গুজরাটের নর্মদা নদীর তীরে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার (৫৯৭ ফুট) উচ্চতা বিশিষ্ট এই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মূর্তি। কর্মসংস্থানের দিশা নেই, মূল্যবৃদ্ধির বাজার, অধরা ‘আচ্ছে দিন’- এরই মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি মূর্তির যৌক্তিকতা নিয়ে সমাজসেবী সংগঠনগুলি ও বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই প্রশ্ন তুলেছে।
৩০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্ট্যাচু তৈরিতে গত ৪২ মাসের পরিশ্রমে, ৩৪০০ শ্রমিক এবং ২৫০ জন ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে গেছেন। এই বিপুল পরিমান টাকায় স্ট্যাচু না তৈরি করে অন্য আর কোন কোন কাজে লাগানো যেতো, তা নিয়েও সমীক্ষা করে ফেলেছে কয়েকটি সংস্থা। কয়েক মাস ধরেই, কেন্দ্রীয় সরকারের তুমুল সমালোচনা করেছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: সুলতানকে নিয়ে বিজেপির বিরোধীতার মধ্যেই টানাপোড়েন কংগ্রেস-জেডিএসের
কিন্ত মূর্তি তৈরিতে সরকারের যে আসলে লক্ষ্মীলাভই হয়েছে, তা কয়েকদিন এগোতেই ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে বলেই জানিয়েছে গুজরাট রাজ্য সরকার। সরকারের দাবী, আর তাতেই নাকি সর্দার মূর্তি নিয়ে মুখ বন্ধ করছে বিরোধীরা।
দেখা যাচ্ছে, ৩১শে অক্টোবর মূর্তিটির উদ্বোধনের পর দিন থেকেই উৎসুক পর্যটকরা ভিড় জমাতে শুরু করে। দিওয়ালি এবং গুজরাটি নববর্ষ উপলক্ষ্যে ছুটির দিনগুলোতে ভিড় ছিলো উল্লেখযোগ্য। এই ১০ দিনে রেকর্ড সংখ্যায় মানুষ আসেন এই মুর্তি দেখতে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০০০ দর্শক আসবেন আশা করছে গুজরাট সরকার। উৎসবের দিনে দর্শকের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলেই আশা করছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: মোদীর ভারতে সর্দার প্যাটেলের রেকর্ড ভাঙবে ছত্রপতি শিবাজীর মূর্তি
সরকারি হিসেব বলছে, ৬ই নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে ১০ই নভেম্বর শনিবার পর্যন্ত মোট ৭৪ হাজার ৬৭১ জন পর্যটক বিশ্বের সর্বোচ্চ এই মূর্তি দর্শন করেছেন। শুধুমাত্র ৯ই নভেম্বর অর্থাৎ শুক্রবারেই ভিড় জমান ২৩ হাজার ৬৬৬ জন পর্যটক। আর তা থেকে চলতি সপ্তাহেই সরকারের মোট আয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা।
উল্লেখ্য, সর্দার প্যাটেলের মূর্তি দর্শনের জন্য টিকিটের মূল্য ধার্য করা হয়েছে ব্যক্তি প্রতি ৩৮০ টাকা, যার মধ্যে ৩৫০ টাকা গ্যালারি দেখার জন্য ও ৩০ টাকা বাস পার্কিং থেকে মূর্তি অবধি পৌঁছানোর জন্য। ৩-১৫ বছর বয়সের শিশুদের জন্য টিকিট মূল্য নির্ধারিত করা হয়েছে ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন: ভারতে আরও বড় ‘প্রাণঘাতী’ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা
যদিও লিফটে করে ৬০০ ফুট উঁচু মূর্তির প্রায় ৪০০ ফুটের কাছাকাছি উঠে, সর্দার প্যাটেলের মূর্তির বুকের কাছ থেকে নর্মদার সৌন্দর্য না দেখলে শুধু মূর্তি দেখতে আপনাকে দিতে হবে মাত্র ১২০ টাকা, বাচ্চাদের ৬০ টাকা।
রাজ্য সরকারের পাশাপাশি পর্যটক বিশেষজ্ঞদের দাবি, যে হারে প্রতিদিন এবং বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে, তাতে খুব শীঘ্রই এই মূর্তি থেকে লাভের মুখ দেখবে রাজ্য।
আরও পড়ুন: মোদী সরকারের কাছে মমতাকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার দাবি তুললেন ইদ্রিস
চলতি মরশুমে বিদেশী পর্যটকদের ভিড়ও ছিল দেখার মত। এই বছরেও তাদের সিংহভাগের ভ্রমনের অভিমুখ যে হতে চলেছে ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, বলেই দাবি রাজ্য সরকারের। সেখান থেকেও প্রতিদিন বেশ কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করবে সরকার।
পর্যটক টানার লক্ষ্যে গুজরাট সরকার ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এয়ারপোর্ট নির্মাণ ও অন্যান্য পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। গুজরাট সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারের আয় ছাড়াও বহু মানুষ এই মূর্তিকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: মায়ের পুজোয় মদ বিক্রিতে রেকর্ড গড়ল মমতার বাংলা
