Film Bigraha in 1930 – The News বাংলা https://thenewsbangla.com Bengali News Portal Sat, 09 Mar 2019 19:29:24 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.7.2 https://thenewsbangla.com/wp-content/uploads/2018/09/cropped-cdacf4af-1517-4a2e-9115-8796fbc7217f-32x32.jpeg Film Bigraha in 1930 – The News বাংলা https://thenewsbangla.com 32 32 পতিতাপল্লী থেকে এসে চুনীবালা দেবী না দাঁড়ালে অসম্পূর্ণ থাকত পথের পাঁচালী https://thenewsbangla.com/pother-panchali-would-remain-imcomplete-if-indira-devi-did-not-play-her-role-from-red-light-area/ Sat, 09 Mar 2019 18:15:58 +0000 https://www.thenewsbangla.com/?p=7947 কলকাতার বিখ্যাত লালবাতি এলাকায় একটি ঘরে ঠকঠক। শীর্ণ দুটো হাত দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইল, দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে ‘বাবুরা’। “কীরকম মেয়ে পছন্দ বলুন? থিয়েটারে অভিনয় করাবেন? নাকি…………”।

উল্টোদিক থেকে উত্তর এল‚ আর কাউকে নয়, আমাদের দরকার আপনার সঙ্গে। বিস্মিত হয়ে গেলেন বৃদ্ধা। বয়স চার কুড়ি প্রায়। ফোকলা মুখ। এই সুবেশ বাবুরা তাঁর কাছে এসেছেন কেন! কলকাতার বিখ্যাত লালবাতি এলাকায় তখন এক দীর্ঘদেহী ভাবছেন‚ তিনি পেয়ে গেছেন যাকে খুঁজছেন এতদিন ধরে।

পতিতাপল্লী থেকে এসে ইন্দিরা দেবী না দাঁড়ালে অসম্পূর্ণ থাকত পথের পাঁচালী/The News বাংলা
পতিতাপল্লী থেকে এসে ইন্দিরা দেবী না দাঁড়ালে অসম্পূর্ণ থাকত পথের পাঁচালী/The News বাংলা

পতিতালয়ের বাসিন্দা বৃদ্ধাকে বলা হল অভিনয় করতে হবে তাঁকে। শুনে অত্যন্ত অবাক হয়ে গেলেন তিনি। অ-ভি-ন-য় !! সে যেন গতজন্মের কথা। যদিও তিনি বহুযুগ আগে থিয়েটার করতেন। ফিল্মেও সুযোগ এসেছিল ১৯৩০ সালে। তখন তাঁর বয়েস পঞ্চান্ন বছর। অভিনয় করছিলেন বিগ্রহ, রিক্ত প্রভৃতি ফিল্মে। তাঁকে নিয়ে ফিল্মবন্দি করা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচালনায় ‘নটীর পুজা’।

আরও পড়ুনঃ বাংলা ফিল্মের জনপ্রিয় পরিচালকের রহস্যমৃত্যু

থিয়েটারের চুনীবালা দেবী ছবিতে এসে পার্শ্বচরিত্র হয়েই থেকে গিয়েছিলেন মাত্র। অপাংক্তেয় দিন কাটছিল কলকাতার পতিতালয়ে। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার জন্যই যেন জীবিত ছিলেন তিনি। এরপর পথের পাঁচালী আর তারপর বাকিটা ইতিহাস।

পথের পাঁচালী ছবিতে পারিশ্রমিক ছিল রোজ কুড়ি টাকা করে। এর বেশি আর সম্ভব হয়নি নতুন পরিচালক সত্যজিৎ রায় এর পক্ষে। ইউনিটে এমনিতেই অর্থসঙ্কট। তাঁর নিজের বীমার কাগজ পত্র‚ স্ত্রীর গয়না সব বন্ধকী। তবুও প্রিয় উপন্যাসকে সেলুলয়েড বন্দি করতে চান তিনি।

অশীতিপর ইন্দিরা ঠাকুরণ চরিত্রের জন্য খুঁজছিলেন এমন কাউকে‚ যিনি বৃদ্ধা। কিন্তু অভিনয়টা জানেন। আউটডোর শ্যুটিং-এর ধকল নিতে পারবেন। মনে রাখতে পারবেন চিত্রনাট্য। নবীন কাউকে মেক আপ দিয়ে প্রবীণ সাজাতে চাননি তিনি।

আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানের কোপে এবার প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

বহু খুঁজেও মনমতো কাউকে পাচ্ছিলেন না যাঁকে দিয়ে ম্যানারিজম-বর্জিত অভিনয় করাতে পারবেন। শেষমেশ আর এক অভিনেত্রী রেবা দেবী বললেন, পুরনো দিনের অভিনেত্রী চুনীবালা দেবীর কথা। রেবা নিজেও ওই ছবিতে অভিনয় করছিলেন ধনী জমিদার গিন্নির চরিত্রে।

