ঋষি অরবিন্দ, সত্যজিত রায়, অমর্ত্য সেন, কিশোর কুমার, সৌরভ গাঙ্গুলি সহ আরও অনেককে টপকে এবার সেরা বাঙালি প্রতিভার তালিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সল্ট লেক সেক্টর ফাইভে এমন একটি পোস্টারে হইচই পরে গেছে গোটা রাজ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে সেই ছবি।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানি চায়ের বিজ্ঞাপনের ভাইরাল ছবিতেও ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন
মুখের আমি, মুখের তুমি, মুখ দিয়েই যায় চেনা। হোক না সেটা ল্যাম্প পোস্ট থেকে শুরু করে বাড়ির দেওয়াল, বাস স্টপ বা নন্দন চত্বর। সর্বত্র তাঁরই হাসিমুখের ছবি। মনিষীদের বাণীর পাশেও হাসি হাসি মুখে বিরাজমান বাংলা মুখ্যমন্ত্রী। এবার আবার সেই ছবি নিয়েই শুরু বিতর্কের, শুরু ব্যঙ্গ বিদ্রুপ থেকে রসিকতা।
সম্প্রতি সল্ট লেক সেক্টর ৫ এ লাগানো হয়েছে একটি পোস্টার আর তাতে লেখা ফেমাস বেঙ্গলি লেজেন্ড। সেই ছবিতে রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, নজরুল ইসলাম, জগদীশ চন্দ্র বসু সহ আরও ১৩জন মনীষীদের সঙ্গে ছবি স্বয়ং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুনঃ রাফায়েল যুদ্ধবিমান সংক্রান্ত সব নথি চুরি হয়ে গিয়েছে
বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। নানা জায়গায় সমালোচনা, নিন্দা ছাড়াও চলছে বিদ্রুপ ও হাসির রোল। যদিও ছবি নিয়ে এই ধরণের ব্যাপারে ধীরে ধীরে গা সওয়াও হয়ে গিয়েছে রাজ্যবাসীর।
এমনকি কয়েক মাস আগে শিক্ষা দফতরের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী এবার রাজ্যের প্রতিটি স্কুলেও শোভা পেতে চলেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি। সম্প্রতি রাজ্যের প্রতিটি সরকারি ও সরকার অনুমোদিত স্কুলে এক নতুন নির্দেশিকা পাঠিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর।
আরও পড়ুনঃ পরের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে বিমানে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে বিরোধীদের
সেখানে বলা হয়েছে, স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে এমন জায়গায় টাঙাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যানার। শুধু তাই নয়, যে ব্যানার টাঙাতে হবে তার সফট কপিও স্কুলগুলিকে পাঠিয়ে দিয়েছে শিক্ষা দফতর। তবে উপর মহলের এহেন নির্দেশে বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন কিছু কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চাকরি বাঁচিয়ে রাখাই এখন বড় কাজ তাই কোন কথা নেই।
আরও পড়ুনঃ বুলডোজার দিয়ে উর্দু গেট উড়িয়ে দিল যোগী সরকার
উল্লেখ্য, কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে নন্দন চত্ত্বর মুড়ে ফেলার পর গোটা রাজ্য জুড়ে উঠেছিল বিতর্কের ঝড়। সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছিল মমতা বিরোধী একের পর এক পোস্টে। কোথাও বা বলা হয়েছিল সত্যজিত্, ঋত্বিক ঘটকের মতো একাধিক নামি পরিচালককে উড়িয়ে দিয়ে সিনেমার পিঠস্থান মমতার ছবিতে ভরিয়ে দেওয়া এক নিম্ন রুচির পরিচয়।
আরও পড়ুনঃ মোদীকে হত্যা কর, কংগ্রেস নেতার প্রকাশ্য নির্দেশ
কেউ আবার জানিয়েছিলেন, মমতা ব্যানারে নিজের মুখ দেখতে খুব ভালোবাসেন তাই এই ব্যানার। সবকিছুর পর এবার সেরা বাঙালি প্রতিভাতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে তত্পর হল ‘দিদির ভাইরা’। আর তাই, সেরা বাঙালি প্রতিভার তালিকায় এবার মমতাও। মমতার কোন ভাই তাঁকে খুশি করার ১৪ জন সেরা বাঙালি প্রতিভায় তাঁর ছবি রাখলেন সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে সেই ভাইকে সোশ্যাল মিডিয়া ইতিমধ্যেই ‘পোস্টারশ্রী’ পুরস্কারও দিয়ে দিয়েছে।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
]]>২৮ অক্টোবর, ১৮৬৭ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। ছিলেন একজন অ্যাংলো-আইরিশ বংশোদ্ভুত সমাজকর্মী, লেখিকা, শিক্ষিকা এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা।
১৮৯৫ সালে লন্ডন শহরে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সাক্ষাৎ পান এবং ১৮৯৮ সালে ভারতে চলে আসেন। একই বছর ২৫ মার্চ তিনি ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করলে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর নামকরণ করেন “নিবেদিতা”। পরিচিত হন ভাগিনী নিবেদিতা নামে।
