সবাইকে কিছুটা চমকে দিয়েই, হঠাৎই নবান্নে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বুধবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে; বৈঠকের কথা ছিল তাঁদের। তবে কি ফের তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন; কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী? রাজনৈতিক মহলে তা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
আরও পড়ুনঃ “সামাজিক শিক্ষাগুরু বলেই মমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে”, ঘোষণা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর
২০১৮ সাল থেকেই, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়-কে নিয়ে; সরগরম বাংলার রাজ্য রাজনীতি। ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে শোভন এবং রত্নার দ্বন্দ্বও; প্রকাশ্যে আসে ওইসময়ই। সূত্রের খবর, সেই সময় শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিজের কাজ নিয়ে; সতর্কও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা-শোভন সম্পর্কের অবনতির মাঝেই, কলকাতার মেয়রের পদ ও তারপর রাজ্যের মন্ত্রিত্ব পদ থেকে; ইস্তফা দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ “গরু ছাগলে খেয়েছে ২২ লাখ টাকার গাছ”, তৃণমূল পঞ্চায়েতের দাবি শুনে হাসছে জনগণ
২০১৯ সালে ভাইফোঁটার দিন, আচমকাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে; গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। তা নিয়ে সেই সময় জোর চর্চা শুরু হয়; দুজনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনাও মাথাচাড়া দেয়। তবে সেসব জল্পনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে; রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন-বৈশাখী। যদিও গেরুয়া শিবিরে বেশিদিন মন টেকেনি তাঁদের; শুরু থেকেই গেরুয়া শিবিরের নেতাদের সঙ্গে ঝামেলা মতান্তর লেগেই ছিল। এরপরে বিজেপি ছাড়েন দুজনেই।
বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগাযোগই নেই; কোন দলেই নেই তাঁরা। এদিন নবান্ন থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর শোভন বলেন; “২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর আমি এখান থেকে চলে এসেছিলাম কিন্তু; এই নয় যে দিদির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি। আমাদের মধ্যে যে ভালোবাসা-আবেগ রয়েছে; সেই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছি। মমতাদির ইচ্ছে, চিন্তা-ভাবনা বাস্তবায়িত করাই; আমার কর্তব্য। মমতাদির কাছে আসব, একটু চা খাব; তাঁর নির্দেশ পালন করব। এটাই তো স্বাভাবিক”।
]]>শুধু মন্ত্রীত্ব নয়, কলকাতার মেয়র পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় শোভন চাটার্জীকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পদত্যাগ করতে হয় তাঁকে। শেষ হয় কয়েক দশকের দিদি-ভাইয়ের সম্পর্ক।
ব্যক্তিগত জীবনে তোলপাড় চলেছে। স্বাভাবিক কারণেই মানসিকভাবে প্রবল চাপের মুখে ছিলেন একটা সময়। এরকমই কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন দমকলমন্ত্রী ও আবাসন মন্ত্রী শোভন চ্যাটার্জী। যদিও সবটাই হয় ‘দিদির’ নির্দেশেই। কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল; শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এর ঘটনা।
দীর্ঘদিন ধরেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চ্যাটার্জী। বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে স্ত্রী রত্নার সঙ্গে চরম বিরোধ চলছে তাঁর।
মিল্লি আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময়ে কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন; ওয়েবকুটার সদস্য থাকলেও ২০১৪-তে তিনি যোগ দেন; তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপায়। সেখানে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তিও ছিল অনেক বেশি।
ওয়েবকুপায় অবস্থানের জেরে; তৃণমূলের পদাধিকারী মহলে তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে। যোগাযোগ গড়ে ওঠে মেয়র শোভন সহ একাধিক পদস্থ আমলা এবং মন্ত্রীর সঙ্গে।
এরপরেই মমতার নির্দেশে ভেঙে দেওয়া হয়; তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েরকুপার রাজ্য কমিটি। বাদ দেওয়া হয় তাঁর ঘনিষ্ঠ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠের এই পদ থেকে অপসারণ; খুব একটা ভাল ভাবে নেননি শোভন। এরপর মেয়র ও মন্ত্রিত্ব পদ থেকে শোভনের পদত্যাগ। আর সেই থেকেই বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা।
শোভন এবং বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন; বলে বিজেপিও দাবি করে লোকসভা ভোটের আগে। তবে এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব; কোনও রকম মন্তব্য করেনি। ভোটের আগেই দিল্লিতে গিয়ে দলের সদর দফতর থেকে; বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেবেন বলে জল্পনাও তৈরি হয়। কিন্তু বৈশাখী নিজে সে সব জল্পনা নস্যাৎ করে দেন।
লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর ফের সেই শোভনকেই আবার; দলের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিতে চান মমতা। তবে শর্ত মেনে বান্ধবী বৈশাখীকে ছেড়ে; ফের তৃণমূলে যে শোভন ফিরবেন না; সেটা একেবারেই পরিষ্কার।
]]>