১। মমতার সংখ্যালঘু তোষণ এই হারের অন্যতম কারণ; বলে মনে করছে অনেকেই। ইমাম ভাতা থেকে শুরু করে; মহরমের জন্য দুর্গাপুজোর ভাসান বন্ধ করে দেওয়া হিন্দুদের ক্ষিপ্ত করেছে; বলেই মনে করা হচ্ছে।
২। লাগামছাড়া দুর্নীতি; মমতার হারার অন্যতম কারণ। রাজ্যের প্রত্যেক জেলাতে বিভিন্ন প্রকল্প; সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর আগে নেতাদের হাতে পড়েছে। কেউ টাকার বিনিময়ে পেয়েছে; কারোর আবার সবটাই মেরে দিয়েছেন নেতারা।
৩। আবাস যোজনার বাড়ির টাকা থেকে শুরু করে; নির্মল গ্রামের পায়খানা তৈরির টাকাও গেছে স্থানিয় নেতাদের পকেটে। মমতার বিভিন্ন প্রকল্প থেকেই দুর্নীতি করেছেন তৃণমূল নেতারা; এমনটাই অভিযোগ।
৪। নেতাদের দাদাগিরি; তাদের আসন কমিয়ে দেবার পিছনে অনেকটাই দায়ি। সিপিএম নেতাদের দাদাগিরি বন্ধ করতে; মানুষ ক্ষমতায় এনেছিল তৃণমূলকে। কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি। এখন সেই দাদাগিরি শুরু করেছে; তৃণমূল নেতারাই।
৫। পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না দেওয়া; মানুষ একেবারেই মেনে নেয়নি। লোকসভা ভোটে সুযোগ পেয়েই; তৃণমূলের দাদাগিরি শুধরে দিল মানুষ; মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
৬। রাজ্যকে বিরোধী শুন্য করার মমতার প্রচেষ্টা ব্যাকফায়ার করেছে; মনে করছে অনেকেই। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৬ সালে; মানুষ ক্ষমতায় বসায় তৃণমূলকে। তারপরেও মমতা বাম ও কংগ্রেস নেতাদের দলে নিয়ে বিধায়ক, সাংসদ করেছেন। যা মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল নেতারাও।
৭। মমতার সঙ্গে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা পুরনো নেতারা; চলে গেছেন পিছনের সারিতে। লোকসভা ভোটে সুযোগ পেয়েই; মমতার বিরুদ্ধে সেই ক্ষোভ মিটিয়েছেন তৃণমূলেরই সেই পুরনো অংশটা।
৮। মোদীর বিরোধিতা করতে গিয়ে; ভারতীয় সেনার বিরোধিতা করা; সাধারণ মানুষ একেবারেই মেনে নেননি। বালাকোট হামলার পর সেনার বিমান হামলার প্রমাণ চেয়ে; মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন মমতা।
৯। মোদীর বিরোধিতা করার জন্য তিন তালাকের বিরোধিতা করা; মুসলিম মহিলারা মেনে নেননি। মুসলিম মহিলাদের ভোট পাননি মমতা।
১০। সবশেষে জয় শ্রী রাম বলাতে বিজেপি সমর্থকদের জেলে পাঠান; রাজীব কুমার ও সিবিআই সংক্রান্ত বিষয়ে মমতার অযথা আন্দোলন; আর সবার আগে, ভাইপো অভিষেকের ব্যবহার; দলিয় কর্মী বা মানুষ একেবারেই মেনে নেয়নি।
]]>শনিবার শিলিগুড়িতে এক নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম ও কংগ্রেস সমর্থকদের অনুরোধ করেন, বিজেপিকে হারাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবার জন্য। সিপিএম ও কংগ্রেসের আসন জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন, সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিলে বিজেপিকে হারানো সহজ হবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর ধারণা।
এই প্রথম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে উত্তরবঙ্গে এক সপ্তাহের অধিক সময় নিয়ে অবস্থান করছেন। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের বহুদিনের বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে হাতিয়ার করে বিগত কয়েক বছরে যথেষ্ট প্রভাব বাড়িয়েছে বিজেপি। বিভিন্ন প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষায় উত্তরবঙ্গ থেকে বেশ কিছু আসন বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে বলেও আভাস মিলেছে। স্বাভাবিকভাবেই উত্তরবঙ্গের ভোট যথেষ্ট ভাবাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বিভিন্ন সময়েই দেখা গিয়েছে শাসক দলের বিরোধী দল গুলোর ভোট ভাগ হলেই শাসক দলের ভোট বৈতরণী পার করতে সুবিধা হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। শাসক দলের শক্তিশালী হবার পরিবর্তে বিজেপির কাছে খোয়াতে হয়েছে বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা সহ সাংসদ বিধায়ককে। এদিকে বিগত উপ নির্বাচন গুলোতে দেখা গেছে, বিশেষ করে সিপিএমের ভোটাররা দলীর আদর্শের তোয়াক্কা না করেই বিজেপিতে স্রোতের মতো সামিল হচ্ছেন।
শাসক দলের আশঙ্কা, তৃণমূল বিরোধী ভোট বিজেপিতে যুক্ত হলে তা প্রায় শাসক দলের সাথে বিজেপির ভোট শতাংশের ফারাক অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে। আর সেই সম্ভাবনা থেকেই কপালে চিন্তা বেড়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এতদিন নির্বাচনী জনসভা গুলোতে মুখ্যমন্ত্রী মূলত বিজেপির প্রতি আক্রমনাত্মক ছিলেন। রাজ্যে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া সিপিএম এবং কংগ্রেসের পুনরায় প্রান সঞ্চার না ঘটুক, সেই সাবধানতাবশতই তাদের নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাজ্যে সিপিএমের আসন জেতার সম্ভাবনা নেই এবং কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য হারে আসন বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই, তাই বিজেপিকে ঠেকাতে এবার এই দুই দলের সমর্থকদের শরণাপন্ন হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
]]>