সেন্টার ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্ট দেখে, বৃহস্পতিবারই দুর্নীতির অভিযোগে অলোক বর্মাকে সিবিআই প্ৰধান থেকে অপসারণ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের সিলেক্ট কমিটি। সিবিআই প্রধান থেকে অপসারণ করে শুক্রবারই তাঁকে দমকল দফতরের ডিজির দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়।
তারপরই অলোক বর্মা সংবাদমাধ্যমে নিজের মতামত জানিয়ে বলেন, ‘সিবিআই এর মত তদন্তকারী সংস্থার স্বাধীনতাকে রক্ষা করা উচিত। এই সংস্থার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা হয়েছিল। আমি তা বাঁচানোর চেষ্টা করেছি’। তাঁকে অপসারণ ও বদলির নির্দেশকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেন অলোক বর্মা। এরপর চাকরি থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ
ঘুষ নেবার দায়ে সিবিআই হাতে গ্রেফতার হবেন সিবিআই এরই স্পেশ্যাল ডিরেক্টর
নরেন্দ্র মোদী সরকারের ইচ্ছে বহাল, ফের অপসারিত সিবিআই প্রধান
সিবিআই প্ৰধান থেকে সরিয়ে ১৯৭৯ সালের ব্যাচের আইপিএস অফিসার অলোক বর্মাকে দমকলের ডিজি পদে বদলি করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাঁর হাতে সিভিল ডিফেন্স ও হোম গার্ডের দফতরও দেওয়া হয়। তবে এর কোনওটাতেই যোগ না দিয়ে আইপিএস পদ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার তাঁকে ফের সিবিআই প্রধানের পদে বসিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার কাজে যোগও দিয়েছিলেন অলোক বর্মা। কিন্তু মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফের সিলেক্ট কমিটি তাঁকে সরিয়ে দেয় সিবিআই প্রধানের পদ থেকে। করা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল। শুক্রবার কাজে যোগ না দিয়েই সেই পদ থেকে পদত্যাগ করলেন অলোক বর্মা।
অলোক বর্মা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সিবিআই প্রধানের দায়িত্ব সামলাবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনার জন্য যে সিলেক্ট কমিটি ছিল, তার মাথায় ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ছাড়া ওই কমিটিতে থাকার কথা বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
আরও পড়ুনঃ
ভারতের কৃষকের মেয়ে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ‘ভাবনার বিপ্লব’ ভাবনা কস্তুরীর হাত ধরে
তবে প্রধানমন্ত্রী থাকলেও বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রধান বিচারপতির তরফে ছিলেন বিচারপতি একে সিকরি। সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ অলোক বর্মাকে সিবিআই ডিরেক্টর পদে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তার সদস্য ছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তাই তিনি নিজে আর উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে থাকেননি। প্রতিনিধি রেখেছিলেন সিকরিকে।
সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের অভিযোগের ভিত্তিতে এই সিলেক্ট কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, বর্মাকে সিবিআই প্রধান থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও নরেন্দ্র মোদী ও বিচারপতি সিকরি অপসারণ এর পক্ষে ভোট দেন।
গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই দুই আইপিএস অফিসার অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানার ঝগড়ায় ও তাতে মোদী সরকারের হস্তক্ষেপে প্রায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশের এক নম্বর তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের অন্দর মহলে। অক্টোবরের ২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সিদ্ধান্ত নেয় ছুটিতে পাঠানো হবে বিবাদমান দুই কর্তাকেই। সেই অনুযায়ী মোদীর নির্দেশে ২৩ অক্টোবর রাত প্রায় দুটোর সময়ে সিবিআই প্রধানের দায়িত্ব নেন নাগেশ্বর রাও।
আরও পড়ুনঃ
অশ্লীল গালাগাল দেবার জন্যই যুবককে নিজেদের ব্যক্তিগত গ্রুপে যোগ করেন নন্দিনী
প্রকাশ্যে গ্রুপ চ্যাট রেকর্ডিং, জেলাশাসকের স্ত্রীর ভাষাও সমান অশ্লীল
এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। রাহুল গান্ধী সোজাসাপটা অভিযোগ করেন, রাফায়েল নিয়ে তদন্ত করতে চাইছিলেন বলেই অলোক বর্মাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান অলোক বর্মাও।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে জিতে ফের সিবিআই প্রধান হলেও বুধবার ফের তাঁকে সরিয়ে দেয় সিলেক্ট কমিটি। আর শুক্রবার কোন নতুন দায়িত্ব না নিয়ে একেবারে আইপিএস এর চাকরিই ছেড়ে দিলেন অলোক বর্মা।
৩১ জানুয়ারি অবসর নেওয়ার কথা ছিল অলোক বর্মার। তার ২০দিন আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। ইস্তফা দেওয়ার আগে মুখ খোলেন অলোক বর্মা। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে জানান, ‘মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে সরানো হয়েছে। তাঁকে সরানোর মধ্যে দিয়ে সংস্থার স্বাধীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বলে দাবি করেন ক্ষমতাচ্যুত সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মা’।
আরও পড়ুনঃ
একদিনে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল সাংসদ, দিদিকে ছেড়ে মোদীর দলে আর কে কে
মমতার বাছাইয়ে কারা হবেন বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী
সিবিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর জানান, ‘দেশের বড়বড় দুর্নীতির তদন্ত করে থাকে সিবিআই। ফলে এই সংস্থার স্বাধীনতা থাকা উচিত। আমি সংস্থার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে চেয়েছিলাম। সেটা বজায় রাখতে চেয়েছিলাম। অভিযোগকারীর একার মিথ্যে বয়ানেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল’।