আর এই রেকর্ড উপার্জনকে দেখিয়েই এবার বিরোধীদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আসরে নেমে পরেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা। তবে, তাতেও ৩০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে মূর্তি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে লোকসভা ভোট পর্যন্ত বিজেপিকে বিরোধী প্রশ্ন ও সমালোচনার মুখে থাকতেই হবে সেটা পরিষ্কার।
]]>বুধবার ৩১ শে অক্টোবর, স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে উপহার দিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মূর্তি। ঐক্যের মূর্তির (স্ট্যাচু অফ ইউনিটি) উদ্বোধন করলেন মোদী। নর্মদার তীরে নির্মিত সর্দার প্যাটেলের এই মূর্তি দেশের প্রতি তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রয়াস, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
চিনের স্প্রিং টেম্পলে বৌদ্ধ মূর্তি ছিল ১৫৩ মিটার উঁচু। ১৮২ মিটার উঁচু সর্দার প্যাটেলের মূর্তিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মূর্তি। ২৯৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মূর্তিটি একজন স্বাভাবিক উচ্চতার মানুষের প্রায় একশ গুন বেশি উচুঁ। এটি তৈরি করতে ৩ বছর ৯ মাস ধরে ২৫০ জন ইঞ্জিনিয়ারের অধীনে প্রায় ৩৪০০ শ্রমিক কাজ করেছেন।
এতে লেগেছে ২৪ হাজার টন ইস্পাতের রড, ৩৩৩০ টন ব্রোঞ্জ, ২১২০০০ কিউবিক টন কংক্রিট। তবে বল্লভভাই প্যাটেলের মূল ভাস্কর্যের ছোট সংস্করণটি করেছিলেন প্রখ্যাত ভাস্কর রাম সুতার ও তার পুত্র।
এই মূর্তির বুকের কাছে গ্যালারি করা হয়েছে। যেখানে একসঙ্গে ২০০ মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে নর্মদার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। এর নিচে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বাগান ও সংগ্রহশালা।
সর্দার প্যাটেলের মূর্তিটি উচ্চতায় আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দ্বিগুণ৷ চীনের স্পিং টেম্পল বুদ্ধ মূর্তি যেটি উচ্চতম স্ট্যাচু ছিল তার থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি ২৯ মিটার বেশি উঁচু।
২০১৩ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় এই মূর্তি গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ৫ বছর পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদীই সেই মূর্তিরই উদ্বোধন করলেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা ও তারপরের গণহত্যার না জানা সত্যি
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজেপি কর্মীরা লোহা, মাটি এবং জল সংগ্রহ করেছেন এই মূর্তি নির্মানের জন্য। স্ট্যাচু অফ ইউনিটি তৈরি হয়েছে সর্দার প্যাটেলের জীবন ও কীর্তির চেয়ে আরও বেশি কিছু তুলে ধরার জন্য।
তবে মোদীর ভারত এখানে থেমে থাকতে রাজি নয়। সেইজন্য, এবার মহারাষ্ট্রের মুম্বাই উপকূলে তৈরি হচ্ছে এর থেকেও ৪০ মিটার বেশি উচ্চতার শিবাজী মূর্তি। সেই ঘোষণাও বুধবার করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
ইতিমধ্যেই মুম্বাই উপকূলে নির্মাণ হতে চলা ছত্রপতি রাজা শিবাজীর মূর্তির উচ্চতা বৃদ্ধি করে ২১২ মিটার করা হয়েছে। যার ফলে, নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে এটিই হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মূর্তি। এমনটাই জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তখন সর্দারের মূর্তির রেকর্ড ভেঙে সেটাই হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি।
ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। আরব সাগরের নির্মাণস্থলে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে এই বছরের গোড়ার দিকেই। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রায় ২,৯০০ কোটি টাকা মূল্যের এই শিবাজী মূর্তি নির্মাণের বরাত বিখ্যাত সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড ট্যুব্রোকে দেওয়া হয়েছে। গোটা প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে আনুমানিক ৩,৭০০ কোটি টাকা।
মুম্বাই উপকূলে যেখানে শিবাজী মূর্তি গড়ে উঠছে সেখানেই একটি বোট দুর্ঘটনার পর, দুদিন আগেই এই মূর্তির জায়গা পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। রাজ্যের অফিসারদের নিয়ে ওই বোটটি শিবাজী মূর্তির কাজ দেখতে যাচ্ছিল।
তবে জায়গা পরিবর্তন হলেও মোদীর ভারতে সর্দার প্যাটেলের মূর্তির বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতে চলেছে ছত্রপতি রাজা শিবাজীর মূর্তি। সেটার উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী করবেন কিনা সেটাই এখন দেখার।
]]>