ইউক্রেনের কিয়েভে যেখানে এখন চারিদিকেই ধ্বংসস্তুপ, রাশিয়ার মিসাইল-বোমা কখন কার বাড়িতে, কার ঘাড়ে আছড়ে পড়বে কেউ জানে না; সেই কিয়েভে গত ২০ বছর ডাক্তারি করছেন কলকাতার বাসিন্দা পৃথ্বীরাজ ঘোষ। এখন তিনি প্রফেসরও; ডাক্তারি ছাত্রদের পড়ান। কি করেছেন ইউক্রেনের কিয়েভে থাকা; এই বাঙালি ডাক্তার-প্রফেসর?
না, খুব একটা কিছুই করেননি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ জন ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীকে; রাশিয়ার মুহুর্মুহু আক্রমণের মধ্যেও নিরাপদে কিয়েভ থেকে বের করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেখান থেকে তাদের বিমানে করে; বাড়ি ফিরিয়েছে ভারত সরকার। তবে পৃথ্বীরাজ নিজে কিয়েভ ছাড়েননি। শেষ ভারতীয় নিরাপদে বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত, তিনি কিয়েভ ছাড়বেন না; পরিষ্কার জানিয়েও দিয়েছেন।
২০১৪ সালেও রাশিয়া-ইউক্রেন ঝামেলার সময়ও; তিনি মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন। জানেন যুদ্ধের পরিস্থিতি কি হয়; এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫টি বাস জোগাড় করে ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ইউক্রেন সীমান্ত পাড় করিয়ে দিয়েছেন। না, বাস ভাড়ার টাকা রাজ্য বা কেন্দ্র কেউ দেয়নি; নিজের পকেট থেকেই গেছে। ৩৫০ জনকে ফিরিয়েও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া ইউক্রেনের কিয়েভে; মাটি কামড়ে লড়ছেন বাংলার পৃথ্বীরাজ।
মানুষের সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উধাও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের খোঁজ পাওয়া গেল ইউক্রেনে
গোলা-গুলি, মিসাইল, বোমা থেকে বাঁচাতে; অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে আশ্রয় দিয়েছেন গোপন ব্যাঙ্কারে। করেছেন খাদ্য-জলের ব্যবস্থা। জীবনের রিস্ক? টিভির পর্দায় যাঁরা কিয়েভের ছবি দেখছেন, তারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন; যেকোন সময় একটা বোমা বা মিসাইল শেষ করে দিতে পারে সবকিছু। কলকাতায় ছেলের মুখ চেয়ে বসে বাবা প্রদীপ ঘোষ ও মা ব্রততী ঘোষ; তারা চান, তাদের ছেলেও খুব তাড়াতাড়ি নিরাপদে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে ঘরে ফিরে আসুক।
কিন্তু ডাক্তার-প্রফেসর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন; “বাঙালি ভয়ে পালায় না; আমার সব ছাত্র-ছাত্রী ও ভারতের সব পড়ুয়াকে না নিয়ে আমি কিয়েভ ছাড়ব না”। বাংলার পৃথ্বীরাজকে কুর্ণিশ জানাচ্ছে গোটা বাংলা ও দেশ। তিনি আবারও প্রমাণ করলেন, বাঙালি কাপুরুষ নয়; বাঙালির শিরদাঁড়া আছে।
]]>মেয়েটির নাম বৈশালী যাদব; উত্তরপ্রদেশের হারদই জেলার বাসিন্দা। ২০২১ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে; সমাজবাদী পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এই বৈশালী। উত্তরপ্রদেশের হারদই জেলার তেরা পুরসালি গ্রাম থেকে জিতেও যান তিনি। এখানেই শেষ নয়; বাবা সমাজবাদী পার্টির বড় নেতা মেয়েকে গ্রাম-পঞ্চায়েত প্রধানও বানিয়ে দেন। তারপরেই আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না; গ্রাম-পঞ্চায়েত প্রধান বৈশালী যাদবের। কোথায় গেলেন তিনি? গ্রামের উন্নয়নের সব কাজ আটকে গেলেও; সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পরে; খোঁজ মিলল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বৈশালীর। তিনি এখন ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তিনিও; অন্যান্য-দের সঙ্গে আটকে পরেন ইউক্রেনে। একটি ভাইরাল ভিডিও-তে দেখা যায়; তিনি সাহায্য প্রার্থনা করছেন ভারত সরকারের কাছে। ভিডিও ভাইরাল হতেই গ্রামের মানুষরা দেখতে পান; তাঁদের গ্রাম-পঞ্চায়েত প্রধানকে।
