গত বুধবারই নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় বিপুল জনসমাগম প্রত্যক্ষ করে বীরভূম জেলা। তারপরেই উজ্জীবিত হয় তৃণমূলের বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। বীরভূমে মোদীর জনসভার পরেই তৃণমূল ছাড়লেন এত সংখ্যক সমর্থক। বহুদিন ধরেই দলে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন তারা। সেই সঙ্গে দলের কিছু নেতা দলের মাথায় উঠে দুর্নীতিতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। প্রকৃত পরিবর্তন তৃণমূল করতে পারেনি, বরং অনুব্রত জমানায় বেড়েছে লাগামছাড়া সন্ত্রাস, এমনই বিষ্ফোরক অভিযোগ করেছেন তারা।
আরও পড়ুনঃ পাঁচ বছরে একটাও রাম মন্দির করতে পারল না বিজেপি, রানীগঞ্জে বললেন মমতা
এদিকে নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় অংশগ্রহণের জন্য বীরভূমের নানুরে এক বিজেপি সমর্থকের পোল্ট্রি ফার্ম আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফার্মের প্রায় আড়াই হাজার মুরগী পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ প্রচারে বেড়িয়ে দুষ্কৃতীর ভোজালি হামলার মুখে বিজেপি প্রার্থী, কর্মীর গলায় কোপ
নানুরের বাসিন্দা সপ্তর্ষি গুহ বুধবার নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় অংশ নিয়ে গিয়েছিলেন৷ তিনি পেশায় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী। মাঝ রাতে হঠাৎই তিনি লক্ষ্য করেন, বিধ্বংসী আগুন লেগেছে তার পোল্ট্রি ফার্মে। কিন্তু ততক্ষনে পুড়ে ছাই তার ফার্মের আড়াই হাজার মুরগী। এই ঘটনায় বিজেপির তরফে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও এখনো কেউ এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি। বিজেপির দাবি, নরেন্দ্র মোদীর সভার সাফল্যে ভীত হয়ে হিংসার পথ অবলম্বন করছে তৃণমূল।
আরও পড়ুনঃ টার্গেট মুর্শিদাবাদ, অধীরকে হারাতে বহরমপুরে ইমামদের নিয়ে সভা শুভেন্দুর
তবে ভোটের মধ্যেই এইভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান যে অনুব্রতর জেলায় গেরুয়া শিবিরের মনোবল বাড়াবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই ঘটনাকে খুবই ছোটখাট ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন খোদ তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। জেলার বোলপুর ও বীরভূম লোকসভা আসনে যে এবার বিজেপির সঙ্গে জোর টক্কর, তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
]]>তবে বীরভূম জেলায় আরো কিছু বাড়তি সতর্কতা তা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার কারণ ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল যে ভাবে হুমকি দিয়ে রেখেছে যা ভোটের দিন অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলতে পারে সে কারণেই নির্বাচন কমিশন পাখির চোখ করে নিয়েছে এখন বীরভূম জেলাকে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুনঃ সাত দিন পরেও খোঁজ নেই ভোটের নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের, রহস্য আরও জটিল
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বীরভূম জেলাকে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল কখনো পাচন তো কখনও নকুলদানা, বিভিন্নভাবে দলের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করেছেন। এমন কি ভোটের দিন সকালে মকপোলের সময় ৫০০ টি করে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু কমিশন তার নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে মুর্শিদাবাদের থেকেও আরও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে চলেছে বীরভূম জেলায়।
তবে চতুর্থ দফায় কেবলমাত্র বীরভূম জেলাই নেই, আছে আসানসোল, আছে বহরমপুর সঙ্গে আছে নদিয়া। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ দফা থেকেই কমিশনের কাছে রীতিমতো এক বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করানো। ইতিমধ্যেই রাজ্যে নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক জানিয়েছেন, আসানসোলে ১০০ শতাংশ বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এবার জানালেন বীরভূমেও ১০০ শতাংশ বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
অর্ণব উধাও রহস্যে আরও পড়ুনঃ ভোটের দায়িত্বে থাকা অর্ণব রায়ের উধাও হওয়া ফিরিয়ে এনেছে রাজকুমার রায়ের স্মৃতি
পাশাপাশি রাজ্যে নিযুক্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানিয়েছেন চতুর্থ দফা নির্বাচনে প্রায় ১০০% বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিরোধীদের অভিযোগ এর পরিপ্রেক্ষিতেই কেবলমাত্র যে এই সিদ্ধান্ত, তা নয় বলেই নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে। সূত্রের খবর, বিগত দিনের নির্বাচনগুলিতে চতুর্থ দফার এই জেলাগুলিতে যে সন্ত্রাস হয়েছিল তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য আছে কমিশনের কাছে।
সেই কারণে নির্বাচন কমিশন দুর্গা পুজোর আগে থেকেই লোকসভা নির্বাচনের কর্মকাণ্ড এবং প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। যার ফলস্বরূপ তৃতীয় দফা নির্বাচন মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। তবে তৃতীয় ধাপ পেরিয়ে গেলেও এখন নির্বাচন কমিশনের কপালে ভাঁজ পড়েছে বাকি দফা গুলির নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করানো নিয়ে।
আরও পড়ুনঃ ক্ষমা চেয়েও আবার এক ভুল, রাহুলকে আদালত অবমাননার নোটিশ ধরাল সুপ্রিম কোর্ট
যার মধ্যে বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, আসানসোল এবং উত্তর কলকাতা। এই জেলাগুলোয় ভোট করানো যে রীতিমত কমিশনের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে তা এককথায় স্বীকার করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার কারণ অতীতের যে রেকর্ড সেই রেকর্ড কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে একটা বড় ছাপ ফেলতে পারে তা বুঝতে পেরেই আগেভাগে সবদিক থেকে ঘর গোছাতে এখন তৎপর হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুনঃ ভোটের মধ্যেই মমতার সিনেমা আটকে দিল নির্বাচন কমিশন
রাজ্যের প্রথম তিনটি দফা ভোটের পর আর কোনো খামতি রাখতে চাইছে না কমিশন পরের দফাগুলি থেকে। এখন দেখার বিষয় মুর্শিদাবাদের পর বাকি দফাগুলোতে কমিশন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করাতে সক্ষম হয় নাকি পাচন আর নকুলদানা খেয়েই ক্ষান্ত থাকতে হয় কমিশনকে। তবে অনুব্রতকে সামলাতে যে কমিশন বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
]]>