অলোক বর্মার জায়গায় পুর্নবহাল করা হয়েছে নাগেশ্বর রাওকে৷ ১৯৮৬ সালের ওড়িশা ক্যাডারের এই আইপিএস অফিসার সিবিআই অধিকর্তার দায়িত্ব নিয়েই অলোক বর্মার নেওয়া সব ট্রান্সফার অর্ডার বাতিল করে দেন। এদিকে সিবিআই অধিকর্তা হিসাবে নাগেশ্বর রাওয়ের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।
অলোক বর্মার এই অপসারণ ও পদত্যাগ নিয়ে আসরে নেমেছেন বিরোধীরা। আইপিএস এর চাকরি ছেড়ে অলোক বর্মা, লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের হাতে সরকারের বিরুদ্ধে শাণিত অস্ত্র তুলে দিলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুনঃ
সুপ্রিম রথ জেতার অপেক্ষায় কলকাতায় নরেন্দ্র মোদী, শিলিগুড়িতে অমিত শাহ
ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা সম্পর্কে একনজরে সব কিছু জেনে নিন
কুম্ভমেলায় বিশ্বরেকর্ড গড়ল যোগীর রাজ্য, তৈরি হল আস্ত একটা শহর
মোদীর প্রকল্পে আর টাকা দেবেন না মমতা, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
]]>অলোক বর্মা বনাম কেন্দ্র সরকার মামলায় বড় জয় সিবিআই ডাইরেক্টর অলোক বর্মার। মুখ পুড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকারের। সিবিআই ডাইরেক্টরের অপসারণের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল সর্বোচ্চ আদালত। সিবিআই প্রধান অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠিয়ে কেন্দ্রের জারি করা ২৩শে অক্টোবরের নির্দেশ খারিজ সুপ্রিম কোর্ট এর।
গত ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে নজিরবিহীনভাবে সিবিআইয়ের এই শীর্ষকর্তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন সিবিআই ডাইরেক্টর অলোক বর্মা। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বেআইনি ঘোষণা করে, তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একাধিক ইস্যুতে স্বস্তি পেলেন সিবিআই ডাইরেক্টর। অলোক বর্মাকে তাঁর পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, সিবিআইয়ের কাজে কেন্দ্র কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
আরও পড়ুনঃ
মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলেই বাবা মা-কে দিতে হবে মুচলেকা
হিন্দুত্ববাদীদের নিশানা করতে মসজিদে পাথর ছুঁড়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা, ধৃত সিপিএম নেতা
উচ্চবর্ণের গরীব হিন্দুদের জন্য সংরক্ষণ মোদীর, দেশ জুড়ে বিতর্ক
ভোরবেলায় শবরীমালা মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস সৃষ্টি ‘মা দুর্গার’
দেশপ্রেম বাড়াতে স্কুলের রোল কলে এবার ‘জয় হিন্দ’ ও ‘জয় ভারত’
ফের গরু চোর সন্দেহে খুন, এবার ‘গোরক্ষকের’ নাম মুসলিম মিঁয়া
তবে, সিবিআইয়ের ডাইরেক্টর পদে ফিরে এলেও সংস্থার নীতি নির্ধারণে বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একা নিতে পারবেন না অলোক বর্মা। সিবিআই ডাইরেক্টর নিয়োগ বা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিটি। এই কমিটিতে থাকেন বিরোধী দলনেতাও। সাত দিনের মধ্যে এই কমিটিকে বসে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ আদালতের। অলোক বর্মার অবসরের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তারপর কী পদক্ষেপ হবে, তা ঠিক করবে ওই কমিটি।
সিবিআই ঝামেলার মাঝেই ২৩শে অক্টোবর মধ্যরাতের পর হঠাৎ করে তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র। তাঁর অপসারণ বেআইনি, সিবিআই- এর মত সংস্থার স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, এই মর্মে আদালতে আপিল করেছিলেন অলোক বর্মা।
শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রকে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ঠিক কী পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের প্রধানকে অপসারণ করা হয়, শুনানি চলাকালীন এই প্রশ্ন করা হয় সরকারপক্ষকে। সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল সওয়াল করে বলেন, সিবিআইয়ের অভ্যন্তরে একটি বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যা বরদাস্ত করা সম্ভব ছিল না। সিভিসি-র সুপারিশ মেনেই অপসারণ করা হয় ভার্মাকে। যদিও, কেন্দ্রের সেই যুক্তি খারিজ হয়ে যায় আদালতে।
আরও পড়ুনঃ
বউ অদল বদল, বিকৃত যৌনাচারে ধর্ষণের অভিযোগ গৃহবধূর
EXCLUSIVE: সংখ্যালঘুদের ধর্মে সুড়সুড়ি দিয়ে প্রকাশ্যে ভারতের টাকার কালোবাজারি
EXCLUSIVE: নতুন বছরে সুখবর, রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাচ্ছেন বকেয়া ডিএ
বিজেপি না তৃণমূল, পাহাড়ে মোর্চার জোট নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে
প্রধান বিচাররপতির ডিভিশন বেঞ্চে এতদিন ধরে এই মামলার শুনানি চলছিল। তবে, মঙ্গলবার ছুটিতে ছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈই। তাঁর পরিবর্তে রায়ের কপি পড়ে শোনান বিচারপতি সঞ্জয় কিষণ কল। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এস কে কল ও কে এম জোসেফের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার রায় দিয়েছেন।
আদালতের এই রায়কে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি এই রায়ের পর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। যদিও বিজেপির তরফ থেকে এটাকে কেন্দ্রের হার মানতে রাজি নন নেতারা। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে এটা যে বিজেপির পক্ষে বড় ধাক্কা তা বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
]]>