তাঁর দেওয়া ঠিকানায় গিয়েছিলেন পরিচালক। সঙ্গে প্রোডাকশন ম্যানেজার অনিল চৌধুরী। চুনীবালা দেবীকে দেখেই নবীন পরিচালকের মন বলল বিভূতিভূষণের ইন্দির ঠাকরুণ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

পতিতাপল্লী থেকে এসে ইন্দিরা দেবী না দাঁড়ালে অসম্পূর্ণ থাকত পথের পাঁচালী/The News বাংলা
পতিতাপল্লী থেকে এসে ইন্দিরা দেবী না দাঁড়ালে অসম্পূর্ণ থাকত পথের পাঁচালী/The News বাংলা

পতিতালয় থেকে আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন চুনীবালা। পরনে শতচ্ছিন্ন সাদা থান। পরিচালক ও ইউনিটের আশা ছাপিয়ে অভিনয় করলেন উনি। একদিন গাড়ি থেকে নামার পরে তাঁকে বলা হল‚ সেদিন মৃত্যুর দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। সবাই ভেবেছিল উনি হয়তো ক্ষুণ্ণ হবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইন্দির ঠাকরুন ওরফে চুনীবালা দেবী বললেন‚ আরে! এ তো অভিনয়! কিছু মনে করব কেন?

নিশ্চিন্দিপুরের‚ থুড়ি বোড়াল গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশে ঢলে পড়লেন ইন্দির ঠাকরুন। শোনা যায়‚ তাঁর মাথা পড়ার মুহূর্তে নিজের কোলে নিয়ে নিয়েছিলেন পরিচালক। এত স্বাভাবিক অভিনয়টুকু করার জন্যই বোধহয় জীবনভর অপেক্ষায় ছিলেন অবহেলিত এই অভিনেত্রী।

আরও পড়ুনঃ মানুষের হুমকিতে বাংলায় ভূতেদেরও কথা বলার অধিকার কাড়া হল

সমান সাবলীলতায় অভিনয় করেছিলেন শেষযাত্রার দৃশ্যে। তাঁর দেহ বাঁশের খাটিয়ায় বেঁধে নিয়ে যাওয়া হল। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে লেখা হল নতুন ইতিহাস। বসল নতুন মাইলফলক। কিন্তু সেদিন শ্যুটিং শেষ হবার পর সবার ঘাম ছুটে গেছে। কারণ ইন্দির ঠাকরুন শট ওকে করেও চোখ খুলছেন না।

বেশ কিছুক্ষণ কসরতের পরে পিটপিট করে চোখ খুলে ফোকলা হাসিতে মুখ ভরিয়ে বললেন‚ “আরে‚বলবে তো শট হয়ে গেছে। আমি কতক্ষণ মড়া সেজে পড়ে রয়েছি”।

আরও পড়ুন: পরিচালক মৃণাল সেনের ফিল্ম পরিচালনার কিছু ‘মণি মুক্ত’

তিন বছর ধরে শ্যুটিং চলেছিল ফিল্মের। টাকাই যোগাড় হয় না। পরিচালকের উদ্বেগ দূর করে এই দীর্ঘ সময়ে বেশি বড় হয়ে যায়নি ইন্দির ঠাকরুনের ভাইপো ভাইঝি। দুর্গা ছিল ছবির শুরুর চেহারাতেই। অপুরও গলা ভাঙেনি। আর চুনিবালা দেবী বা ইন্দিরা ঠাকরুন নিজেও জীবিত ছিলেন। নইলে পথের এই অপূর্ব পাঁচালী অপঠিতই রয়ে যেত পর্দায়।

আরও পড়ুন: বছর শেষে আবার ইন্দ্রপতন, প্রয়াত চিত্র পরিচালক মৃনাল সেন

মুক্তির জন্য অপেক্ষা না করে পরিচালক সত্যজিৎ রায়, চুনীবালা দেবীর বাড়ি গিয়ে প্রোজেকশন দেখালেন। বুঝতে পেরেছিলেন তাঁকে আর বেশিদিন সময় দেবেন না চুনীবালা। ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট যখন মুক্তি পেল ‘পথের পাঁচালী’‚ তার কয়েকমাস আগেই চলে গেছেন অশীতিপর চুনীবালা দেবী। গল্পের দুর্গার মতো তাঁরও বাস্তবে মারণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিল।

নিজে যে ইতিহাসের শরিক হলেন তা আর দেখা হয়ে ওঠেনি চুনীবালা দেবীর। জানা হয়নি তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি সম্মানিত হয়েছেন বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে। ম্যানিলা চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিবেচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে ইন্দির ঠাকরুন চলে গিয়েছিলেন অনেক দূরে। আর পরিচালক সত্যজিৎ রায় প্রথম ফিল্মেই নিজের জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

]]>