বিবেকানন্দের বাণী তাঁর জীবনে এতটাই গভীর প্রভাব বিস্তার করে যে তিনি ভারতকে তাঁর কর্মক্ষেত্ররূপে বেছে নেন। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য নারী যিনি ভারতীয় সন্ন্যাসিনীর ব্রত গ্রহণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: নেতাদের কথা নয়, জীবন দর্শন নিয়ে মনে রাখুন কালামের উক্তি
১৮৯৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি নানা মানবকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সকল বর্ণের ভারতীয় নারীর জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রী অবলা বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ওকাকুরা কাকুজো প্রমুখ তৎকালীন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছিলেন নিবেদিতার বন্ধুস্থানীয়।
রবীন্দ্রনাথ তাঁকে “লোকমাতা” আখ্যা দেন। ভারতীয় শিল্পকলার সমঝদার নিবেদিতা ভারতের আধুনিক চিত্রকলার সৃজনে অন্যতম অনুপ্রেরণার কাজ করেন। নন্দলাল বসু এই কথা একাধিকবার স্মরণ করেছেন। জীবনের শেষ পর্বে নিবেদিতা স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা স্থাপিত হয়। এই সময় ব্রিটিশ সরকার যাতে রামকৃষ্ণ মিশনকে অযথা উত্ত্যক্ত না করে, সেই কথা ভেবে মিশনের সঙ্গে তিনি তাঁর “আনুষ্ঠানিক” সম্পর্ক ত্যাগ করেন।
১৯০২ সালের ৪ জুলাই নিবেদিতার গুরু স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু হয়। এরপর ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিয়মানুসারে ধর্ম ও রাজনীতির সংস্রব ঠেকাতে সংঘের কেউ রাজনীতিতে জড়াতে পারত না।
আরও পড়ুন: লাইফ বিয়ন্ড ডেথ’, কী ভাবে জানবেন মৃত্যুর পর কী
তাই মিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হয় নিবেদিতাকে। স্বামী ব্রহ্মানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি থাকার সময় রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেন তিনি।
কারণ, রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার চেয়েও পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের সাহায্য করাটা তখন তিনি অনেক বেশি জরুরি মনে করেছিলেন। যদিও সারদা দেবী ও রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর আমৃত্যু সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করতে শুরু করেন নিবেদিতা। এই সময় অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ভারতীয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। এসবের পাশাপাশি নিবেদিতা মডার্ন রিভিউ, দ্য স্টেটসম্যান, অমৃতবাজার পত্রিকা, ডন, প্রবুদ্ধ ভারত, বালভারতী প্রভৃতি পত্রিকায় ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, শিল্প ইত্যাদি বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতেন।
তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলি হল কালী দ্য মাদার, ওয়েব অফ ইন্ডিয়ান লাইফ, ক্রেডল টেলস অফ হিন্দুইজম, দ্য মাস্টার অ্যাজ আই শ হিম ইত্যাদি।
বিপ্লবীদের সাহায্য করতে তাঁর রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়াটা পরাধীন ভারতে একটা উল্লেখযোগ্য অধ্যায় বলে মনে করা হয়।
কিন্তু ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নিবেদিতা। ১৯১১ সালে হাওয়া বদলের জন্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দার্জিলিঙে বেড়াতে গিয়ে ১৩ অক্টোবর সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নিবেদিতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর।
ভগিনী নিবেদিতা ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর বই মাতৃরূপা কালী পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর “ভারতমাতা” ছবিটি আঁকেন। বিধাননগরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ২০১০ সালে নির্মিত ভবনটি নিবেদিতার নামে নামাঙ্কিত।
আরও পড়ুন: সনাতন হিন্দু ধর্মকে ছোট করার চেষ্টা সফল হবে না
তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে ভগিনী নিবেদিতার প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিটির নাম রাখা হয়েছে সিস্টার নিবেদিতা অ্যাকাডেমি। তাঁর নামে একাধিক বিদ্যালয় ও কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালে ভারত সরকার তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে ৪.০৬ × ২.২৮ সেন্টিমিটারের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর নামও সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
]]>