ভারত সরকারের সতর্কবার্তায় কানই দেয়নি, ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের অভিভাবকরা
একজন গ্রাম-পঞ্চায়েত প্রধান কিভাবেই বা প্রশাসনকে না জানিয়ে, বিদেশে রয়েছেন; অভিযোগ তুলেই শুরু হয় তদন্ত। জানা যায়, বৈশালী যাদব গত তিনবছর ধরেই; ইউক্রেনে মেডিক্যালে পড়াশোনা করছেন। ইউরোপ থেকে ডাক্তারি পড়তেই; তাঁর ইউক্রেনে যাওয়া। মেডিক্যালের চতুর্থ বছরে, তিনি নিজের গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান পদে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়ান। ভাগ্যের খেলায় প্রথমবার প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েই; পঞ্চায়েত প্রধানের পদ জিতে নেন তিনি। তারপর আবার ইউক্রেনেই চলে যান। তবে গ্রামে তার প্রধান পদে নির্বাচনের পিছনে; অন্য সমীকরণ দেখতে পান গ্রামের অনেক বাসিন্দারা। বৈশালীর বাবা পঞ্চায়েত ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি; বাবার এই পদকেই কোনওভাবে কাজে লাগিয়ে তাঁর উত্থান কি না; এই নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
ইউক্রেনে আটকে পড়া হারদই জেলার তেরা পুরসালি গ্রামের প্রধান বৈশালী যাদবের ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরেই; কীভাবে তিনি অনুমতি ছাড়াই বিদেশে গেলেন তা নিয়ে ফের তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, তাঁকে গ্রামেই পাওয়া গেছে বলে; ফেক নিউজ ছড়িয়ে পরেছে।
]]>যখন যুদ্ধ শুরুর আগে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে; ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরে আসার জন্য বারে বারে অ্যাডভাইসারি জারি করা হচ্ছিল; ফিরে আসার অনুরোধ করা হচ্ছিল; শুধু ভারত নয় পৃথিবীর শক্তিশালী সব দেশগুলো সতর্ক করে দিচ্ছিল; তখনও ইউক্রেনে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা এই নিয়ে ভারত সরকারের খিল্লি করেছিল। সেই ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এখন যারা ভারত সরকারকে দোষ দিতে ব্যস্ত; তখন তারা খিল্লি করছিল তাদের জন্য সরকারের অ্যাডভাইসারি; মিডিয়া তথা দেশের মানুষের উদ্বেগ নিয়ে। আজ এরাই চরম বিপদের মধ্যে থেকে; দেশে ফেরার জন্য সাহায্যের প্রত্যাশী।
ভারত সরকার এদের উদ্ধার করে, সরকারি খরচে ফ্রি তে দেশে ফিরিয়ে আনার পর; এদেরই কেউ কেউ বলছে; কেন আমাকে দিল্লি বা মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল না। কেন আমাকে ফাইভ স্টার হোটেলে রাখা হল না; কেন বিমানের পরিষেবা আরও ভাল ছিল না!
আমেরিকা, জার্মানি, চিন, ব্রিটেন এই মুহূর্তে তাদের দেশের নাগরিকদের; ইউক্রেন থেকে ফেরানো যাবে না বলে পরিষ্কার ঘোষণা করে দিয়েছে। সেই জায়গায় একমাত্র দেশ ভারত; তাদের নাগরিকদের ফেরাচ্ছে। ৯০ শতাংশ নাগরিককে ভারত সরকার ইতিমধ্যেই দেশে ফিরিয়েছে। এবং কেন্দ্র সরকারের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে যারা এখনও রয়ে গেছেন; তাদেরও আগামী ১-২ দিনে ফেরানোর পরিকল্পনা করেছে ভারত। তবে সত্য কথা তাঁদের জানা দরকার; যারা শুধুই সমালোচনা করছেন ভারতের।
]]>