একবার যান সমাবর্তনে। বাকি কোনও কিছুতে যুক্ত থাকেন না; মুখ্যমন্ত্রী অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন; তাই এটাই এখন দরকার”। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন; “প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ আগে কী অবস্থায় ছিল; আর এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাত ধরে কী হয়েছে, সেটা দেখতে হবে?
আরও পড়ুনঃ পিএসসি-তে নিয়োগ কয়েকহাজার, প্রকাশিত নামের তালিকা, ‘মামলার আ’শঙ্কা’
এরপর ভোটাভুটিতে অংশ না নিয়ে; বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধনী বিলটি আলোচনার পরে, ভোটের সময় গতকালের মতো আজকেও; ভোটাভুটিতে গো-হারা হারবেন বলে অংশ নেয়নি”। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য; “জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলস ডিগ্রি নিয়ে তিনি হবেন আচার্য? আমরা মানি না। কেন ডক্টরেট ডিগ্রি; লিখতে পারেন না উনি”?
বিধানসভায় পাস হওয়ার পর; বিল যাবে রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপাল সই করলে; বিল পরিণত হবে আইনে। বিধানসভায় বিল পাস হওয়ার পর; এখন রাজ্যপাল কী করেন, সেদিকেই নজর সব মহলের। শুভেন্দু অধিকারী এই নিয়ে বলেছেন, “আমরা রাজ্যপালকে অনুরোধ করব বিলটি কেন্দ্রকে পাঠান; কোনওদিন এই বিল আর পাস হবে না। যেমন বঙ্গ বিল কোনওদিন পাস হবে না; যেমন বিধান পরিষদের অবস্থা হয়েছে”।
]]>রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে চিঠি দিয়ে, বাংলার পরিস্থিতি সামলাতে; ভারতীয় সেনা বা আধা-সেনা নামানোর আর্জি জানালেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগ তুলে; মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলেন শুভেন্দু। বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, “রাজ্যের প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ; পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে। প্রতিবাদের নামে বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিশৃ’ঙ্খলা”।
একই সঙ্গে বিজেপি পার্টি অফিসে অগ্নি-সংযোগের ঘটনা নিয়ে; সরব হন বিরোধী দলনেতা। এই অবস্থায়, শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন; রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। সেই চিঠিতেই তিনি রাজ্যের এই পরিস্থিতি সামলাতে; ভারতীয় সেনা বা আধা সেনা নামানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় সড়ক অবরোধে প্রশাসন চুপ, কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের জনস্বার্থ মামলা
শুভেন্দু বলেন, “সিপিএমের সবসময় নিন্দা করে বলব, রিজয়ানুরের ঘটনার পরে আধঘণ্টার মধ্যে; মিলিটারি নামানো হয়েছিল। ভারতীয় সেনাই; মানুষের জীবন-সম্পত্তি রক্ষা করেছিল সেইসময়। আজ উলুবেড়িয়া নিমদিঘি থেকে পাঁচলা পর্যন্ত; কয়েকশো গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাড়ি ভাঙা হচ্ছে, পোড়ানো হচ্ছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা; হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। ভারতীয় সেনা বা আধা-সেনা নামিয়ে মানুষের জীবন সম্পত্তি রক্ষা করার; আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি রাজ্যপালকে”।
শুভেন্দু আরও বলেন, “বিজেপি-র জেলা কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙ’চুর করা হয়েছে; আগুন ধরানো হয়েছে। এতেই প্রমাণ হচ্ছে নির্বাচন পরবর্তী হিং’সা; আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। কারণ বিজেপির কর্মসূচি-গুলিতে; আবারও মানুষজন বেরোতে শুরু করেছেন। এসএসসি থেকে নানা দুর্নীতিতে সরকার নিমজ্জিত; মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এই মুখ্যমন্ত্রী হল; স্লিপিং চিফ মিনিস্টার। দূষণ এবং তুষ্টি’করণ এর সমস্ত সীমারেখা উনি পার করে দিয়েছেন”।
]]>শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের; আচার্য হবেন মুখ্যমন্ত্রী। আজকে রাজ্যের মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে”। বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে, সংক্ষিপ্ত এক সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বসু বলেন; “আজকে রাজ্যপালের জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীকে; রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য নিয়োগের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এরপর বিষয়টি বিল আকারে, বিধানসভায় পেশ করা হবে; তার পর আইনের আকার নেবে এই প্রস্তাব।
আরও পড়ুনঃ ট্যাংরার ট্রাক ভর্তি লোকের শাস্তি হয়নি, বেঁচে ফিরে নতুন জন্ম দিচ্ছেন পরিবহ মুখোপাধ্যায়
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের জেরে রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বন্দ্ব; নতুন শিখরে পৌঁছল বলেই মনে করছেন অনেকে। সংশোধিত আইনটি কার্যকর হলে, রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের; আচার্য বা চ্যান্সেলর পদে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অর্থাৎ রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্র-কে, রাজভবনের ঘেরাটোপ থেকে; বের করে আনতে তৎপর হল রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুনঃ ঘটা করে শিল্প সম্মেলনই সার, শিল্পে দেশের মধ্যে ‘পিছিয়ে বাংলা’
তবে আইনজ্ঞরা বলছেন; বিষয়টি অতটা সহজ নয়। রাজ্যপালকে সরাতে বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে; সেই বিল পাঠাতে হবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেই। আর তাতে রাজ্যপাল সই না করলে; অর্ডিনান্স জারি করতে হবে সরকারকে। কিন্তু ২ দফার বেশি জারি করা যাবে না, একই অর্ডিন্যান্স। ততদিনে ধনখড়ের রাজ্যপাল হিসাবে, মেয়াদও ফুরিয়ে যাবে; তারপর এই বিলের প্রাসঙ্গিকতা নাও থাকতে পারে।
রাজ্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের কথা জেনে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন; “মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলেই যদি এত টাকা থাকে, তাহলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে; না জানি কত টাকা রয়েছে। তাই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন; কলঙ্কের এটুকুই বা আর বাকি থাকে কেন”? বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন; “একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ এই সরকার; নজর ঘোরানোর জন্য এমন পদক্ষেপ। সাংবিধানিক পদকে এঁরা মানেন না”।
]]>